তেজপাতা ঝরাবে জেদি মেদ - তেজপাতার পানি খাওয়ার উপকারিতা
তেজপাতা ঝরাবে জেদি মেদ যদি আপনি তেজপাতা ফুটানো পানি নিয়মিত সকালে পান করতে পারেন। মেদ ঝরার সাথে সাথে ওজনকে নিয়ে আসবে কাঙ্খিত লক্ষ্যে। সাথে জেনে নিন, তেজপাতার পানি খাওয়ার উপকারিতা।
তেজপাতা শুধু রান্নায়ই নয়, তেজপাতা আমাদের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ সহ আরো অনেক রোগে তেজপাতার পানি খাওয়ার রয়েছে অনেক উপকারিতা। এমনকি ত্বক এবং চুলের যত্নেও তেজপাতার রয়েছে উপকারিতা।পোস্ট সূচীপত্রঃ
তেজপাতা ঝরাবে জেদি মেদ
তেজপাতা ঝরাবে জেদি মেদ, সত্যিই কি তাই? হ্যাঁ, পেটের অনেকদিন ধরে জমে থাকা জেদি মেদ ঝরানো সম্ভব প্রতিদিন নিয়ম করে সকালে তেজপাতা ফুটানো পানি খেলে। তেজপাতা একটি মিষ্টি এবং সুগন্ধি জাতীয় মসলা। আমাদের দেশে বিভিন্ন রান্নার স্বাদ এবং সুঘ্রাণ বাড়াতে এই তেজপাতা নিয়মিত ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এমন কোন রান্না ঘর পাওয়া যাবে না যেখানে তেজপাতা নেই।
কিন্তু আমরা অনেকেই হয়তো জানি না আমাদের হাতের কাছে থাকা এই সহজলভ্য পাতাটি মেদ ঝরানোর জন্য খুবই উপকারী। শুধু প্রতিদিন সকালে খালি পেটে তেজপাতা ফুটানো পানি নিয়ম করে খেতে হবে। তেজপাতা ঝরাবে জেদি মেদ কিন্তু কীভাবে নিচে জেনে নিনঃ
প্রতিদিন সকালে হাঁটার পর দেড় গ্লাস পানিতে ৩ থেকে ৪টি তেজপাতা, এক টুকরো আদা কুচি সাথে দিতে পারেন কয়েকটি লবঙ্গ বা দারুচিনির একটি টুকরো।
সবগুলো উপাদান ৩ থেকে ৪ মিনিটের জন্য মিডিয়াম থেকে লো আচে ফুটিয়ে নিতে হবে। ৩-৪ মিনিট পর চুলা থেকে পানিটি নামিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। পানীয়টি কুসুম গরম অবস্থায় এলে এক টুকরো লেবুর রস মিশিয়ে অল্প অল্প করে খেতে হবে। চাইলে এখানে হাফ চা চামচ মধু যোগ করতে পারেন।
প্রতিদিন নিয়ম করে সকালে এই পানীয় টি খেলে ধীরে ধীরে আপনার মেদ ঝরা শুরু হবে এবং সেই সাথে ওজনও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে। অনেক পুরনো পেটে জমে থাকা জেদি মেদ কিছুদিনের মধ্যেই এই পানীয়তে ঝরে যাবে। তবে অবশ্যই এর সাথে সাথে অতিরিক্ত তৈলাক্ত যুক্ত খাবার, মশলাযুক্ত খাবার, বাইরের ফাস্টফুড জাতীয় খাবার, চিনি এবং মিষ্টি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
তেজপাতার পানি খাওয়ার উপকারিতা
তেজপাতার পানি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে এখন জেনে নিন। তেজপাতা এই মসলাটি আমরা আমাদের বিভিন্ন রান্নায় বিভিন্নভাবে ব্যবহার করতে ভালোবাসি। কিন্তু শুধু রান্নায় তেজপাতা ব্যবহার নয়, নিয়মিত তেজপাতার পানি খেলে পাওয়া যায় অনেক উপকার। তাই আমরা সহজেই আমাদের বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে এই তেজপাতা ব্যবহার করতে পারি।
নিচে তেজপাতা পানি খাওয়ার উপকারিতা গুলো দেখে নিনঃ
ফ্রি রেডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করে তেজপাতাঃ তেজপাতার পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরে ফ্রি রেডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। এছাড়া তেজপাতার পানি শরীরে টক্সিন পদার্থ বের করে শরীরকে ডিটক্সিফাই করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে তেজপাতার ব্যবহারঃ বর্তমানে ডায়াবেটিস মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে। তবে ডায়াবেটিস দেখা দেওয়ার প্রথম পর্যায়ে নিয়মিত কিছু নিয়ম পালন করলে এই রোগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে আমরা এই ডায়াবেটিস থেকে নিজেদেরকে মুক্ত রাখতে পারি।
আর এরকম একটি ঘরোয়া রেমিডি হলো আমাদের সবার রান্নাঘরে থাকা একটি মসলা, তা হল তেজপাতা। নিয়মিত তেজপাতার পানি, তেজপাতা দিয়ে খাবার রান্না করলে, তেজপাতার চা খেলে, বিভিন্ন পানীয়তে তেজপাতার গুঁড়ো ব্যবহার করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব অনেকাংশে।
তাই আপনি যদি ডায়াবেটিস রোগী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার ডায়েটে নিয়মিত তেজপাতা রাখতে পারেন।
ক্যান্সার রোধে তেজপাতার পানির উপকারিতাঃ তেজপাতার মধ্যে ক্যান্সার প্রতিরোধকারী উপাদান থাকায় নিয়মিত এই পাতার পানি বা তেজপাতা খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করলে ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করা সম্ভব। তেজপাতা কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
কারন তেজপাতায় থাকা ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট এবং ক্যাটচিন নামক উপাদান ক্যান্সার তৈরিকারি কোষকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে থাকে। এছাড়া তেজপাতায় থাকা এন্টি কারসিনোজেনি উপাদান থাকায় স্তন ক্যান্সারের মত মারাত্মক রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে তেজপাতার পানির উপকারিতাঃ যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন তারা তেজপাতা নিয়মিত খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করে এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তেজপাতায় থাকা বিশেষ উপাদান হজম রস তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হতে সহায়তা করে।
এছাড়া তেজ পাতায় থাকা এনজাইম নামক উপাদান খাবারের গ্লুকোজ ভাঙতে সহায়তা করে থাকে, ফলে অন্ত্রের যেকোনো সমস্যার মত রোগ দূর করা সম্ভব হয়।
মানসিক অবসাদ দূর করতে তেজপাতার পানির উপকারিতাঃ তেজপাতায় থাকা বিশেষ উপাদান মানসিকভাবে সুস্থ এবং সবল থাকতে সহায়তা করে থাকে। ফলে নিয়মিত তেজপাতার পানি বা চা পান করলে মানসিক অবসাদ থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়। এছাড়া আপনারা যে কোন পানীয়তে বা সূপে তেজপাতার ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
হার্ট ভালো রাখতে তেজপাতার পানির উপকারিতাঃ তেজপাতায় থাকা বিষেশ উপাদান রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সহায়তা করে। আর এই কাজটি করে থাকে তেজপাতার মধ্যে থাকা ইথানল নামক বিশেষ একটি নির্যাস। এছাড়া তেজপাতার মধ্যে থাকা ক্যাফেক এসিড নামক উপাদান হাটকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
এর ফলে হার্ট থাকে সুস্থ এবং হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়। নিয়মিত সকালে বা বিকেলে তেজপাতা ফুটানো পানি খেলে হার্ট অ্যাটাকের মতো রোগ থেকে দূরে থাকতে পারবেন।
কফ কাশি দূর করতে তেজপাতার পানির উপকারিতাঃ কফ কাশির মতো রোগে তেজপাতা বহুল ব্যবহৃত একটি মসলা। বুকে কফ জমলে সরিষার তেলে কালিজিরা এবং তেজপাতা ফুটিয়ে হালকা গরম অবস্থায় বুকে মালিশ করলে অনেকটাই আরাম পাওয়া যায়।
এছাড়া কাশি দূর করতে তেজপাতা দিয়ে চা অনেক উপকারী। এক্ষেত্রে চায়ের সাথে তেজপাতা এবং আদা মিশিয়ে পান করলে হালকা কাশি দূর করা সম্ভব হয়।
কিডনি ভালো রাখতে তেজপাতার পানির উপকারিতাঃ তেজপাতায় থাকা লরিক এসিড নামক উপাদান কিডনি রোগে জন্য অনেক উপকারী। এজন্যই কিডনি এবং মূত্রথলির পাথর নিরাময়ে তেজপাতা বহুল ব্যবহৃত একটি উপাদান। তাই যারা কিডনির সমস্যায় ভুগছেন সকালে বা বিকেলে তেজ পাতা ভেজানো পানি পান করলে উপকার পাবেন।
দাঁতের যত্নে তেজপাতার উপকারিতাঃ তেজপাতায় রয়েছে ভিটামিন সি, যা দাঁত এবং মাড়িকে রাখে শক্ত এবং মজবুত। তেজপাতা্র পানিতে থাকা উপাদান মুখের মধ্যে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে। বলা হয় যে, দাঁত ব্যথা হলে তেজপাতার ছাই দিয়ে দাঁত ঘষলে দাঁত ব্যথা থেকে অনেকটাই মুক্তি মিলে।
এছাড়া দাঁতের হলদেটে ভাব দূর করতে কাঁচা তেজপাতা নিয়মিত ব্যবহার করলে সুফল পাবেন। কয়েকটি কাঁচা তেজপাতা পেস্ট করে দাঁত ঘষলে দাঁতের হলুদ ভাব দূর হবে কয়েক দিনে, দাঁত হবে উজ্জ্বল এবং চকচকে।
বাত ব্যথা দূর করতে তেজপাতার উপকারিতাঃ তেজপাতায় থাকা উপাদান বাতের ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে থাকে। এজন্য যুগ যুগ ধরে বাত ব্যথা দূর করতে তেজপাতার গুঁড়া পানি দিয়ে মিক্সড করে পেস্ট বানিয়ে গাটের জায়গায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এক্ষেত্রে তেজপাতার পেস্ট তৈরি করে ব্যথার স্থানে হালকা হাতে মালিশ করতে হবে।
নখের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে তেজপাতার ব্যবহারঃ আপনারা নখের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগলে তেজপাতার পেস্ট ব্যবহার করে উপকার পাবেন। এক্ষেত্রে তেজপাতা গুড়ো করে পেস্ট বানিয়ে আক্রান্ত স্থানে এবং আশেপাশে লাগিয়ে রাখলে এ ধরনের রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হয়।
ক্ষত নিরাময়ে তেজপাতা ব্যবহারের উপকারিতাঃ তেজপাতায় থাকা এন্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান যে কোনো ধরনের ক্ষত সারাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়া এই উপাদান ক্যানডিডার মতো ছত্রাক ইনফেকশনের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে। এজন্য নিয়মিত তেজপাতার পানি খেলে উপকার পাবেন।
তেজপাতা কি
তেজপাতা একটি সুগন্ধি জাতীয় মসলা। তেজপাতা সাধারণত রান্নার স্বাদ এবং সুঘ্রাণ বাড়াতে আমরা ব্যবহার করে থাকি। এই তেজপাতার গুনে যে কোন রান্না হয়ে থাকে সুস্বাদু এবং সুঘ্রাণ যুক্ত। তাই যুগ যুগ ধরে পোলাও, পায়েস, বিরিয়ানি, যেকোনো ধরনের মাংস রান্নায়, সুপ, ডাল এমনকি সবজিতেও এই তেজপাতা আমরা ব্যবহার করে থাকি।
তেজপাতা শুধু রান্নার স্বাদ এবং সুঘ্রাণ ই বাড়ায় না, তেজপাতা বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। রান্নায় ব্যবহার করা ছাড়াও তেজপাতার পানি বা তেজপাতা দিয়ে চা অনেকের অনেক প্রিয় একটি পানীয়।
তেজপাতায় রয়েছে ভিটামিন সি, ফাইবার, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, আয়রনের মত পুষ্টি উপাদান। তেজপাতার মধ্যে এই ভেষজ গুনাগুনের জন্যই আদিকাল থেকে হারবাল চিকিৎসার ওষুধের অন্যতম উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
ত্বকের জন্য তেজপাতার উপকারিতা
ত্বকের জন্য তেজপাতার উপকারিতা সম্পর্কে আপনি যদি আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে তো জেনে নিন। তেজপাতায় রয়েছে ভিটামিন সি যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর ভরপুর ভান্ডার। এই ভিটামিন সি আমাদের ত্বক ত্বককে দাগ মুক্ত করতে, নতুন কোষ গজাতে ত্বককে প্রাণবন্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
তাই আপনারা উপকারী এই মসলাটি রাখতে পারেন আপনাদের ত্বকের নিয়মিত যত্নের একটি অন্যতম উপকরণ হিসেবে। ত্বকের জন্য তেজপাতা আমরা দুই ভাবে ব্যবহার করতে পারি।
প্রথম উপায়ঃ কয়েকটি পরিষ্কার তেজপাতা এক লিটার পানিতে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে সাথে গোলাপজল মিশিয়ে মুখ ধুতে পারি। এতে ত্বকে টোনিং এর কাজ হবে সাথে ব্রণ, ফুসকুড়ি ইত্যাদি দূর হবে। এছাড়া ব্রণের জায়গায় তেজপাতার পেস্ট বানিয়ে ব্যবহার করলেও উপকার মিলবে।
দ্বিতীয় উপায়ঃ তেজপাতার সাথে মুলতানি মাটি মিক্স করে পেস্ট বানিয়ে তৈলাক্ত ত্বকে ব্যবহার করলে এই গরমে ত্বক থাকবে ব্রণ মুক্ত, দাগ মুক্ত এবং চকচকে। এজন্য সপ্তাহে একদিন বা ১৫ দিন পর পর এক থেকে দেড় চা চামচ মুলতানি মাটি সাথে হাত চা চামচ তেজপাতার গুঁড়ো পানি বা গোলাপ জল দিয়ে মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন।
তেজপাতা ত্বককে গভীরভাবে পরিষ্কার করতে সহায়তা করে থাকে। ফলে ত্বকে ব্রণ হওয়া থেকে রক্ষা পায়। এছাড়া তেজপাতার পেস্ট ত্বকের যে কোন ফুসকুড়ি, ব্রণ চুলকানি ইত্যাদি কমাতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তেজপাতায় এসব ভেষজ গুণ থাকায় দিন দিন রূপ সচেতন মানুষের কাছে তেজপাতার ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এছাড়া তেজপাতায় থাকা বিশেষ ধরনের তেল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সাবান, ক্রিম ইত্যাদি তৈরি হয়ে থাকে যা ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তেজপাতা সুগন্ধি জাতীয় মসলা হওয়ায় তেজপাতা নির্যাস দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি জাতীয় দ্রব্য তৈরি করা হয়ে থাকে।
চুলের যত্নে তেজপাতার উপকারিতা
তেজপাতা ঝরাবে জেদি মেদ সাথে সাথে ত্বকের যত্ন নিতে যেমন উপকারী তেমনি চুলের যত্নেও তেজপাতা ব্যবহারের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। তেজ পাতায় রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টি ফাঙ্গাল উপাদান যা চুলের যেকোনো ধরনের সমস্যা,
যেমনঃ চুলের গোড়ায় খুশকি, কোন কারণে চুলের গোড়ায় চুলকানি দূর করতে এবং চুলকে শক্ত, মজবুত করতে দারুন উপকার।
চুলের যত্নে আমরা তেজপাতা পানির সাথে কয়েকটি তেজপাতা ফুটিয়ে ঠান্ডা হওয়ার পর ব্যবহার করতে পারি। এক্ষেত্রে চুল শ্যাম্পু করার পর এই তেজপাতা ফুটানো পানি দিয়ে চুল ধুলে চুলের গোড়া মজবুত হবে, সাথে চুলকে কন্ডিশনিং এর কাজও করবে। এছাড়া তেজপাতা দিয়ে আমরা হেয়ার মাস্ক তৈরি করে তুলে ব্যবহার করতে পারি।
এজন্য কয়েকটি তেজপাতার পেস্ট বা তেজপাতার গুঁড়ো দুই চা চামচ টক দই সাথে মেশাতে হবে, সাথে দিতে হবে এক টুকরো লেবুর রস এবং চুলের ঘনত্ব অনুযায়ী চুলে ব্যবহার করা যেকোনো তেল। এই মাস্কটি চুলে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
১৫ দিন পর পর বা মাসে একবার এই প্যাকটি ব্যবহার করলে চুল থেকে খুশকি দূর হবে এবং চুলের গোড়া মজবুত এবং শক্ত হবে।
এছাড়া তেজপাতার গুঁড়ো নারিকেল তেল বা অলিভয়েলের সাথে মিশিয়ে মাথার ত্বকে মেসেজ করে লাগাতে পারেন। প্রতিবার শ্যাম্পু করার আগে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। এতে চুলের গোড়া মজবুত হবে এবং চুলের বৃদ্ধি তরতর করে হবে।
ইউরিক অ্যাসিড কমাতে তেজপাতার উপকারিতা
ইউরিক অ্যাসিড কমাতে তেজপাতার উপকারিতা রয়েছে। ইউরিক অ্যাসিডের মত সমস্যায় বর্তমানে অনেকেই ভুগে থাকেন। সাধারণত পরিবারের বয়স্কদের মধ্যে এই সমস্যায় ভুগতে বেশি দেখা যায়।
ইউরিক এসিড হওয়ার কারণ হলো, খাবার থেকে তৈরি হওয়া এসিডের চেয়ে লিভার বেশি পরিমাণ ইউরিক এসিড উৎপন্ন করে এবং এই অতিরিক্ত ইউরিক এসিড কিডনি শরীর থেকে বের করতে পারে না। আর এতেই রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
সাধারণত বলা হয় যে যারা প্রোটিনযুক্ত খাবার বেশি গ্রহণ করে তাদের মধ্যে ইউরিক এসিডের সমস্যায় বেশি দেখা যায়। এই সমস্যা হলে হাড় এবং গাটে ব্যথা হয় এবং কিডনিতেও এর প্রভাব পড়তে দেখা যায়। অনেক সময় হাঁটুতে প্রচন্ড ব্যাথার কারণে হাঁটাচলাতেও সমস্যা দেখা দেয়।
ইউরিক অ্যাসিড থেকে মুক্তি পেতে অনেকে নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন। এক্ষেত্রে একটু সচেতন হলে ঘরোয়া কিছু উপাদান দিয়ে আপনি এই সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পেতে পারেন। এই উপাদান গুলোর মধ্যে একটি হলো আমাদের সবার পরিচিত মসলা তেজপাতা।
ইউরিক এসিড কমাতে তেজপাতা কিভাবে খাবেন তা দেখে নিনঃ
- ২ থেকে ৩টি তেজপাতা দিয়ে ফুটানো পানি পান করলে উপকার পাবেন। এই পানীয় ইউরিক এসিড কমিয়ে আপনাকে স্বস্তি দিবে।
- এছাড়া কাচা তেজপাতা আপনি চাইলে চিবিয়ে খেতে পারেন বা তেজপাতা দিয়ে চা বানিয়ে খেলেও উপকার পাবেন।
নিয়মিত সকাল এবং বিকালে তেজপাতা ফোটানো পানি পান করলে ইউরিক এসিডের মত যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তেজপাতায় থাকা এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান রক্তে মিশে থাকা ইউরিক এসিডের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে। এছাড়া তেজপাতায় থাকা ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং ফলিক এসিড শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
তেজপাতার ধোয়ার উপকারিতা
তেজপাতা ঝরাবে জেদি মেদ, তেমনি আপনি যদি কিছু তেজপাতা পুড়িয়ে ধোয়া ব্যবহার করতে পারেন তাহলে এর মাধ্যমে অনেক উপকার মিলবে। তেজপাতা পোড়ানোর ফলে যে ধোয়া বের হয় সেই ধোঁয়া নিঃশ্বাসের মাধ্যমে শরীরের ভেতরে গিয়ে এক ধরনের আরামের অনুভূতি সৃষ্টি করে।
এজন্য আপনার ঘুমের সমস্যা থাকলে ঘুমানোর আগে আপনার রুমে কয়েকটি তেজপাতা পুড়িয়ে ধোঁয়া বের করতে পারেন। নিচে তেজপাতা ধোয়ার উপকারিতা গুলো দেখে নিনঃ
- তেজপাতায় থাকা পিনাইন, সিনেওল এবং এলিমেসিনের মতো উপাদান নার্ভকে ভালো রেখে কর্মক্ষম রাখতে সহায়তা করে থাকে।
- তেজপাতার ধোঁয়া আপনার ক্লান্তি দূর করবে এবং ভালো ঘুম নিশ্চিত করবে।
- তেজপাতার ধোঁয়া মস্তিষ্কের ভিতরে গিয়ে নার্ভ কে শান্ত রাখতে সহায়তা করে থাকে, ফলে এক ধরনের প্রশান্তি অনুভব হবে আপনার ভেতর থেকে।
- এছাড়া এই ধোয়া মনোযোগ বাড়াতে সহায়তা করে থাকে।
- তেজপাতায় থাকা এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান শরীরের ভিতরে গিয়ে যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে থাকে।
- তাছাড়া আপনার বাসায় যদি তেলাপোকা বা পোকামাকড়ের উপদ্রব থাকে তাহলে কিছুদিন নিয়ম করে তেজপাতা বাড়িতে পোড়ালে উপকার পাবেন।
তেজপাতার অপকারিতা কি কি
তেজপাতা ঝরাবে জেদি মেদ, কিভাবে তা আমরা উপরে জেনেছি। এছাড়া তেজপাতার পানি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কেও আলোচনা করেছি। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে তেজপাতা ব্যবহার না করলেই ভালো হবে। অর্থাৎ কোন কোন ব্যক্তির জন্য তেজপাতার অপকারিতা লক্ষ্য করা যায়।যেমনঃ
- গর্ভাবস্থায় তেজপাতা ব্যবহারে মা এবং গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি হতে পারে। এজন্য গর্ভাবস্থায় তেজপাতা বেশি ডায়েটে না রাখাই ভালো হবে। এ ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ মত ডায়েট ফলো করতে হবে।
- যারা আগে থেকেই পেটের পেটের পীড়ায় ভুগছেন তাদের ওই সময় তেজপাতা দিয়ে রান্না করা কোন খাবার বা অন্য কোন ভাবে তেজপাতা না খাওয়াই ভালো হবে। কারণ তেজপাতা যেহেতু হজমে সহায়তা করে তাই এ সময় পেটের অসুখ আরও বাড়তে পারে।
- যারা হার্ট ভালো রাখতে অতিরিক্ত ওষুধ সেবন করছেন তাদেরও চিকিৎসকের পরামর্শ মতো এই ভেষজ মসলা তেজপাতা ডায়েটে রাখতে হবে।
- এছাড়া যারা ডায়াবেটিসের জন্য রক্তে সুগার কমাতে আগে থেকে ওষুধ খাচ্ছেন, তাদেরও তেজপাতা সাবধানে রাখতে হবে। কারণ তেজপাতা শরীরের ভেতরে গিয়ে গ্লুকোজের পরিমাণ কমাতে সহায়তা করে। এর ওষুধ এবং তেজপাতা একসাথে গ্রহণ করলে হঠাৎ করে সুগার কমে যেতে পারে, যা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খুবই মারাত্মক একটি প্রতিক্রিয়া।
পরিশেষে
তেজপাতা ঝরাবে জেদি মেদ এ সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।তেজপাতার তেজে এবং বহুবিধ গুনে যেমন ঝরবে শরীরের জমে থাকা অনেক দিনের জেদি মেদ, তেমনি তেজপাতার পানি খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে। এছাড়া আমাদের ত্বক এবং চুলের যত্নেও তেজপাতা ব্যবহারে উপকারিতা লক্ষ্য করা যায়।
আবার ইউরিক অ্যাসিডের মতো সমস্যা মোকাবেলায় তেজপাতা ব্যবহারের উপকারিতা অনেক।সুগন্ধিযুক্ত, মিষ্টি জাতীয় এই তেজপাতা শুকনো অথবা কাঁচা দুই অবস্থায় ব্যবহার করে উপকার পাওয়া যায়। তাই আপনি আপনার সুবিধামতো যে কোনো ভাবে তেজপাতা আপনার ডায়েটে রেখে উপকার পেতে পারেন।
passiondrivefiona র নীতিমালা মেনে comment করুন। প্রতিটি comment রিভিউ করা হয়;
comment url