পায়ের নখের ফাঙ্গাস দূর করার ০৬ টি ঘরোয়া উপায় জানুন
পায়ের নখে ফাঙ্গাস আক্রমণ হলে তা সহজেই কিছু ঘরোয়া উপাদানের ব্যবহারে মাধ্যমে দূর করা যায়। কিন্তু তার আগে আমাদের জানতে হবে আসলেই পায়ের নখে ফাঙ্গাস আক্রমণ হয়েছে কিনা। বেশ কিছু লক্ষণ দেখে আমরা বুঝতে পারবো পায়ের নখের ফাঙ্গাসে আক্রমণ।
পোস্ট সূচীপত্রঃআমাদের হাত পায়ের নখ সাধারণত মসৃণ হয়ে থাকে এবং কিছুটা গোলাপি রঙের। কোন কারণে পায়ের নখে সমস্যা দেখা দিলে বিভিন্ন রকম পরিবর্তন হয়ে থাকে। আমাদের প্রথমে এই পরিবর্তনগুলো খেয়াল করতে হবে এবং সেভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
পায়ের নখের ছত্রাক বা ফাঙ্গাস কি
পায়ের নখের ফাঙ্গাস সাধারণত এক ধরনের ছত্রাক আক্রমণের কারণ, যা পায়ে সাধারণভাবে হতে দেখা যায়। হাত এবং পায়ে দুই জায়গাতেই এই ফাঙ্গাস আক্রমণ হতে পারে। তবে সাধারণত পায়ে এই ফাঙ্গাস বেশি হতে দেখা যায়। এই ফাঙ্গাসের কারণে পায়ের নখের ডগা সাদা বা হলুদ হতে দেখা যায় এবং তা এক পর্যায়ে পায়ের নখের মাঝামাঝি বা শেষ প্রান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে।
এই ফাঙ্গাসের আক্রমণের কারণে পায়ের নখের রং ফ্যাকাসে বা বিবর্ণ হয়ে যেতে পারে, ভেঙে যেতে পারে, কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যথা হতে পারে এবং রক্ত পড়তে পারে। সাধারণত পায়ের নখ ঠিকমতো পরিষ্কার না করা, পায়ের নখে দীর্ঘ সময়ের জন্য কাদা ধুলাবালি লেগে থাকা, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, জানা-অজানা যে কোনো আঘাতের কারণে এই পায়ের নখের ফাঙ্গাস হতে দেখা যায়।
পায়ের নখের ফাঙ্গাস দূর করার ঘরোয়া উপায়
পায়ের নখের ফাঙ্গাস কেন হয়
- বেশিরভাগ পায়ের নখের ফাঙ্গাস গ্রীষ্ম বা বর্ষাকালে হয়ে থাকে। কারণ এই মাস গুলতে আমাদের পা ভেজা বা আর্দ্রতা সব চেয়ে বেশি সময় ধরে থাকে।
- নখে বা এর আশেপাশের ত্বকে আঘাত লাগলে ফাঙ্গাস হতে দেখা দেয়।
- নখে বিভিন্ন রোগের আবাস হওয়ার ফলে নখে ফাঙ্গাস হতে পায়ে।
- একই মুজা অনেকদিন ধরে ব্যবহার করলে এই ফাঙ্গাস হতে পারে। কারণ অনেক দিন ধরে একই মুজা ব্যবহার করলে মুজায় থাকা ঘামের জিবাণু পায়ে সংক্রমন ঘটিয়ে ফাঙ্গাস তৈরি করে।
- বেশি চাপা জুতা পরিধানের মধ্যমে নখে ফাঙ্গাস দেখা দেয়। সাধারণত পায়ে বাতাসের জায়গা না থাকায় এরকম হয়ে থাকে।
- যদি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, তাহলে ফাঙ্গাসহ বিভিন্ন রোগের বাসা বাঁধতে পারে আপনার দেহে।
- আবার বয়সের কারণেও পায়ের নখের ফাঙ্গাস হতে দেখা যায়। সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিদের পায়ের নখ ভেঙ্গে গেলে ভাঙ্গা স্থান দিয়ে ছত্রাক প্রবেশ করতে পারে সহজে এবং এর ফলে ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ঘটে।
- যাদের হাত-পা বেশি ঘামে তাদের এই ঘাম থেকে ফাঙ্গাস সংক্রমণ করতে পারে সহজে।
- পায়ের নখে অনেকদিন যাবত ময়লা লেগে থাকলে এই ফাঙ্গাসের সংক্রমণ হতে পারে।
- অনেক সময় কোন কারণে পায়ে রক্ত সঞ্চালন পর্যাপ্ত পরিমাণে না হলে বা কম হওয়ার কারণে এই ফাঙ্গাস সংক্রমণ হতে দেখা যায়।
পায়ের নখের ফাঙ্গাসের লক্ষণ গুলো কি
পায়ের ফাঙ্গাস এড়াতে যা যা করবেন
- প্রতিবার গোসলের সময় পায়ের নখ ভালোভাবে পরিষ্কার করা যাতে সেখানে ময়লা এবং জীবাণু না থাকতে পারে।
- হাত এবং পায়ের নখ কাটার জন্য আমরা যে সরঞ্জাম ব্যবহার করি তা ব্যবহারের পর ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার রাখা।
- যাদের হাত পা ঘামার সমস্যা রয়েছে তাদের সম্ভব হলে কিছুক্ষণ পর পর টিস্যু বা পাতলা কাপড় দিয়ে সেই স্থান মুছে ফেলা।
- পুরনো জুতো মোজা ব্যবহারের আগে তা পরিষ্কার এবং শুকনো কিনা খেয়াল রাখা।
- নিয়মিতভাবে জুতা এবং মোজা পরিষ্কার রাখা
- কোনভাবে পায়ের নখে আঘাত লাগলে তা যথাসম্ভব ঢেকে মুজা এবং জুতা পরা
- পার্লারে গিয়ে মেনিকিউর এবং পেডিকিউর সেবা নেওয়ার আগে অবশ্যই দেখতে হবে সেগুলোর সরঞ্জাম ঠিকমতো পরিষ্কার আছে কিনা।
- আগে থেকেই পায়ের নখে সমস্যা থাকলে নেল কালার থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করা
- হাত পায়ের নখ কাটার সময় নখের আগা যেন সমান করা হয় সেদিকে ভালোভাবে খেয়াল রাখা
নখকুনি এবং ফাঙ্গাস আক্রমন কি এক
পায়ের নখের ছত্রাক আক্রমণের কারণে যে ফাঙ্গাস হয়ে থাকে এবং নখ কুনি সম্পূর্ণ আলাদা। পায়ের ফাঙ্গাস সাধারণত বিভিন্ন কারণে ছত্রাক আক্রমণের ফলে হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে পায়ের নখের ডগা হলুদ রঙের হয়ে থাকে এবং তা আস্তে আস্তে পুরো নখে ছড়িয়ে যেতে পারে।
পায়ের নখের কুনি সাধারণত বুড়ো আঙ্গুলে হয়ে থাকে। নখ কোন কারণে বাইরের দিকে বড় না হয়ে যদি ভিতরের দিকে বড় হয়ে দেবে যায় তাহলে সেটাকে আমরা সাধারণত কুনি বলে থাকি। ঠিকমতো নক না কাটা, নখে কোন আঘাত পেলে বা অপরিচ্ছন্ন জুতা মোজা পড়লে সাধারণত এই কুনি হতে দেখা যায়।
আরো পড়ুন: সাবুদানা খাওয়ার যত উপকারিতা - সাবুদানা কি থেকে তৈরি হয়
পায়ের নখে কুনি হলে নখের আশেপাশের ত্বক লাল হয়ে যেতে দেখা যায়, নখের চারপাশের মাংস ফুলে যেতে পারে, প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুজ জমতে পারে। এবং পুজ সহ রক্ত বের হতে পারে। এক্ষেত্রে কুনি হওয়া নখ শুকনো রাখতে হবে, আরামদায়ক জুতা ব্যবহার করতে হবে, নিজে কুনি কাটার চেষ্টা করা যাবে না।
পায়ে নখের ফাঙ্গাসের চিকিৎসা
পায়ের নখের ফাঙ্গাস এর চিকিৎসা হিসেবে ট্রপিকাল কিছু ক্রিম বা মলম ব্যবহার করার উপদেশ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। আবার মুখে খাওয়ার কিছু ঔষধও দিয়ে থাকেন কিছু কিছু ক্ষেত্রে। তবে পায়ের নখের ফাঙ্গাস দূর করার জন্য এসব ওষুধ ব্যবহারে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। বর্তমানে পায়ের ফাঙ্গাস দূর করার জন্য লেজার পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে পায়ের ফাঙ্গাস খুব সহজেই নিরাময় করা যায়।
আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে পায়ের ফাঙ্গাস খুব বেশি হলে নখ বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। সাধারণত নখের স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে বা নখের টিস্যু গুলোকে মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে পরীক্ষা করে নির্ণয় করা হয়ে থাকে যে এটা আসলেই ছত্রাক আক্রমণ কিনা। এবং সেই হিসেবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন চিকিৎসকরা।
পায়ের নখের ফাঙ্গাস দূর করতে এবং আবার যেন না হতে পারে এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ মত ঔষধের কোর্সগুলো সম্পূর্ণ করা জরুরী।
পরিশেষে
পায়ের ফাঙ্গাস দূর করার জন্য দীর্ঘ মেয়াদে ঘরোয়া কিছু উপাদান ব্যবহারে সহজেই দূর করা যায়। হাতের কাছে থাকা সহজলভ্য এই উপাদান গুলো দিয়ে পায়ের নখের ফাঙ্গাস দূর করার ব্যবহার করলে অনেকটাই আরাম বোধ করবেন। এবং ধৈর্য নিয়ে আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার চালিয়ে গেলে খুব সহজেই এই ফাঙ্গাস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
তবে ছত্রাক আক্রমণ হওয়ার আগে কিছু কিছু বিষয় মেনে চললে অনাকাঙ্ক্ষিত এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। হাত বা পায়ে ফাঙ্গাস আক্রমণ হলে যেহেতু আমাদের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার সাথে সাথে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যায়, তাই ছত্রাক আক্রমণের বিষয়ে সবসময় সজাগ থাকা উচিত।
passiondrivefiona র নীতিমালা মেনে comment করুন। প্রতিটি comment রিভিউ করা হয়;
comment url