সহজ উপায়ে ওজন কমানোর কাঁচকলা ডায়েট সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

   

সহজ উপায়ে ওজন কমানোর কাঁচকলা ডায়েট সম্পর্কে হয়তো অনেকেই বিস্তারিত জানতে আগ্রহী হয়ে থাকবেন। এটি এমন একটি ডায়েট যার মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন কমানো যায়। সাথে রয়েছে কিটো ডায়েটে কাঁচকলা খাওয়া যাবে কিনা সে বিষয়ে আলোচনা।

ইমেজ

পোস্ট সূচীপত্রঃআজকের এই পোস্টে অতিরিক্ত শরীরচর্চা ছাড়া সহজ উপায়ে ওজন কমানোর কাঁচকলা ডায়েট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আজকের পোস্টটি পড়ে এই ডায়েট সম্পর্কে আপনারা অনেক কিছু জানতে পারবেন।

    কাঁচকলা কি

    মূলতঃ কাঁচকলা একটি সবজি। সারা বছর কাঁচকলা সব জায়গাতেই পাওয়া যায়, তাই এটিকে একটি সহজলভ্য সবজি বলা যায়। কাঁচকলা অন্যান্য কলা থেকে সবচেয়ে আলাদা। কারণ এটি কখনো পাকে না। কাঁচকলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান। এতে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ লবণ, ম্যাঙ্গানিজ ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়া্ম, ফাইবার এবং বিভিন্ন ধরনের উপকারী এন্টি অক্সিডেন্ট। কাঁচকলার বৈজ্ঞানিক নাম "মুসা প্যারাডিসিকা।"

    ওজন কমানোর কাঁচকলা ডায়েট কি

    জাপানিরা কাঁচকলা দিয়ে সহজ উপায়ে ওজন কমানোর অসাধারণ একটি ডায়েট উদ্ভাবন করেছেন। আর এই ডায়েটের নাম "কাঁচকলা ডায়েট।" আমরা অনেকেই বিভিন্ন কারণে ডায়েট করতে চাই। কিন্তু অনেক সময় করা হয়ে ওঠে না বিভিন্ন সমস্যার কারণে। তাই আমাদের এমন একটি সহজ ডায়েট করা উচিত যাতে খুব বেশি সমস্যা সৃষ্টি না হয় এবং আমরা নিয়মিত সেই ডায়েট চালিয়ে যেতে পারি। আর এটি সহজ ডায়েটের একটি অসাধারণ উদাহরণ।

    কাঁচকলা ডায়েট কিভাবে করতে হয়

    ২০০৮ সালে জাপানে সহজ উপায়ে ওজন কমানোর কাঁচকলা ডায়েটের জনপ্রিয়তা বাড়ে। এমনকি এই সময়ে দেশে কলার সংকটের ফলে জাপানের সরকার বিদেশ থেকে কলা আমদানি করেন। তাই বুঝতেই পারছেন এই  ডায়েট কতটা কার্যকরী। তাই আপনিও চাইলে এই ডায়েট করতে পারেন নিশ্চিন্তে। তাছাড়া এই ডায়েটে একটি বড় সুবিধা হল আমিষ ভোজি এবং নিরামিষ ভোজি উভয়ের জন্যই উপযোগী। 

    চলুন জেনে নেওয়া যাক জাপানিজদের ওজন কমানোর কাঁচকলা ডায়েটের বিস্তারিত ঃ

    সকালে ঘুম থেকে উঠার পর এক গ্লাস পরিষ্কার পানি খেয়ে দিন শুরু করতে হবে। তারপর এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে সামান্য লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে পান করতে হবে। দাঁত ব্রাশ করার পর নাস্তার জন্য একটি কাঁচকলা খেতে হবে। সকালে একটি কাঁচকলা খেলেই হবে। কাঁচকলা অবশ্যই ভালোমতো চিবিয়ে খেতে হবে না হলে বদহজমের সম্ভাবনা হতে পারে। কাঁচকলা সিদ্ধ বা রান্না করে খাওয়া যাবেনা, কাঁচা খেতে হবে।

    আরো পড়ুনঃ বিচি কলা খাওয়ার ২৪ টি কারযকরি উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

    কাঁচকলা ডায়েটে দুপুরের খাবার নিয়ম মাফিক আপনি যা খান তাই খেতে পারেন। এই সময় কাঁচকলা খেতে হবে না। শুধু তেলে ভাজা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সকালের নাস্তার পর এক থেকে দেড় ঘন্টার মধ্যে দুপুরের খাবার খেয়ে নিবেন।

    বিকেলের নাস্তায় হালকা কিছু খাওয়া ভালো। এই খাবারটি হতে পারে ছোলা সেদ্ধ, বাড়িতে তৈরি পপকর্ন, এক বাটি ছানা ইত্যাদি। তিন থেকে চারটার মধ্যে বিকেলে নাস্তা করে নেওয়া ভালো। এই ডায়েটে একেবারে ভর পেট খেয়ে বা পেট খালি রাখলে উপকার পাওয়া যাবে না। সবচেয়ে ভালো হয় বারবার একটু একটু করে খেলে।

    ইমেজ

    বিকেলের নাস্তার অন্তত চার ঘন্টা পরে রাতের খাবার খেতে হবে। তবে আটটার মধ্যে রাতের খাবার শেষ করলে ভালো হয়। স্বাভাবিকভাবেই রাতের খাবার খাওয়ার পর ক্ষুধা লাগতে পারে। সেজন্য কিছু মৌসুমী ফল আপনার ডায়েটে রাখতে পারন। আবার এটি যেন আপনার অভ্যাস হয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

    জাপানিজদের এই ডায়েটের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো শরীর চর্চা না করে পানি বেশি করে পান করলেই হবে। স্বাভাবিক তাপমাত্রা পানি দিনে ৪ লিটার খেতে হবে। তবে যদি আপনার নিয়মিত শরীর চর্চা করার অভ্যাস থাকে তাহলে সেটা করলেও সমস্যা হবে না।

    জাপানিজদের কাঁচকলা ডায়েট একটি খুবই সহজ এবং সাধারন একটি ডায়েট। আপনার বাড়তি ওজন কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য এবং শারীরিক অবস্থা উন্নতি করার জন্য কোনরকম ঝামেলা ছাড়াই আপনি এই ডায়েট করতে পারেন খুব সহজেই। তাছাড়া এই ডায়েটের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল কাঁচকলা সহজেই সব জায়গায় সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়।

    কিটো ডায়েটে কাঁচকলা খাওয়া যাবে কি

    কিটো ডায়েটে কাঁচকলা খাওয়া খাওয়ার বিষয়ে অনেকেই জানতে চান। কারণ কাঁচ কলায় কার্বোহাইড্রেট রয়েছে কমপ্লেক্স স্টার্চ হিসেবে। আর কিটো ডায়েট বলতে আমরা বুঝি সাধারণত যে ডায়েটে কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ খুবই কম থাকে এবং উচ্চ যুক্ত চর্বিযুক্ত খাবার বেশি থাকে। এছাড়া এই ডায়েটে আমিষের পরিমাণ সাধারণ ডায়েটের পরিমাণ এর মত একই থাকবে।

    বর্তমানে কম সময়ে খুব দ্রুত ওজন কমানোর জন্য এই কিটো ডায়েট জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তাই এই ডায়েট কে অনেকে "মিলিটারি ডায়েট" বলে থাকেন। কিটো ডায়েট করার অনেক গুলো পদ্ধতি থাকলেও সাধারণত কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি যেমন- খেলোয়াড়, বডিবিল্ডার, তারকাদের ছাড়া সাধারণ মানুষকে "স্ট্যান্ডার্ড কিটোজেনিক ডায়েট" দেওয়া হয়।

    কিটো ডায়েটে থাকা অবস্থায় সাধারণত সপ্তাহে দুদিন মুরগির মাংস, চর্বিহীন গরুর মাংস, মাছ, ডিম, মাখন, পনির, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি রাখার সুপারিশ করা হয়। এছাড়া এ ডায়েট চলাকালীন মিষ্টি জাতীয় কোন খাবার, চিনি, ফলের জুস, ডাল ও ডাল জাতীয় শস্য, মাটির নিচের খাবার যেমন- আলু ,মিষ্টি আলু খাওয়া যাবেনা খাওয়া যাবেনা। এছাড়া ভাত , আটা , ওটস ,নুডুলস ইত্যাদিও খাওয়া যাবেনা।

    এই ডায়েটে থাকা অবস্থায় সাধারণত এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল , কোকোনাট অয়েল , সরিষার তেল ইত্যাদি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। শুধু সয়াবিন তেল ডায়েটে রাখা যাবে না। যেহেতু কিটো ডায়েটে কার্বোহাইডেট এর পরিমাণ খুবই কম থাকে অর্থাৎ কিটো ডায়েটের সারাদিনে কার্বোহাইডেটের পরিমাণ থাকে পাঁচ থেকে দশভাগের মধ্যে তাই এই সংখ্যার কথা মাথায় রেখে খুবই পরিমাণ মতো কাঁচকলা খাওয়া যেতে পারে।

    কাঁচ কলার যত গুনাগুন আছে জেনে নিন

    ওজন কমানোর জন্য কাঁচকলা ডায়েট ধীরে ধীরে সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এর কারণ কাঁচকলা বিভিন্ন ধরনের গুণাগুণ এর জন্য বিখ্যাত একটি সবজি। কারণ কাঁচ কলায় বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। তাই আমাদের প্রতিদিনের ডায়েটে কাঁচকলা রাখলে বেশ উপকার পাওয়া যায়। কাঁচকলা থেকে আমরা সর্বোচ্চ ১০৫ গ্রাম পর্যন্ত ক্যালোরি পেতে পারি। সপ্তাহে অন্তত ২-৩ দিন খেলেও এর উপকারিতা পাওয়া যাবে।

    পেটের অসুখ থেকে মুক্তি

    আমরা প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের পেটের সমস্যায় ভুগে থাকি। এর মধ্যে প্রথম হলো ডায়রিয়া। আর এরকম সমস্যা হলেই ডাক্তাররা কাঁচকলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে কাঁচকলা ভর্তা বা কাঁচকলা দিয়ে যেকোনো তরকারি খাওয়া পেটের জন্য অনেক উপকারী। কারণ কাঁচকলা কে ন্যাচারাল ব্লাইন্ডার বলা হয় যা ডায়রিয়া হলে পায়খানাকে খুব তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হতে সহায়তা করে থাকে। এছাড়া কাঁচকলায়  থাকা এনজাইম পেটের যেকোনো অসুখ থেকে দূরে থাকতে সহায়তা করে।

    এছাড়া ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে পায়খানার সাথে অতিরিক্ত লবণ এবং পানি বেরিয়ে যায়। কাঁচকলায় থাকা অধিক মাত্রার রেজিস্ট্যান্ট Starch শরীর থেকে লবণ এবং পানি যাওয়া প্রতিরোধ করে ফলে পায়খানা স্বাভাবিক হয়। তাছাড়া এই সময় শরীরের পটাশিয়ামের ঘাটতি দূর করতে সাহায্য করে কাঁচকলা। শরীরে রক্তে থাকা ক্ষতিকারক উপাদান দূর করতে পটাশিয়াম কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

    নিয়মিত কাঁচকলা খেলে শরীরের ভিতর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয় এবং ইনটেস্টাইনে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পেতে সহায়তা করে। এর ফলে আমাদের কর্মক্ষমতা ও বৃদ্ধি পায়। আবার যারা প্রায় এসিডের সমস্যায় ভুগেন তারাও নিয়ম করে কাজ কলা খেয়ে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন সহজে।

    আরো পড়ুনঃ আলুর প্রয়োজনিয় ১৬ উপকারিতা ও ০৭ অপকারিতা-আলু খাওয়ার নিয়ম

    ওজন নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকা 

    নিয়মিত কাঁচকলা খেলে খুব সহজেই ওজন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। কারণ কাঁচ কলায় যে পরিমাণ ক্যালরি থাকে তা খুবই কম যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। উপরে এই ডায়েট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এছাড়া আমাদের দেহের হজম শক্তি বৃদ্ধি ও ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করতে কাঁচকলা খুবই উপকারী। কারণ কাঁচকলায় থাকা ফাইবার আমাদের অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকতে সাহায্য করে। ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার ক্রেবিং থেকে আমাদের দূরে রাখে।

    কাঁচকলা খালি পেটে খাওয়া সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। তাই ওজন কমানোর জন্য নিয়মিত কাঁচকলা খালি পেটে খেতে পারেন। কারণ কাঁচকলা আঁশযুক্ত হওয়ায় এটি শরীরে অতিরিক্ত মেদ ঝরাতেও সহায়তা করে।

    ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে

    সাধারণত রক্তে সুগার বেড়ে গেলে ডায়াবেটিসের সমস্যা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কাঁচকলা হতে পারে একটি উপকারী সবজি। কাঁচ কলায় যে স্টার্স এবং ফাইবার রয়েছে তা শরীরের ভেতরে গিয়ে রক্তে উপস্থিত চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তাই যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তারা নিয়ম করে কাঁচকলা আপনার ডায়েটে রাখলে উপকার মিলবে।

    বিশেষ করে যারা টাইপ টু ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের জন্য কাঁচকলা অনেক উপকারী। কারণ টাইপ টু ডায়াবেটিসে চিকিৎসকরা সাধারণত এমন সব খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন যা শরীরের ভিতরে গিয়ে সহজে ভেঙে না যায় এবং শর্করায় পরিণত না হতে পারে। ফলে শরীরে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়তে পারে না এবং ইনসুলিনও সঠিকভাবে কাজ করতে পারে। আর এরকম একটি খাবার হল কাঁচকলা।

    এছাড়া চিকিৎসকদের মতে কাঁচকলা থাকে জটিল শর্করা যা শরীরে ভিতরে গিয়ে সরল  শর্করা ভাঙতে বেশি সময় নেয় এবং রক্তে শর্করাও মিশে খুব ধীরে ধীরে। ফলে হজম প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে হয় এবং রক্তে শর্করার শোষণের পরিমাণও খুব ধীর পরিমাণে হয়। এজন্য কাঁচকলা হতে পারে ডায়াবেটিস রোগীদের একটি আদর্শ খাদ্য।

    তাই রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত কাঁচকলা খেতে পারেন।

    পাকা কলা না কাঁচকলা খাওয়া ভালো

    আমরা সাধারণত হলুদ কলা বা পাকা কলা খেতে বেশি পছন্দ করি। কারণ পাকা কলা মিষ্টি হয়ে থাকে। অথচ পাকা কলার চেয়ে কাঁচ কলায় পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। পাকা কলায় সাধারণত রেজিস্ট্যান্ট Starch চিনিতে পরিণত হয়ে থাকে। এজন্য পাকা কলা খেলে সহজেই রক্তে সুগারে মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু কাঁচ কলায় যে পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা শরীরে রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। তাই আমাদের খাদ্য তালিকায় কাঁচকলা রাখা ভালো।

    হার্টের সমস্যা প্রতিরোধে কাজ কলা

    কাঁচকলা এমন একটি সবজি যা শুধু পেট সুস্থ রাখতেই সাহায্য করে না হার্ট সুস্থ রাখতে এর ভূমিকা অনেক। কারণ কাঁচকলার ভিতরে থাকা বিভিন্ন উপাদান গুলো হার্টের জন্য খুব উপকারী। কারন কাঁচকলায় থাকা পুষ্টি উপাদান রক্তে বাড়তে থাকা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এছাড়া কাঁচ কলায় সে সেইথাকা উপাদান রক্তনালিতে নোংরা জমতে বাধা দেয় ফলে হার্ট থাকে ভালো। তাই আপনার ডায়েটে নিশ্চিন্তে রাখতে পারেন এই উপকারী সবজিটি।

    গ্যাস্ট্র ইন টেস্টাইনাল রোগ প্রতিরোধে কাঁচকলার ভূমিকা

    আমরা জানি গ্যাস্ট্রোইন টেস্টাইনাল একটি পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্তের সাথে জড়িত একটি সংক্রামক প্রদাহ। এটি হলে সাধারণত ডায়রিয়া, বমি ও ব্যথা হতে পারে। এছাড়াও মাঝে মাঝে জ্বর, শক্তিহীনতা ও শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও নিয়মিত এই রোগ হলে কোলন ক্যান্সার, কোষ্ঠকাঠিন্য, অশ্ব রোগ ইত্যাদি মত রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। কাঁচ কলায় থাকা বিভিন্ন ধরনের উপকারী পুষ্টি উপাদান পেটের এসব সমস্যা দূর করতে অনেক উপকারী।

    ত্বকের উপর এর প্রভাব

    আমরা অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের ত্বকের সমস্যা সম্মুখীন হই। আর এইসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কাঁচকলা আপনার ডায়েটে নিয়মিত রাখতে পারেন। যেমন ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কাঁচকলা খেতে পারেন। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মুখের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে থাকে। তাই ত্বক ভালো রাখতে আপনার খাদ্য তালিকায় কাঁচকলা রাখতে পারেন নিশ্চিন্তে।

    চুলের যত্নে এর ভূমিকা

    নিয়মিত কাঁচকলা খেলে শুধু ত্বকের উপর উপরে এর প্রভাব পড়ে না চুলেরও খুব উপকার হয়। কাঁচকলায় থাকা কার্বোহাইড্রেট, পটাশিয়াম ও ভিটামিন চুলের পুষ্টি উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই পুষ্টি উপাদান চুলকে নরম ও ঝলমলে রাখতে সহায়তা করে এবং চুলের ভেঙ্গে যাওয়া প্রতিরোধ করে থাকে।

    শিশুদের জন্য কাঁচকলা কতটা উপকারি

    আমরা সবসময়ই চাই শিশুদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে। এজন্য আমরা চেষ্টা করি শিশুকে এমন খাবার দিতে যাতে শিশুর শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহের পাশাপাশি শিশুর হজমেও সহায়তা করে এবং ইমিউনিটি সিস্টেম বৃদ্ধি পায়। এরকম একটি খাবারের নাম হল কাঁচকলা। শিশুর সাত মাস বয়স থেকে তার খাবারের তালিকায় আমরা কাঁচকলা রাখতে পারি।

    আরো পড়ুনঃ গর্ভবতী মহিলার গর্ভাবস্থায় বমি হলে কার্যকরী কিছু করণীয় কাজ

    কাঁচকলায় থাকা বিভিন্ন উপকারী পুষ্টি উপাদান যেমন- পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস ইত্যাদি শিশুর শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির সরবরাহ করে থাকে। এছাড়া কাচ কলায় থাকা ফাইভার শিশুর হজমে সহায়তা করে। তাছাড়া কাঁচকলায় থাকা আরো ভিটামিন যেমন বি৬, কার্বোহাইড্রেট এবং বিভিন্ন ধরনের খনিজ শিশুর ইমিউনিটি সিস্টেম বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

    কাঁচ কলার মজাদার স্বাস্থ্যকর কাবাব রেসিপি

    কাঁচকলা দিয়ে সহজ উপায়ে ওজন কমানোর পাশাপাশি ছোট বড় সবার জন্য মজাদার বিভিন্ন ধরনের খাবার রান্না করা যায়। এর মধ্যে রয়েছে কাঁচকলা ভর্তা, কাঁচ কলার কাটলেট, কাঁচকলা বড়া, কাঁচ কলার ভাজি,কাঁচকলার কাবাব ইত্যাদি। এসব খাবার খেতে যেমন সুস্বাদু তেমন স্বাস্থ্যকর। নিচে কাঁচকলা দিয়ে মজাদার একটি কাবাব রেসিপি দেয়া হলোঃ

    কাঁচকলা দিয়ে কাবাব বানানোর জন্য আমাদের লাগবে-

    • চারটি বড় কাঁচকলা
    • একটি ডিম
    • ২ টেবিল চামচ পেঁয়াজ বেরেস্তা
    • ২-৩ টি কাঁচা মরিচ কুচি
    • ২ টেবিল চামচ চালের গুড়া
    •  দুই চামচ বেসন
    • হাফ চা চামচ হলুদ গুঁড়া এবং জিরা গুড়া 
    • পরিমাণ মতো লবণ

    প্রথমে কাঁচকলা চারটি ভালোভাবে সিদ্ধ করে নিতে হবে। সেদ্ধ করার পর ভালোভাবে ম্যাশ করে নিতে হবে। এটি আপনি পাটায় বেটে নিতে পারেন বা হাতে পিষে নিতে পারেন। ভালোভাবে ম্যাশ করে  নেওয়ার পর এতে দিতে হবে পেঁয়াজ বেরেস্তা, কাঁচামরিচ কুচি, পরিমাণ মত লবণ, হলুদ গুড়া, জিরা গুড়া, চালের গুড়া এবং বেসন।

    ইমেজ

    উপরের সবগুলো উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে নেওয়ার পর দিতে হবে একটি ডিম। ডিম দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নেওয়ার পর সামান্য হাতে তেল মেখে নিয়ে কাবাবের  আকারের মতো বানাতে হবে। ব্যাস তৈরি হয়ে গেল কাঁচকলার কাবাব। এরপর কাবাব গুলো ডুবা তেলে ভেজে নিলেই তৈরি আমাদের কাঁচকলা দিয়ে মজাদার স্বাস্থ্যকর কাবাব।

    গর্ভাবস্থায় কাঁচকলা খাওয়ার উপকারিতা

    কাঁচকলা যেমন আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে তেমনি গর্ভাবস্থায় একজন মহিলার অনেক পুষ্টির যোগান দিয়ে থাকে। একজন গর্ভবতী মহিলার অনেক পুষ্টির প্রয়োজন হয়ে থাকে যা তার নিজের এবং বাচ্চার পরিপূর্ণ বিকাশে সহায়তায় বিশাল ভূমিকা পালন করে থাকে। আর কাঁচকলা হল বিভিন্ন পুষ্টির ভান্ডার। একজন গর্ভবতী মহিলা ডায়েটে প্রতিদিন কাজ খোলা রাখলে বিভিন্নভাবে উপকৃত হতে পারেন। 

    কাঁচকলায় রয়েছে প্রচুর ক্যালরি। এই কারণেকাঁচকলা গর্ভবতী মহিলাদের শক্তির উৎস হতে পারে। অনেকেই গর্ভাবস্থায় সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠার পর মর্নিং সিকনেছে ভুগেন। কাঁচকলা এই সমস্যার সমাধান দিতে পারে সহজেই। প্রতিদিন কাজ কলা খেলে এই মর্নিং সিকনেস দূর হয়।

    আরো পড়ুনঃ ঢেঁকি ছাটা চালের যত পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানুন

    এছাড়া গর্ভাবস্থায় অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগে থাকেন যা তার এবং বাচ্চার জন্য অনেক ক্ষতিকর।  কাঁচকলায় থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। আবার গর্ভাবস্থায় হার্টের সমস্যায় ভুগলে কাঁচকলা হতে পারে সহজ সমাধান। কারণ কাঁচকলা তে থাকা পটাশিয়াম হার্ট সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।তাই আপনার গর্ভাবস্থায় আপনি কাঁচকলা  রাখতে পারেন নিশ্চিন্তে।

    আবার অনেক মহিলা এই সময় শরীরে সুগারের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগেন। কাঁচকলা একটি জটিল শর্করা হওয়ায় শরীরে গ্লুকোজ ধীরে ধীরে রক্তে মিশে যে কারণে রক্তে শর্করার পরিমাণ  নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরে সঠিক পুষ্টির জোগাতে, বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এবং বাচ্চার সঠিক বিকাশে চিকিৎসকের পরামর্শ মত আপনি কাঁচকলা আপনার ডায়েটে রাখতে পারেন।

    কাঁচ কলার অপকারিতা আছে কি

    কাঁচকলা সহজ উপায় ওজন কমানোর একটি মহৌষধ হলেও বিশেষজ্ঞগণ কিছু কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে কাঁচকলা খেতে বারণ করেন। যাদের ডায়াবেটিসের পরিমাণ অনেক বেশি এবং এর জন্য ওষুধ নিতে হয় তাদেরকে কাঁচকলা না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাঁচকলা অনেকেরই মাঝে মাঝে এলার্জির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাদের কাঁচকলা এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। আবার যাদের শ্বাস জনিত সমস্যা আছে তাদেরকে কাঁচকলা খাওয়ার নিষেধ করা হয়। এছাড়া যারা কিডনি রোগে ভুগছেন তাদেরও কাঁচকলা খাওয়ার নিষেধ রয়েছে।

    পরিশেষে

    সহজ উপায়ে ওজন কমানোর এই কাঁচকলা ডায়েট ডায়েট ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা লাভ করছে। কারণ কাঁচকলা আমাদের সবার পরিচিত একটি সবজি। সারা বছরই এই সবজি পাওয়া যায় সহজে। এছাড়া কাঁচকলা পুষ্টি গুনে সমৃদ্ধ একটি সবজি।কাঁচকলা দিয়ে মজার মজার রান্না করে ডায়েটে রাখা যায় সহজে।

    তাই বাড়তি ওজনে যারা ভুগছেন তারা সহজ উপায়ে সম্পূর্ণ পুষ্টি শরীরে নিয়ে ডায়েট করতে চাইলে আপনার ডায়েটে কাঁচকলা রাখতে পারেন নিশ্চিন্তে। এই সবজিটি আপনাকে ওজন কমানোর সাথে সাথে শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করবে। ওজন কমবে সাথে শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে, এর চেয়ে ভালো আর কি হতে পারে।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    passiondrivefiona র নীতিমালা মেনে comment করুন। প্রতিটি comment রিভিউ করা হয়;

    comment url