ত্বক এবং চুলের যত্নে এলোভেরা ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
এলোভেরা কি
এলোভেরা কে বাংলায় ঘৃতকুমারী বলে। এই উদ্ভিদটি এলো পরিবারের একটি সদস্য। এলোভেরা আমাদের সবার পরিচিত রসালো একটি উদ্ভিদ। আমাদের ছাদে, বারান্দায় টবে এই উদ্ভিদটি চাষ করা যায় সহজেই। এর জন্য খুব বেশি যত্নের প্রয়োজন নেই। এলোভেরায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, প্রোটিন এবং মিনারেল যা ত্বক, চুল এবং স্বাস্থ্যের জন্য অসাধারণ একটি উদ্ভিদ।
ত্বকের যত্নে এলোভেরা ব্যবহারের উপকারিতা
ত্বক সুন্দর, সজীব এবং স্বাস্থ্যজ্জ্বল রাখতে এলোভেরা ব্যবহারের উপকারিতা আমরা কম বেশি সবাই জানি। কারণ এই উদ্ভিদে অসাধারণ কিছু ঔষধি গুনাগুন রয়েছে যা আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। নিজের ত্বক সচেতন মানুষ মাত্রই এই অসাধারণ উদ্ভিদের ব্যবহার জানলেও, অনেকেই আছেন যারা ত্বকের যত্নে এলোভেরার সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চান।
আরো পড়ুনঃ ত্বককে জেল্লাদার করতে চালের গুড়া ব্যবহারের উপকারিতা
এলোভেরার উপকারিতা পেতে ব্যবহারের জন্য দুই ভাবে আমরা এলোভেরা জেল বা রস পেতে পারি।নিজের বাসায় লাগানো এলোভেরা গাছ থেকে বা বাজার থেকে এলোভেরার পাতা কিনে সেই পাতা কেটে কিছুক্ষণ রেখে দিতে হবে, যাতে পাতার হলুদ রঙের রসটি পাতা থেকে বের হয়ে যেতে পারে। এরপর এলোভেরার ভিতরের রস টি ব্যবহারের জন্য সম্পূর্ণ উপযোগী হয়ে ওঠে। আবার বাজার থেকে ভালো ব্র্যান্ডের কোন এলোভেরার জেল কিনে ব্যবহার করা যেতে পারে।
নিচে ত্বকে এলোভেরা ব্যবহারের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
- এলোভেরা রোদে পোড়া ভাব কমাতে সাহায্য করে।
- মুখের ব্রণে এলোভেরা লাগালে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়।
- আমাদের ত্বকে বয়সের ছাপ কমাতে এলোভেরার উপকারিতা অপরিসীম। ত্বকে বয়সের কারণে বলিরেখা পরলে এলোভেরা ব্যবহারে উপকার পাবেন। কারন এটি এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হোওয়ায় ত্বককে ভেতর থেকে পুষ্টি যুগিয়ে বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে।
- এই গরমে ত্বক সজীব এবং প্রাণোচ্ছণ রাখতে এলোভেরা কাজ করে ম্যাজিকের মত।
- অনেকে সারা বছর পায়ের গোড়ালি ফাটায় সমস্যায় ভোগেন। এলোভেরা রস গোসলের পর বা রাতে ঘুমানোর আগে ফাটা জায়গায় লাগালে পা ফাটা দূর হয়ে যাবে কয়েক দিনে।
- এলোভেরার রস ডিপ ফ্রিজে আইস কিউব করে রাখতে পারেন। প্রচন্ড রোদে বাইরে থেকে বাসায় এসে এই এলোভেরা কিউব মুখে আলতো ভাবে ঘষলে আরাম পাবেন।
- অনেক সময় কোন কারনে শরীরে কোথাও কেটে গেলে বা ক্ষত হলে সেখানে এলোভেরা রস দিলে উপকার পাবেন।
শুষ্ক ত্বকের যত্নে এলোভেরার ফেস মাস্ক
এলোভেরার জেল বা রস দিয়ে তৈরি নিচের ফেসমাস্ক টি শুষ্ক ত্বকের অধিকারী যারা তাদের জন্য দারুন একটি ফেসমাস্ক। যদিও এটি সব ধরনের ত্বকের জন্য উপকারী, তবে শুষ্ক ত্বকের জন্য বিশেষ উপকারী। এই ফেসমাস্ক টি কিভাবে বানাতে হবে তা নিচে দেওয়া হলঃ
প্রথমে ফ্রেস এলোভেরার রস বা বাজার থেকে কেনা ভালো কোন ব্র্যান্ডের অ্যালোভেরা জেল নিতে হবে এক চা চামচ। সাথে দিতে হবে ৩-৪ফোঁটা লেবুর রস, এবং একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল। সবগুলো উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে পরিষ্কার হাতে মুখে এবং গলায় এপ্লাই করতে হবে । ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর স্বাভাবিক পানি দিয়ে আলতো ভাবে ঘষে ধুয়ে ফেলতে হবে।
এইভাবে সপ্তাহে নিয়মিত দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করতে পারেন আপনার ত্বকে। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক হবে সুন্দর, সজীব এবং প্রাণোচ্ছল যেমনটা আপনি চান।
তৈলাক্ত এবং ব্রণ যুক্ত ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এলোভেরার জেল বা রস খুবই উপকারী একটি উপাদান। যারা তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী তারা প্রায়ই ব্রণের সমস্যায় ভুগে থাকেন। আর এই ব্রণের মূল হল এক ধরনের ত্বকে থাকা ব্যাকটেরিয়া। মূলতঃ এই ব্যাকটেরিয়া ত্বকে অতিরিক্ত তেল নিঃসরণের ফলে ত্বকের পোরস গুলো লক অবস্থায় পায় এবং এর ফলে ব্রণের বিস্তার ঘটায়।
এলোভেরায় থাকা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকে ব্রণের বিস্তার রোধ করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এজন্য ব্রনের বিস্তার রোধ করতে এলোভেরা হতে পারে একটি আশীর্বাদ। এছাড়া এলোভেরায় থাকা উপাদানগুলো ত্বকের জন্য কম ক্ষতিকারক এবং ত্বকে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই ভালো ফলাফল বয়ে আনতে পারে। তাই আপনি যদি আপনার দৈনিক রূপচর্চায় এলোভেরা রাখতে পারেন, তাহলে আপনার ত্বক পাবে নতুন জীবন এবং আপনি পাবেন একটি ব্রণ মুক্ত সুন্দর ত্বক।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য আপনি যেভাবে এলোভেরা ব্যবহার করবেনঃ
এক টেবিল চামচ ফ্রেশ এলোভেরা জেল বা রস নিতে হবে। এর সাথে যোগ করতে হবে হাফ চা চামচ লেবুর রস। সাথে দিতে হবে ট্রি টি অয়েলের দুই ফোটা। সবগুলো উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে পরিষ্কার ত্বকে ব্যবহার করতে হবে। কয়েকদিনের ব্যবহারেই আপনার ত্বকে আপনি নিজেই পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবেন। কারণ এই প্যাকটি ত্বকের পোরসগুলো থেকে গভীরভাবে ময়লা পরিষ্কার করে এবং ত্বককে রাখে জীবাণু মুক্ত।
এছাড়া পরিষ্কার অ্যালোভেরার জেল বা রস আপনি আপনার ত্বকে মেকআপের আগে প্রাইবার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এটিতে কোন কেমিক্যাল থাকে না। ত্বককে কোনরকম প্রতিক্রিয়া ছাড়াই দিতে পারে মসৃণ অনুভূতি। তাই এটি হতে পারে আপনার মেকআপের প্রাকৃতিক এবং দারুন একটি কার্যকরী উপাদান।
চুলের যত্নে এলোভেরা ব্যবহারের উপকারিতা
ত্বকে ব্যবহারের সাথে সাথে চুলের যত্নেও এলোভেরা ব্যবহারের উপকারিতা অনেক। কারণ এলোভেরা রয়েছে ভিটামিন এ, বি, সি এবং ফলিক এসিড এর মত উপাদান। বিশেষ করে শুষ্ক এবং খুশকি যুক্ত চুলের জন্য এলোভেরা হতে পারে আশীর্বাদ। চুলের যত্নে এলোভেরা দিয়ে তৈরি মাস্ক নিম্নোক্তভাবে ব্যবহার করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ ত্বক চুলের যত্নে পেয়ারা পাতা ব্যবহারের উপকারিতা
প্রথমে এলোভেরা জেল নিতে হবে তিন চার চামচ বা চুলের ঘনত্ব অনুযায়ী। সাথে নিতে হবে নারিকেল তেল দুই তিন চা চামচ এবং একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল। এরপর দিতে হবে ডিমের একটি কুসুম। সবগুলো উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে চুলে ভাগ ভাগ করে মাথার তালু থেকে চুলের আগা পর্যন্ত সমান ভাবে এপ্লাই করতে হবে।
এই হেয়ার মাস্ক চুলে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রাখার পর স্বাভাবিক পানি দিয়ে চুল শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে। শুধুমাত্র একবার ব্যবহারে চুলে অনেক পরিবর্তন দেখতে পাবেন। চুল উঠা কমাতে, মাথার খুশকি দূর করতে, চুলকে স্বাস্থ্যজ্জল এবং মসৃণ করতে প্যাকটি সপ্তাহে একবার ব্যবহার করলেই হবে।
এছাড়া চুলের ঘনত্ব অনুযায়ী পেঁয়াজের রস এবং সমপরিমাণ এলোভেরার জেল একসাথে পেস্ট বানিয়ে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত দিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও শুধু নারিকেল তেল এবং এলোভেরা জেল দিয়ে পেস্ট বানিয়ে চুলে দিলেও অনেক উপকার পাওয়া যায়। আপনি চাইলে শুধু অ্যালোভেরার জেল বা রস চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারেন।
আপনি যেভাবেই এলোভেরা আপনার চুলে ব্যবহার করেন না কেন তা আপনার চুলে শুধু উপকারিই বয়ে আনবে। তাই আপনি আপনার সুবিধামতো যে কোন ভাবে আপনার চুলে এলোভেরা ব্যবহার করতে পারেন।
এলোভেরার খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা
ত্বক এবং চুলের যত্নে এলোভেরা ব্যবহারের উপকারিতা যেমন বলে শেষ করা যাবে না, তেমনি আমাদের শরীরের জন্য এলোভেরার উপকারিতা অনেক। এলোভেরার শরবত নিয়মিত খেলে যৌবন ধরে রাখা সম্ভব হয় এবং শরীরে পুষ্টি যুগিয়ে শরীরকে রাখে চাঙ্গা এবং তরতাজা। নিয়মিত এলোভেরার জুস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
তাছাড়া এটি এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় শরীর থেকে বিভিন্ন টক্সিক পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। এর ফলে রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে হার্ট এটাকের সম্ভাবনা কমায়।
এলোভেরার জুস প্রতিদিন সকালে খালি পেটে শরবত বানিয়ে খেতে হবে। এর জন্য দুই তিন চা চামচ এলোভেরার জেল নিয়ে পানির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। সাথে দিতে পারেন সামান্য লবন, লেবুর রস এবং মিষ্টির জন্য চিনি। এই পানিওটি সকালে খালি পেটে নিয়মিত খেলে কয়েক দিনের মধ্যেই স্বাস্থ্যের উপর এলোভেরার উপকারিতা আপনার নজরে আসবে।
এলোভেরার জেল বা রস আমরা বিভিন্নভাবে আমাদের ডায়েটে রাখতে পারি। যেমনঃ এলোভেরা জেল বা রস দিয়ে আমরা শরবত বানিয়ে খেতে পারি। আবার এলোভেরার জেল আমরা সালাদে ব্যবহার করেও আমাদের ডায়েটে রাখতে পারি। এছাড়া কেউ ইচ্ছে করলে এলোভেরা পাতা থেকে ভেতরের জেল ভালোভাবে বের করে সবজি হিসেবেও খেতে পারি।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এলোভেরার জুস
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এলোভেরার জুস হতে পারে আশীর্বাদ। কারণ এলোভেরাই রয়েছে লেকটিন নামক উপাদান যা রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে। এ কারণে ডায়াবেটিস রোগীরা এলোভেরার জুস নিয়মিত খেলে রক্তের সুগারের পরিমাণ কমে আসে। ডায়াবেটিস ধরা পড়ার পর থেকে নিয়ম করে জুস পান করলে উপকার মিলবে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত এলোভেরা জেল পান করতে পারেন।
হার্টের রোগীদের জন্য এলোভেরা
এলোভেরার ঔষধি গুন সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। এলোভেরার জেল বা রস এন্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর। এন্টি অক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের ফ্রি রেডিকলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। এটি শরীরের অক্সিডেস ট্রেস কমায় যা নিয়মিত পান করলে হার্টের রোগীদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক কমে আসে।
তবে এলোভেরার প্রচুর এলো ল্যাটিক্স এর কারণে অনেকদিন যাবত ব্যবহারের কারনে হার্টের সমস্যা হতে পারে। তাই হার্টের রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ মত এলোভেরার জুস নির্দিষ্ট পরিমাণ পান করতে পারেন।
এলোভেরা রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে
এলোভেরা জেল বা রস দিয়ে তৈরি যে কোন পানীয়তে ন্যাচারাল ডিটক্সিফাইং বৈশিষ্ট্য থাকায় আমাদের পরিপাকতন্ত্রের পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। আর এই কারণে সংবহনতন্ত্র বৃদ্ধি পায়। যেহেতু পুষ্টি শোষণের পরিমান বেশি হয় তাই রক্ত সঞ্চালন মসৃণ ভাবে হয়ে থাকে। এর ফলে স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটতে দেখা যায়। তাই এলোভেরা কে রক্ত পরিশোধনকারী বলা হয়ে থাকে।
খালি পেটে এলোভেরা খাওয়ার উপকারিতা
এলোভেরার ভালো উপকারিতা মিলবে, খালি পেটে খেতে পারলে। এলোভেরার উপকারিতা যথাযথভাবে পেতে খালি পেটে এলোভেরার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। এজন্য নিয়মিত সকালে খালি পেটে এলোভেরা রস বা জুস পান করলে মিলবে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস ফ্রেশ এলোভেরা জুস হতে পারে আপনার পুষ্টির ভান্ডার।
কারণ এতে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল ও এন্টি অক্সিডেন্ট যা আপনাকে সারাদিন কর্মক্ষম রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। নিয়মিত খালি পেটে এলোভেরা জুস খেলে হজমে সুবিধা হয় কারণ এতে রয়েছে এনজাইম নামক একটি বিশেষ উপাদান।
আরো পড়ুনঃ চুল পড়া রোধে মেথি ব্যবহারের উপকারিতা - নতুন চুল গজাতে মেথির ব্যবহার
এলোভেরায় আরো রয়েছে ভিটামিন সি, এ, ই, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফলিক এসিড যা শরীরে পুষ্টির যোগান দিয়ে থাকে পরিপূর্ণভাবে। এবং এতে ক্যালোরির পরিমাণ খুবই কম, তাই অ্যালোভেরার জুস পান করা যায় নিশ্চিন্তে। এলোভেরা পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি থাকায় ভেতর থেকে পুষ্টি জুগিয়ে শরীরকে রাখে হাইড্রেট। এছাড়া শরীর থেকে টক্সিক পদার্থ বের করে শরীরকে রাখে ঝরঝরে।
ওজন কমাতে এলোভেরার ব্যবহার জানুন
এলোভেরা আমাদের ত্বক, চুল এবং স্বাস্থ্য ভালো রাখার পাশাপাশি ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারণ এলোভেরায় এমন অনেক উপাদান রয়েছে যা ওজন কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ওজন কমানোর জন্য এলোভেরা জুস নিয়মিতভাবে ১৫ দিন পর্যন্ত একটি নিয়ম করে খেতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় খাবারের ১৫ মিনিট আগে এই জুস পান করলে। এটি নিয়ম মেনে পান করলে আপনাকে কাঙ্ক্ষিত ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
এলোভেরা এবং আমলকির যুগলবন্দীর উপকারিতা
এলোভেরার সাথে আমলকি দিয়ে চুলের যত্নে Hair Mask তৈরি করা যায়, যা চুলকে করবে ঘন কালো এবং স্বাস্থ্যজ্জ্বল। এজন্য এলোভেরা নিতে হবে দুই চা চামচ সাথে নিতে হবে আমলকির পেস্ট এক চা চামচ এবং আরও দিতে হবে পরিমাণ মতো নারিকেল তেল, ব্যাস তৈরি হয়ে গেল চুলের জন্য দারুন কার্যকরী Hair Mask. এই প্যাক টি মাসে অন্তত একবার ব্যবহার করলেই আপনি আপনার চুলের পার্থক্য বুঝতে পারবেন।
এলোভেরা এবং লেবুর ব্যবহার জানুন
এলোভেরা এবং লেবু একসাথে ত্বক এবং চুলে ব্যবহার করলে পেতে পারেন দারুন উপকার। এজন্য চুলের জন্য এলোভেরা নিতে হবে দুই চা চামচ এবং এক চা চামচ লেবুর রস, সাথে নিতে হবে পরিমাণ মতো নারকেল তেল। সবগুলো উপাদান ভালোভাবে মিক্সড করে হেয়ার মাস্ক তৈরি করে নিতে হবে। এই হেয়ার মাস্ক চুলে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করলেই চুলের পার্থক্য বুঝতে পারবেন। চুল হবে ঘন কালো এবং সিল্কি।
আরো পড়ুনঃ গরমে ত্বকের উজ্জ্বলতা রক্ষায় আইস কিউব এর আটটি ব্যবহার
ত্বকের যত্নে নিয়মিত এলোভেরা এবং লেবুর রস দিয়ে ফেসমাস্ক ব্যবহার করলে ত্বক হবে উজ্জ্বল এবং দাগ মুক্ত। এজন্য এক চা চামচ এলোভেরা জেল, আধা চা চামচ লেবুর রস এবং একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল দিয়ে ফেস মাস্ক তৈরি করে নিতে হবে। সপ্তাহে একদিন এই মাস্ক নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক হবে দাগমুক্ত এবং চকচকে।
এলোভেরা খাওয়ার অপকারিতা আছে কি
আমাদের ত্বক, চুল এবং স্বাস্থ্যের যত্নে এলোভেরা ব্যবহারের উপকারিতা আমরা জানলাম। কিন্তু এলোভেরার বিভিন্ন উপকারিতা থাকলেও এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। যেমনঃ এলোভেরা গাছের পাতা কাটার পর যে হলুদ রঙের রস বের হয় তাকে বলে ল্যাটিক্স। এই হলুদ রঙের রস শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর এবং এটি ব্যবহার করলে এলার্জি বা চুলকানি হতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত অ্যালোভেরা জুস পান করলে শরীরে পটাশিয়াম কমে যেতে পারে, ফলে সুগার লেভেল ফল করতে পারে।
গর্ভাবস্থায় একজন মহিলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। এই সময় খাবারে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে অনেক সচেতন থাকতে হয়। এলোভেরার বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান থাকলেও এলোভেরা জেল বা রসে থাকা কিছু যৌগ গর্ভাবস্থায় একজন মহিলার জন্য ভালো নাও হতে পারে। যদিও অল্প পরিমাণ খেতে পারলেও তা চিকিৎসকের পরামর্শ মত খাওয়া ভালো।
এলোভেরা শরীরের ভিতরে গিয়ে গ্লুকোজের পরিমাণ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই গর্ভাবস্থায় একজন মহিলা এলোভেরা জুস খেলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে মাথা ঘোরার সমস্যায় ভুগতে পারে, আবার অনেক সময় অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া এই জুস নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস হলে পরবর্তীতে কোন কারনে খাওয়া ছেড়ে দিলে কোষ্ঠকাঠি হতে পারে যা একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য খুবই ক্ষতিকর।
এছাড়া এলোভেরার জুস খেলে একজন গর্ভবতী মহিলার জরায়ু সংকোচন এর হার বৃদ্ধি পেতে পারে। যা গর্ভাবস্থায় খুবই খারাপ একটি অবস্থা বয়ে আনতে পারে। আবার যেসব মায়েরা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান তারা এই জুস খেলে এই জুসের কিছু যৌগ দুধের বুকের সাথে মিশে শিশুর অপরিণত হজম ব্যবস্থার ক্ষতি বয়ে আনতে পারে।
তাই গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ মত খুব অল্প পরিমাণ দিয়ে এই জুস পান করা যেতে পারে। কিন্তু গর্ভাবস্থায় এর উপকারিতা নিয়ে এখনো সত্যতা যাচাই করা হয়নি। তাই চিকিৎসক যদি না খাওয়ার পরামর্শ দেন তবে না খাওয়াই ভালো হবে।
পরিশেষে
ত্বক এবং চুলের যত্নে এলোভেরার বিভিন্ন ব্যবহার সেই সাথে ব্যবহারের ফলে উপকারিতা সম্পর্কে এ পোস্টে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এলোভেরা এমন একটি ঔষধি গাছ যা আমাদের সবার বাসায় কম বেশি রয়েছে। খুব কম পরিচর্যা করেও এই গাছ থেকে আমরা অনেক উপকার পেয়ে থাকি। এছাড়াও আমরা সহজেই বাজার থেকে এই উপকারী গাছের পাতাটি কিনে আনতে পারি।
আমি আমার নিজের ত্বক, চুলে এলোভেরা ব্যবহার করে উপকার পেয়েছি। আপনারাও অ্যালোভেরার ব্যবহারে উপকৃত হবেন আশা করি। হাতের কাছে পাওয়া সহজলভ্য এই গাছটি আমরা আমাদের দৈনন্দিন রূপচর্চায় এবং স্বাস্থ্য রক্ষায় নিয়মিত ব্যবহার করতে পারি।
passiondrivefiona র নীতিমালা মেনে comment করুন। প্রতিটি comment রিভিউ করা হয়;
comment url