ত্বক ও চুলের যত্নে এলোভেরা ব্যবহারের নিয়ম

ত্বক ও চুলের যত্নে এলোভেরা ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জানতে আপনি যদি আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে আজকের আর্টিকেল থেকে বিস্তারিত জেনে নিন। সাথে জেনে নিন, এলোভেরা খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত।

ত্বক-চুলের-যত্নে-এলোভেরা-ব্যবহারের-নিয়ম
ত্বক ও চুলের যত্নে এলোভেরার উপকারিতা যথাযথ পাওয়ার জন্য এলোভেরা জেল ব্যবহারের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে ভালোভাবে জানা প্রয়োজন, যা এই আর্টিকেলটি পড়লে জানতে পারবেন। তাই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল।পোস্ট সূচীপত্রঃ

ভূমিকাঃ ত্বক ও চুলের যত্নে এলোভেরা ব্যবহারের নিয়ম

ত্বক ও চুলের যত্নে এলোভেরা ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জেনে আপনার নিজের ত্বক ও চুলে যত্ন নেওয়া শুরু করুন আজকে থেকে। দিন দিন মানুষের মধ্যে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে ত্বক ও চুলের যত্ন নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। বর্তমানে এলোভেরা দিয়ে ত্বক ও চুলের নিতে অনেককে দেখা যায়।

আমাদের ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী বিশেষ উপাদান এলোভেরায় বিদ্যমান রয়েছে। যেমনঃ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সহ ভিটামিন এ, ই, ফলিক এসিড সহ আমাদের ত্বক ও চুলের জন্য প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদান। এজন্য ত্বক ও চুলের জন্য তৈরি বিভিন্ন কসমেটিক্সে এখন এলোভেরার ব্যবহার বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়।

আপনিও যদি আপনার রুপচর্চায় প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করতে চান, তাহলে আজকের আর্টিকেল থেকে ত্বক ও চুলের যত্নে এলোভেরা ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে নিচের আলোচনা থেকে জেনে নিন।

ত্বকের যত্নে এলোভেরা ব্যবহারের নিয়ম

ত্বকের যত্নে এলোভেরা ব্যবহারের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে প্রথমে জেনে নিন। ত্বক সুন্দর, সজীব এবং স্বাস্থ্যজ্জ্বল রাখতে এলোভেরা ব্যবহারের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবেনা। এই উদ্ভিদে অসাধারণ কিছু ঔষধি গুনাগুন রয়েছে যা আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।

এলোভেরা ব্যবহারের জন্য দুই ভাবে আমরা এলোভেরা জেল বা রস পেতে পারি। বাসায় লাগানো এলোভেরা গাছ থেকে বা বাজার থেকে এলোভেরার পাতা কিনে সেই পাতা কেটে কিছুক্ষণ রেখে দিতে হবে, যাতে পাতার হলুদ রঙের রসটি পাতা থেকে বের হয়ে যেতে পারে।

এরপর এলোভেরার ভিতরের রসটি ব্যবহারের জন্য সম্পূর্ণ উপযোগী হয়ে ওঠে। আবার বাজার থেকে ভালো ব্র্যান্ডের কোন এলোভেরার জেল কিনে ব্যবহার করতে পারেন।

নিচে ত্বকের যত্নে এলোভেরা ব্যবহারের সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিনঃ

শুষ্ক ত্বকের যত্নে এলোভেরার ফেস মাস্ক

এলোভেরার জেল বা রস দিয়ে শুষ্ক ত্বকের জন্য দারুন একটি ফেসমাস্ক তৈরি করা যায়। এই ফেসমাস্কটি বানানোর নিয়ম দেখে নিনঃ

প্রথমে ফ্রেস এলোভেরার রস বা বাজার থেকে কেনা ভালো কোন ব্র্যান্ডের অ্যালোভেরা জেল নিতে হবে এক চা চামচ। সাথে দিতে হবে ৩-৪ফোঁটা লেবুর রস, এবং একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল। সবগুলো উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে পরিষ্কার হাতে মুখে এবং গলায় এপ্লাই করতে হবে । ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর স্বাভাবিক পানি দিয়ে আলতো ভাবে ঘষে ধুয়ে ফেলতে হবে।

এইভাবে সপ্তাহে নিয়মিত দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করতে পারেন আপনার ত্বকে। শুষ্ক ত্বকে নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের শুষ্কতা দূর হবে এবং ত্বক হবে সজীব এবং প্রাণোচ্ছল।

তৈলাক্ত এবং ব্রণ যুক্ত ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এলোভেরার জেল বা রস খুবই উপকারী একটি উপাদান। যারা তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী তারা প্রায়ই ব্রণের সমস্যায় ভুগেন। আর এই ব্রণের মূল হল ত্বকে থাকা এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া। মূলতঃ এই ব্যাকটেরিয়া ত্বকে অতিরিক্ত তেল নিঃসরণের ফলে ত্বকের পোরস গুলো লক অবস্থায় পায় এবং এর ফলে ব্রণের বিস্তার ঘটায়।

এলোভেরায় থাকা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকে ব্রণের বিস্তার রোধ করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এজন্য ব্রনের বিস্তার রোধ করতে এলোভেরা হতে পারে একটি আশীর্বাদ। এছাড়া এলোভেরায় থাকা উপাদানগুলো ত্বকের জন্য কম ক্ষতিকারক এবং ত্বকে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই ভালো ফলাফল বয়ে আনতে পারে।

তাই আপনি যদি আপনার দৈনিক রূপচর্চায় এলোভেরা রাখতে পারেন, তাহলে আপনার ত্বক পাবে নতুন জীবন এবং আপনি পাবেন একটি ব্রণ মুক্ত সুন্দর ত্বক।

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এলোভেরা ব্যবহার করার নিয়মঃ

১ টেবিল চামচ ফ্রেশ এলোভেরা জেল বা রস নিতে হবে। এর সাথে যোগ করতে হবে হাফ চা চামচ লেবুর রস। সাথে দিতে হবে ট্রি টি অয়েলের (বাজারে কিনতে পাবেন) দুই ফোটা। সবগুলো উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে পরিষ্কার ত্বকে ব্যবহার করতে হবে।

কয়েকদিনের ব্যবহারেই আপনার ত্বকে আপনি নিজেই পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবেন। কারণ এই প্যাকটি ত্বকের পোরসগুলো থেকে গভীরভাবে ময়লা পরিষ্কার করে ত্বকের ব্রন হোওয়া রোধ করে ।

এছাড়া পরিষ্কার অ্যালোভেরার জেল বা রস আপনি আপনার ত্বকে মেকআপের আগে প্রাইবার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এটিতে কোন কেমিক্যাল থাকে না। তাই এটি হতে পারে আপনার মেকআপের প্রাকৃতিক এবং দারুন একটি কার্যকরী উপাদান।

 নিচে ত্বকে এলোভেরা ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে দেখে নিনঃ

  • এলোভেরা রোদে পোড়া ভাব কমাতে সাহায্য করে।
  • মুখে ব্রণ হলে এলোভেরা জেল লাগালে ব্রন থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • আমাদের ত্বকে বয়সের ছাপ কমাতে এলোভেরার উপকারিতা অপরিসীম। ত্বকে বয়সের কারণে বলিরেখা পরলে এলোভেরা ব্যবহারে উপকার পাবেন। কারন এটি এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হোওয়ায় ত্বককে ভেতর থেকে পুষ্টি  যুগিয়ে বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে।
  • এই গরমে ত্বক সজীব এবং প্রাণোচ্ছণ রাখতে এলোভেরা কাজ করে ম্যাজিকের মত।
  • অনেকে সারা বছর পায়ের গোড়ালি ফাটায় সমস্যায় ভোগেন। এলোভেরা রস গোসলের পর বা রাতে ঘুমানোর আগে ফাটা জায়গায় লাগালে পা ফাটা দূর হয়ে যাবে কয়েক দিনে।
  • এলোভেরার রস ডিপ ফ্রিজে আইস কিউব করে রাখতে পারেন। প্রচন্ড রোদে বাইরে থেকে বাসায় এসে এই এলোভেরা কিউব মুখে আলতো ভাবে ঘষলে আরাম পাবেন।
  • অনেক সময় কোন কারনে শরীরে কোথাও কেটে গেলে বা ক্ষত হলে সেখানে এলোভেরা রস দিলে উপকার পাবেন। 
ত্বক-চুলের-যত্নে-এলোভেরা-ব্যবহারের-নিয়ম

চুলের যত্নে এলোভেরা ব্যবহার করার নিয়ম

ত্বকে ব্যবহারের সাথে সাথে চুলের যত্নেও এলোভেরা ব্যবহারের উপকারিতা অনেক। কারণ এলোভেরা রয়েছে ভিটামিন এ, বি, সি এবং ফলিক এসিড এর মত উপাদান। বিশেষ করে শুষ্ক এবং খুশকি যুক্ত চুলের জন্য এলোভেরা দারুন কার্যকরি।

চুলের যত্নে এলোভেরা দিয়ে তৈরি মাস্ক নিম্নোক্তভাবে ব্যবহার করতে পারেনঃ

প্রথমে এলোভেরা জেল নিতে হবে ৩ ৪ চামচ বা চুলের ঘনত্ব অনুযায়ী। সাথে নিতে হবে নারিকেল তেল দুই তিন চা চামচ এবং একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল। এরপর দিতে হবে ডিমের একটি কুসুম। সবগুলো উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে চুলে ভাগ ভাগ করে মাথার তালু থেকে চুলের আগা পর্যন্ত সমান ভাবে লাগাতে হবে। 

এই হেয়ার মাস্ক চুলে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রাখার পর স্বাভাবিক পানি দিয়ে চুল শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে। শুধুমাত্র একবার ব্যবহারে চুলে অনেক পরিবর্তন দেখতে পাবেন। চুল উঠা কমাতে, মাথার খুশকি দূর করতে, চুলকে স্বাস্থ্যজ্জল এবং মসৃণ করতে প্যাকটি সপ্তাহে একবার ব্যবহার করলেই হবে।

  • এছাড়া চুলের ঘনত্ব অনুযায়ী পেঁয়াজের রস এবং সমপরিমাণ এলোভেরার জেল একসাথে পেস্ট বানিয়ে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত দিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
  • এছাড়াও শুধু নারিকেল তেল এবং এলোভেরা জেল দিয়ে পেস্ট বানিয়ে চুলে দিলেও অনেক উপকার পাওয়া যায়।
  • আপনি চাইলে শুধু অ্যালোভেরার জেল বা রস চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারেন।

এলোভেরার খাওয়ার  স্বাস্থ্য  উপকারিতা

এলোভেরার খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে এখন জেনে নিন। ত্বক ও চুলের যত্নে এলোভেরা ব্যবহারের নিয়ম মেনে চললে যেমন অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়, তেমনি আমাদের শরীরের জন্য এলোভেরা খাওয়ার রয়েছে প্রচুর উপকারিতা।

এলোভেরার শরবত নিয়মিত খেলে যৌবন ধরে রাখা সম্ভব হয় এবং শরীরে পুষ্টি যুগিয়ে শরীরকে রাখে চাঙ্গা। নিয়মিত এলোভেরার জুস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

তাছাড়া এটি এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় শরীর থেকে বিভিন্ন টক্সিক পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। এর ফলে রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে হার্ট এটাকের সম্ভাবনা কমায়।

নিচে এলোভেরা খাওয়ার অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতা দেখে নিনঃ

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এলোভেরার জুস

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এলোভেরার জুস দারুন উপকারি। কারণ এলোভেরাই রয়েছে লেকটিন  নামক উপাদান যা রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে। এ কারণে ডায়াবেটিস রোগীরা এলোভেরার জুস নিয়মিত খেলে রক্তের সুগারের পরিমাণ কমে আসে।

ডায়াবেটিস ধরা পড়ার পর থেকে নিয়ম করে জুস পান করলে উপকার মিলবে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত এলোভেরা জেল পান করতে পারেন।

হার্টের রোগীদের জন্য এলোভেরা

এলোভেরার ঔষধি গুন সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। এলোভেরার জেল বা রস এন্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর। এন্টি অক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের ফ্রি রেডিকলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। এটি শরীরের অক্সিডেসিব ট্রেস কমায়, ফলে এলোভেরার জুস নিয়মিত পান করলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক কমে আসে। 

তবে এলোভেরায় প্রচুর এলো ল্যাটিক্স থাকার কারণে অনেকদিন যাবত ব্যবহারের কারনে হার্টের সমস্যা হতে পারে। তাই হার্টের রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ মত এলোভেরার জুস নির্দিষ্ট পরিমাণ পান করতে পারেন।

এলোভেরা রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে

এলোভেরা জেল বা রস দিয়ে তৈরি যে কোন পানীয়তে ন্যাচারাল ডিটক্সিফাইং বৈশিষ্ট্য থাকায় আমাদের পরিপাকতন্ত্রের পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। আর এই কারণে সংবহনতন্ত্র বৃদ্ধি পায়। যেহেতু পুষ্টি শোষণের পরিমান বেশি হয় তাই রক্ত সঞ্চালন মসৃণ ভাবে হয়ে থাকে। এর ফলে স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটতে দেখা যায়। তাই এলোভেরাকে রক্ত পরিশোধনকারী বলা হয়ে থাকে।

ওজন কমাতে এলোভেরা

এলোভেরায় এমন অনেক উপাদান রয়েছে যা ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ওজন কমানোর জন্য এলোভেরা জুস নিয়মিতভাবে ১৫ দিন পর্যন্ত একটি নিয়ম করে খেতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় খাবারের ১৫ মিনিট আগে এই জুস পান করলে। এটি নিয়ম মেনে পান করলে আপনাকে কাঙ্ক্ষিত ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

এলোভেরা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে নিচে আলোচনা হলোঃ

এলোভেরার জুস প্রতিদিন সকালে খালি পেটে শরবত বানিয়ে খেলে উপকার পাবেন। এজন্য দুই তিন চা চামচ এলোভেরার জেল নিয়ে পানির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। সাথে দিতে পারেন সামান্য লবন, লেবুর রস এবং মিষ্টির জন্য সামান্য চিনি। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের চিনি ব্যবহার করা যাবে না।

এই পানিওটি সকালে খালি পেটে নিয়মিত পান করলে স্বাস্থ্যের জন্য দারুন উপকার পাবেন।

এছাড়া এলোভেরার জেল বা রস বিভিন্নভাবে ডায়েটে রাখতে পারেন। যেমনঃ এলোভেরা জেল বা রস দিয়ে শরবত বানিয়ে খেতে পারেন। আবার এলোভেরার জেল সালাদে ব্যবহার করেও ডায়েটে রাখতে পারেন। এছাড়া চাইলে এলোভেরা পাতা থেকে ভেতরের জেল ভালোভাবে বের করে সবজি হিসেবেও খেতে পারেন।

মোট কথা যেভাবেই আপনি এলোভেরা খান না কেন, স্বাস্থ্যের জন্য দারুন সব উপকারিতা পাবেন।

ত্বক-চুলের-যত্নে-এলোভেরা-ব্যবহারের-নিয়ম

এলোভেরা কি

এলোভেরা কে বাংলায় ঘৃতকুমারী বলে। এই উদ্ভিদটি এলো পরিবারের একটি সদস্য। এলোভেরা আমাদের সবার পরিচিত রসালো একটি উদ্ভিদ। আমাদের ছাদে, বারান্দায় টবে এই উদ্ভিদটি চাষ করা যায় সহজেই। এর জন্য খুব বেশি যত্নের প্রয়োজন নেই। এলোভেরায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, প্রোটিন এবং মিনারেল যা ত্বক, চুল এবং স্বাস্থ্যের জন্য অসাধারণ একটি উদ্ভিদ।

খালি পেটে এলোভেরা খাওয়ার উপকারিতা

এলোভেরার ভালো উপকারিতা মিলবে, খালি পেটে খেতে পারলে। অর্থাৎ এলোভেরার উপকারিতা যথাযথভাবে পেতে খালি পেটে এলোভেরার খাওয়ার অভ্যাস করা ভালো। এজন্য নিয়মিত সকালে খালি পেটে এলোভেরা রস বা  জুস পান করতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস ফ্রেশ এলোভেরা জুস হতে পারে আপনার পুষ্টির ভান্ডার।

কারণ এতে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল ও এন্টি অক্সিডেন্ট যা আপনাকে সারাদিন কর্মক্ষম রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। নিয়মিত খালি পেটে এলোভেরা জুস খেলে হজমে সুবিধা হয় কারণ এতে রয়েছে এনজাইম নামক একটি বিশেষ উপাদান।

আরো পড়ুনঃ চুল পড়া রোধে মেথি ব্যবহারের উপকারিতা - নতুন চুল গজাতে মেথির ব্যবহার

এলোভেরায় আরো রয়েছে ভিটামিন সি, এ, ই, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফলিক এসিড যা শরীরে পুষ্টির যোগান দিয়ে থাকে পরিপূর্ণভাবে। এবং এতে ক্যালোরির পরিমাণ খুবই কম, তাই অ্যালোভেরার জুস পান করা যায় নিশ্চিন্তে। এলোভেরা পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি থাকায় ভেতর থেকে পুষ্টি জুগিয়ে শরীরকে রাখে হাইড্রেট। এছাড়া শরীর থেকে টক্সিক পদার্থ বের করে শরীরকে রাখে ঝরঝরে।

এলোভেরা এবং আমলকির ব্যবহার করার নিয়ম

এলোভেরার সাথে আমলকি দিয়ে তৈরি Hair Mask চুল পড়া বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য এলোভেরা নিতে হবে দুই চা চামচ সাথে নিতে হবে আমলকির পেস্ট এক চা চামচ এবং আরও দিতে হবে পরিমাণ মতো নারিকেল তেল, ব্যাস তৈরি হয়ে গেল চুলের জন্য দারুন কার্যকরী Hair Mask.

এই প্যাক টি মাসে অন্তত ১বার ব্যবহারে চুল পড়া বন্ধ হবে অনেকটা। তাই আপনি যদি চুল পড়া সমস্যায় ভুবেন তাহলে এই হেয়ার মাস্কটি নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন।

এলোভেরা এবং লেবু ব্যবহার করার নিয়ম

এলোভেরা এবং লেবু একসাথে ত্বক এবং চুলে ব্যবহার করলে দারুন উপকার পাওয়া যায়। এজন্য চুলের জন্য এলোভেরা নিতে হবে দুই চা চামচ এবং এক চা চামচ লেবুর রস, সাথে নিতে হবে পরিমাণ মতো নারকেল তেল। সবগুলো উপাদান ভালোভাবে মিক্সড করে হেয়ার মাস্ক তৈরি করে নিতে হবে।

এই হেয়ার মাস্ক চুলে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করলেই চুলের পার্থক্য বুঝতে পারবেন। চুল হবে ঘন কালো এবং সিল্কি।

ত্বকের যত্নে নিয়মিত এলোভেরা এবং লেবুর রস দিয়ে ফেসমাস্ক  ব্যবহার করলে ত্বক হবে উজ্জ্বল এবং দাগ মুক্ত। এজন্য এক চা চামচ এলোভেরা জেল, আধা চা চামচ লেবুর রস এবং একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল দিয়ে ফেস মাস্ক তৈরি করে নিতে হবে। সপ্তাহে একদিন এই মাস্ক নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক হবে দাগমুক্ত।

এলোভেরা খাওয়ার অপকারিতা

ত্বক ও চুলের যত্নে এলোভেরা ব্যবহারের নিয়ম ও উপকারীতা সম্পর্কে উপরে আলোচনা করেছি। তবে এলোভেরার বিভিন্ন উপকারিতা থাকলেও এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। যেমনঃ

  • এলোভেরা গাছের পাতা কাটার পর যে হলুদ রঙের রস বের হয় তাকে বলে ল্যাটিক্স। এই হলুদ রঙের রস শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর এবং এটি ব্যবহার করলে এলার্জি বা চুলকানি হতে পারে।
  • এছাড়া অতিরিক্ত অ্যালোভেরা জুস পান করলে শরীরে পটাশিয়াম কমে যেতে পারে, ফলে সুগার লেভেল ফল করতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় একজন মহিলার জন্য এলোভেরা জেল বা রসে থাকা কিছু যৌগ ভালো নাও হতে পারে। যদিও অল্প পরিমাণ খেতে পারলেও তা চিকিৎসকের পরামর্শ মত খাওয়া ভালো।
  • এলোভেরা শরীরের ভিতরে গিয়ে গ্লুকোজের পরিমাণ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই গর্ভাবস্থায় একজন মহিলা এলোভেরা জুস খেলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে মাথা ঘোরার সমস্যায়  ভুগতে পারে, আবার অনেক সময় অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
  • তাছাড়া এই জুস নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস হলে পরবর্তীতে কোন কারনে খাওয়া ছেড়ে দিলে কোষ্ঠকাঠি হতে পারে যা একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য খুবই ক্ষতিকর।
  • এছাড়া এলোভেরার জুস খেলে একজন গর্ভবতী মহিলার জরায়ু সংকোচন এর হার বৃদ্ধি পেতে পারে। যা গর্ভাবস্থায় খুবই খারাপ একটি অবস্থা বয়ে আনতে পারে। আবার যেসব মায়েরা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান তারা এই জুস খেলে এই জুসের কিছু যৌগ দুধের বুকের সাথে মিশে  শিশুর অপরিণত হজম ব্যবস্থার ক্ষতি বয়ে আনতে পারে।

তাই গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ মত খুব অল্প পরিমাণ দিয়ে এই জুস পান করা যেতে পারে। কিন্তু গর্ভাবস্থায় এর উপকারিতা নিয়ে এখনো সত্যতা যাচাই করা হয়নি। তাই সব সময় চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা ভালো সিদ্ধান্ত হবে।

পরিশেষে

ত্বক ও চুলের যত্নে এলোভেরা ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এছাড়া এলোভেরা খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কেও আলোচনা করেছি। এলোভেরা এমন একটি ঔষধি গাছ যা আমাদের সবার বাসায় কম বেশি রয়েছে। খুব কম পরিচর্যা করেও এই গাছ থেকে আমরা অনেক উপকার পেয়ে থাকি।

এছাড়াও আমরা সহজেই বাজার থেকে এই উপকারী গাছের পাতাটি কিনে আনতে পারি। আমি আমার নিজের ত্বক, চুলে এলোভেরা ব্যবহার করে উপকার পেয়েছি। আপনারাও অ্যালোভেরার ব্যবহারে উপকৃত হবেন আশা করি। তাই বলা যায়, হাতের কাছে পাওয়া সহজলভ্য এই গাছটি আমরা আমাদের দৈনন্দিন রূপচর্চায় এবং স্বাস্থ্য রক্ষায় নিয়মিত ব্যবহার করতে পারি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

passiondrivefiona র নীতিমালা মেনে comment করুন। প্রতিটি comment রিভিউ করা হয়;

comment url