ত্বককে জেল্লাদার করতে চালের গুড়া ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
ত্বককে জেল্লাদার করতে চালের গুড়ার ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানতে আগ্রহী হয়ে থাকবেন। চালের গুড়া রূপচর্চায় এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান, যা যে কোনো ধরনের ত্বকেই ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও আমরা জানবো চালের গুড়া দিয়ে গ্লাস স্কিন পাওয়ার ফেসিয়াল সম্পর্কে।
পোস্ট সূচীপত্রঃবর্তমানে চালের গুড়া ব্যবহার করে ত্বক সচেতন মানুষ নিজের ত্বকের যত্ন নিতে অনেক আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আজকে আমরা চালের গুড়া ব্যবহার করে কিভাবে নিজের ত্বকের যত্ন নেওয়া যায় ঘরে বসে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
ত্বকের যত্নে চালের গুড়া কেন ব্যবহার করব
রূপচর্চা করে ত্বককে জেল্লাদার করতে চালের গুড়া ব্যবহারের অনেক উপকারিতা থাকায় ত্বক সচেতন মানুষের কাছে দিন দিন তা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কারণ বর্তমানে রূপচর্চার জন্য সবাই এমন কিছু উপাদান খোঁজে যা প্রাকৃতিক এবং সব রকম কেমিক্যাল মুক্ত। রূপচর্চায় এমন একটি উপাদান হলো চালের গুড়া। তাই চালের গুড়া দিয়ে নিজের ত্বকের যত্ন নিতে চান অনেকে।
ত্বকের জন্য উপকারী বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান চালের গুড়ায় থাকায় ত্বকের যত্নে সবাই এটি ব্যবহার করতে পারবেন কোনরকম চিন্তা ছাড়াই। নিচে চালের গুড়া তে যে সকল উপকারী উপাদান রয়েছে আলোচনা করা হলোঃ
- চালের গুড়ায় রয়েছে প্রচুর ভিটামিন বি। আর এই ভিটামিন বি ত্বকের উপরিভাগের মৃত কোষগুলোকে সরাতে সাহায্য করে এবং নতুন কোষ তৈরিতে সহায়তা করে থাকে।
- চালের গুড়ায় রয়েছে উচ্চমানের পি এ ,বি এ। এই উপাদানটি সানস্ক্রিন হিসেবে খুব ভালো কাজ করে। তাই চালের গুড়া নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে মুক্ত থাকে।
- চালের গুড়া তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী যারা তাদের ত্বকের অতিরিক্ত সিবাম উৎপাদন রোধ করতে সহায়তা করে। ফলে ত্বক থাকে ব্রণ মুক্ত এবং ঝকঝকে।
- চালের গুড়ায় রয়েছে টাইরোসিনিস উপাদান। এই প্রাকৃতিক উপাদান ত্বকের মেলানিন উৎপাদন কমিয়ে ত্বককে কালো হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। তাই ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে চালের গুড়া ব্যবহার করতে পারেন নিশ্চিন্তে।
- চালের গুড়ায় রয়েছে এলান টইন নামক উপাদান। এই উপাদান ত্বকের সানবার্ন দূর করে এবং ত্বককে করে তুলে দাগমুক্ত এবং ঝকঝকে।
- চালের গুড়া নিয়মিত ব্যবহার ত্বকে কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়, ফলে ত্বক ঝুলে পড়া থেকে রক্ষা করে এবং ত্বক থাকে টানটান, যেমনটি আপনি চান।
চালের গুড়া প্রাকৃতিক উপাদান ভরপুর হওয়ায় কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। এ জন্য দিন দিন এর ব্যবহার বাড়ছে রূপ সচেতন মানুষের কাছে। যে কোনো ধরনের ত্বকের অধিকারী ব্যক্তি এই চালের গুড়া দিয়ে নিজ নিজ ত্বকের যত্ন নিতে পারেন বিভিন্নভাবে। এতে ত্বক থাকে সজীব ,সুন্দর এবং মসৃণ।
চালের গুড়া এবং বেসনের ফেসপ্যাক
ত্বকে উজ্জ্বলতা আনতে চালের গুড়া এবং বেসন দিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে মুখে ব্যবহার করলে অনেক উপকার মিলে। চালের গুড়া ত্বকের মৃত কোষগুলোকে সরিয়ে ভিতর থেকে ত্বক পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। আবার বেসনকে প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাই ত্বক পরিচর্যায় চালের গুড়া এবং বেসনের সাথে আরো কিছু উপাদান মিশিয়ে আমরা ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারি।
এই ফেসপ্যাক তৈরিতে আমাদের লাগবেঃ
- ১ চা চামচ চালের গুড়া
- এক চা চামচ বেসন
- হাফ চামচ মধু
- ২-৩ ফোঁটা লেবুর রস
প্রথমে চালের গুড়া এবং বেসন ভালোভাবে পরিষ্কার পানি দিয়ে মিক্সড করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি ইচ্ছে করলে গোলাপ জল ও ব্যবহার করতে পারেন। এরপর দিতে হবে মধু, সাথে দুই তিন ফোঁটা লেবুর রস। সবগুলো উপাদান ভালোভাবে মিক্সড করে পরিষ্কার মুখে ভালোভাবে এপ্লাই করতে হবে।
ত্বকে ভালোভাবে এপ্লাই করার পর ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে দিতে হবে। এই প্যাকটি পুরোপুরি শুকানো যাবে না। মুখে প্যাকটি হালকা শুকিয়ে গেলে পানি নিয়ে আস্তে আস্তে সারা মুখে রাব করতে হবে। এরপর পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এরপর মুখে ব্যবহার করতে হবে ভালো কোনো ময়শ্চারাইজার। এই প্যাকটি আপনি চাইলে সারা শরীরে ব্যবহার করতে পারবেন।
চালের গুড়া এবং হলুদের ফেসপ্যাক
চালের গুড়া দিয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে আমরা চালের গুড়া এবং হলুদের ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারি। চালের গুড়া এবং হলুদ দুইটাই প্রাকৃতিক উপাদান এবং আমাদের হাতের কাছে সহজে পাওয়া যায়। তাই আমরা এই দুটি উপাদান আমাদের ত্বক উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য কাজে লাগাতে পারি খুব সহজে।
চালের গুড়া ত্বককে গভীরভাবে পরিষ্কার করতে এবং ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সহায়তা করে থাকে। হলুদ আমাদের ত্বককে ফর্সা এবং দাগমুক্ত করতে সহায়তা করে। চালের গুড়া এবং হলুদের ফেসপ্যাকটি আমরা নিম্নোক্তভাবে তৈরি করতে পারি।
এই প্যাকটি তৈরি করতে আমাদের লাগবেঃ
- এক টেবিল চামচ চালের গুড়া
- ২ টেবিল চামচ টক দই
- হাফ টেবিল চামচ হলুদ গুড়া
- এক টেবিল চামচ মধু
সবগুলো উপাদান ভালোভাবে মিক্সড করে পরিষ্কার ত্বকে এবং গলায় এপ্লাই করতে হবে। ত্বকে এই মিশ্রণটি ১৫ মিনিট রাখার পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। একবার ব্যবহারেই আপনার ত্বকের পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবেন। এই ফেসপ্যাকটি কোন পরিষ্কার কাঁচের জারে ফ্রিজে এক সপ্তাহের জন্য সংরক্ষণ করতে পারবেন।
কিন্তু আমার মতে, সবকিছু ত্বকে টাটকা ব্যবহার করা ভালো। এ জন্য যে কোন ফেসপ্যাক তৈরি করে সাথে সাথে ব্যবহার করলে ভালো উপকার পাবেন।
চালের গুড়া এবং মসুর ডাল দিয়ে উজ্জ্বলতা
ত্বককে জেল্লাদার করতে চালের গুড়া এবং মসুর ডাল দিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে আমরা সহজে ব্যবহার করতে পারি। চালের গুড়ায় রয়েছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান আর মসুর ডালে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা ফ্রি রেডিকেলে এর বিরুদ্ধে লড়াই করে। ফলে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ হয়। এছাড়া ত্বকের যে কোন দাগ দূর করতেও সহায়তা করে থাকে।
তাই দাগমুক্ত ঝকঝকে ত্বক পেতে নিয়মিত এই ফেসপ্যাকটি আপনারা আপনাদের ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন।
এই ফেস প্যাকটি বানাতে যা যা লাগবেঃ
- এক চা চামচ চালের গুড়া
- এক চা চামচ মসুর ডালের গুড়া
- পরিমাণ মতো কাঁচা দুধ
- হাফ চা চামচ মধু
সবগুলো উপাদান ভালোভাবে মিক্সড করে তিন থেকে পাঁচ মিনিট রেখে দিতে হবে। কারণ এই সময়ের মধ্যে চালের গুড়া এবং মসুর ডালের গুড়া দুধের মধ্যে ভালোভাবে মিশে যাবে। এরপর মিশ্রণটি আবার ভালোভাবে মিশিয়ে নেয়ার পর যদি একটু ভারী মনে হয় তাহলে আর একটু দুধ দিয়ে মিক্সড করতে হবে। এখন মিশ্রণটি মুখে এবং গলায় এপ্লাই করতে হবে।
এই মিশ্রণটি ত্বকে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রাখার পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে দুইদিন আপনারা এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করলে উপকার লক্ষ্য করতে পারবেন। কিছুদিন ব্যবহারেই ত্বক হবে টানটান এবং দাগমুক্ত।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য চালের গুড়ার ফেসপ্যাক
তৈলাক্ত ত্বককে জেল্লা দার করতে চালের গুড়া দারুণ উপকারী একটি উপাদান। তাই চালের গুড়া দিয়ে ফেসপ্যাক ব্যবহার করে ত্বকে আসতে পারে দারুণ জেল্লা। এজন্য তৈলাক্ত ত্বকের জন্য চালের গুড়া হতে পারে আশীর্বাদ। তৈলাক্ত ত্বকে চালের গুড়া ব্যবহারে অতিরিক্ত সিবাম বা অয়েল উৎপাদনে বাধা দেয়। এছাড়া চালের গুড়া ত্বকের ভেতর থেকে ময়লা, জীবাণু এবং তেল বের করে নিয়ে আসে ফলে ত্বক থাকে ব্রণ মুক্ত।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য আমরা চালের গুঁড়ো দিয়ে সহজেই ফেসপ্যাক তৈরি করতে পারি। এই ফেসপ্যাকটি তৈরির জন্য আমাদের লাগবেঃ
- এক চা চামচ চালের গুড়া
- এক চা চামচ এলোভেরা জেল
- হাফ চা চামচ মধু
- এক চিমটি হলুদ গুঁড়া
সবগুলো উপাদান ভালোভাবে মিক্সড করে পরিষ্কার ত্বকে ভালোভাবে এপ্লাই করতে হবে। এই ফেস প্যাকটি মুখে ১৫ থেকে ২০মিনিট রেখে আলতো ভাবে মেসেজ করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এই ফেসপ্যাকটি একটি দারুন জাদুকরি ফেসপ্যাক। একবার ব্যবহারেই আপনার ত্বকে পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবেন।
চালের গুড়ার নাইট ক্রিম তৈরি করুন সহজে
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি এবং মসৃণ করতে চালের গুড়ার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। এজন্য চালের গুড়ার সাথে অল্প কিছু উপাদান মিশিয়ে আমরা ঘরে নাইট ক্রিম তৈরি করতে পারি সহজে। এ ক্রিমটি সব ধরনের ত্বকের জন্য উপযোগী বিশেষ করে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য খুবই ভালো একটি রাতে ব্যবহারের উপযোগী ক্রিম। এই ক্রিম তৈরির জন্য আমাদের লাগবে চাল ধোয়া পানি। চাল ধোয়া পানি কিভাবে তৈরি করতে হয় শেষ পর্যন্ত পড়লেই জানতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ চুল পড়া রোধে মেথি ব্যবহারের উপকারিতা - নতুন চুল গজাতে মেথির ব্যবহার
এই ক্রিম তৈরির জন্য ২ চা চামচ চাল ধোঁয়া পানির সাথে নিতে হবে দুই চা চামচ ভালো মানের এলোভেরা জেল। সাথে দিতে হবে কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন। সবগুলো উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে কাচের কৌটায় সংরক্ষণ করতে হবে। ফ্রিজে রেখে এই ক্রিমটি আপনারা সাত দিন পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন। রাতে মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে মুখে ক্রিম এপ্লাই করতে হবে। সকালে উঠে নরমাল পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেললেই পাবেন দারুন উপকারিতা।
চালের গুড়ার ফেসিয়াল করে পান গ্লাস স্কিন
চালের গুড়া দিয়ে ত্বকে জেল্লাভাব আনতে চালের গুড়ার ফেসিয়াল হতে পারে একটি উপকারী নাম। কারণ এই ফেসিয়ালটি আমরা ঘরে বসে নিজেরাই করতে পারি। যারা নিজের ত্বক সচেতন তারা মাসে একবার ফেসিয়াল করতে পার্লারে যান, তারা এই ফেসিয়াল করতে পারেন বাড়িতে। এই ফেসিয়াল নিয়মিত করলে আপনাকে দিবে দাগ মুক্ত, ঝকঝকে, ব্রণ মুক্ত একটি সুন্দর, সজীব মুখ।
বর্তমানে কোরিয়ানদের চালের গুড়া দিয়ে ফেসিয়াল অনেক জনপ্রিয়। আপনিও ঘরে বসে এই ফেসিয়ালটি করতে পারেন। আপনি যে কোন ত্বকের অধিকারী হোন না কেন এই ফেসিয়ালটি করতে পারেন নিশ্চিন্তে। কারণ এই ফেসিয়াল নরমাল, অয়েলি এবং শুষ্ক ত্বকের অধিকারী যারা সবার জন্যই পারফেক্ট একটি ফেসিয়াল। চালের গুড়া দিয়ে এই ফেসিয়াল করার জন্য আমাদের তিনটি ধাপ পার করতে হবে।
ত্বক ক্লিনজিং করা
প্রথম যে ধাপটি নিয়ে আমরা আলোচনা করব তা হল ক্লিনজিং। আমাদের ত্বকে যে কোনো ধরনের ক্রিম, মেকআপ নিখুঁতভাবে বসানোর জন্য ত্বককে ভালোভাবে প্রথমে ক্লিন করে নিতে হবে। না হলে কোন প্রোডাক্টট ত্বকে ভালোভাবে Absorb হতে পারবেনা। তাই ফেসিয়ালের প্রথম ধাপে আমাদের ত্বক ক্লিনজিং করতে হবে।
আর এই ক্লিনজার হিসেবে আমরা ব্যবহার করব চালের পানি। চালের পানিতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই। ভিটামিন সি ত্বকে কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায় এবং উজ্জ্বলতা নিয়ে আসে। ভিটামিন ই আমাদের ত্বকে আর্দ্রতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া চালের পানি ত্বকের পোরস গুলোকে মিনিমাইজ করতে সহায়তা করে থাকে।
এই ক্লিনজার তৈরির জন্য আমাদের লাগবে চালের পানি এবং সমপরিমাণ রোজ ওয়াটার। দুটি উপাদান ভালোভাবে মিক্সড করে কোন স্প্রে বোতলে নিতে হবে। পানি দিয়ে প্রথমে মুখ ধোয়ার পর এই স্প্রে বোতল থেকে ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে ত্বকে ১০ থেকে ১২ বার স্প্রে করতে হবে। তারপর হালকা হাতে ত্বকে মেসেজ করতে হবে।
এই প্রসেসটি পুনরায় করতে হবে অর্থাৎ বোতল থেকে মিশ্রণটি ত্বকে স্প্রে করতে হবে। আবার আলতো হাতে ত্বকে মেসেজ করতে হবে। এবার একটি কটন প্যাডে নিয়ে ত্বকে আলতো ভাবে ঘষতে হবে। এর ফলে ত্বকে থাকা সমস্ত ময়লা, তেল, জীবাণু ত্বকের গভীর থেকে পরিষ্কার হয়ে যাবে। এরপর পাঁচ থেকে ছয় মিনিট ত্বকে মিশ্রণটি রাখতে হবে। তারপর পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে নিলেই ত্বক ফেসিয়ালের পরবর্তী ধাপের জন্য একদম রেডি।
চালের পানি তৈরির পদ্ধতি জানুন
চালের পানি তৈরি করার জন্য আমাদের লাগবে হাফ কাপ চাল। এই চাল ভালোভাবে কোচলিয়ে তিনবার ধুয়ে নিতে হবে, যাতে চালে থাকা সব ধরনের ময়লা বের হয়ে চলে যেতে পারে। এই পরিষ্কার চাল গুলো চালের থেকে ডাবল পানিতে তিন থেকে চার ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে।
চার ঘণ্টা পর আপনারা যে হালকা ঘোলাটে পানি বা হালকা দুধের মত সাদা পানি পাবেন সেটাই হলো চাল ধোয়ার পানি। যা আমরা আমাদের এই ফেসিয়ালের ব্যবহার করব। এছাড়া এই চালের পানি আপনারা অন্য সময়ও ত্বকে ব্যবহার করতে পারবেন।
ডিপ ক্লিনজিং এর জন্য ত্বক Exfoliate করা
এই ফেসিয়ালের দ্বিতীয় ধাপে আমাদের ত্বককে ডিপ ক্লিনজিং এর জন্য Exfoliate করতে হবে। যাতে ত্বকের লোমকূপের ভিতর থাকা সমস্ত ময়লা জীবাণু বের হয়ে আসতে পারে। ত্বকে থাকা হোয়াইটহেড এবং ব্ল্যাকহেড সবকিছু দূর হতে পারে। এজন্য দরকার আমাদের একটি Scrub তৈরি করা।
এই স্ক্রাব তৈরির জন্য আমাদের লাগবে চালের গুড়া এবং এলোভেরা জেল। এলোভেরা জেল আপনি গাছ থেকে সংরক্ষণ করতে পারেন অথবা বাজারের যেকোনো ভালো মানের এলোভেরা জেল নিতে পারেন। এই স্ক্রাবটি খুব মৃদু হোওয়ায় যে কোন ধরনের ত্বকে ব্যবহার করতে পারবেন কোন সমস্যা ছাড়াই। এমনকি যাদের ত্বক খুব সংবেদনশীল, কোনরকম স্ক্রাব করা যায় না তারাও ব্যবহার করতে পারবেন।
একটি পরিষ্কার কাচের বাটিতে এক চামচ চালের গুড়া এবং এক চামচ এরোভেরা জেল নিয়ে ভালোভাবে মিক্সড করতে হবে। তারপর মুখ হালকা ভিজিয়ে মিশ্রণটি পুরো ত্বকে ভালোভাবে লাগাতে হবে। এরপর সার্কুলার মোসনে হালকা ভাবে মেসেজ করতে হবে। বিশেষ করে কপাল, নাকের চারপাশ ইত্যাদি ভালোভাবে মেসেজ করতে হবে যাতে হোয়াইটহেড, ব্ল্যাকহেড সব দূর হতে পারে।
স্ক্রাব টি ত্বকে পাঁচ থেকে ছয় মিনিট ভালোভাবে আলতো ভাবে মেসেজ করতে হবে। তারপর স্প্রে বোতলে থাকা চালের পানি এবং রোজ ওয়াটারে পানিটি স্প্রে করতে হবে। আবার দুই থেকে তিন মিনিট মেসেজ করে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। ফেসিয়ালের এই পর্যায়ে আপনার ত্বক হবে অনেক উজ্জ্বল এবং ঝকঝকে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য ফেস মাস্ক
এটি ফেসিয়ালের শেষ পর্যায়ে। স্ক্রাবিং এর ফলে ত্বকে যে পোরসগুলোর মুখ খুলে গিয়েছে তা বন্ধ করার জন্য এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখার জন্য এই ফেসপ্যাকটি ব্যবহার করতে হবে। এই ফেস মাস্ক তৈরির জন্য আমাদের লাগবে তিনটি উপাদান।
- এক চা চামচ চালের গুড়া
- এক চা চামচ মধু
- এক চা চামচ দই
সবগুলো উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে ত্বকে ব্রাশের সাহায্যে বা আঙ্গুলের সাহায্যে ভালোভাবে লাগাতে হবে। ত্বকে মিশ্রণটি লাগানোর ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর চালের গুড়া চালের পানি এবং রোজ ওয়াটার মিশ্রিত বোতল থেকে মুখে স্প্রে করতে হবে। এরপর আলতোভাবে পাঁচ থেকে ছয় মিনিট মুখে মেসেজ করতে হবে। এখন পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
চালের গুড়া দিয়ে এই ফেসিয়ালটি সব ধরনের ত্বকের জন্য উপযোগী। কারণ এখানে সব প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে, যা সব ধরনের কেমিক্যাল মুক্ত। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য এবং তা দীর্ঘ সময়ের জন্য ধরে রাখতে এই ফেসিয়ালটি আপনারা ১৫ দিনে একবার করতে পারেন। এছাড়া ইচ্ছে করলে সপ্তাহে একবার করতে পারবেন।
ত্বকের জন্য কোন চালের গুড়া ভালো
চালের গুড়া দিয়ে ত্বককে জ়েল্লাদার করতে, ত্বকের দাগ ছোপ দূর করতে,ত্বকের হারিয়ে যাওয়া উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে আমরা বিভিন্ন ধরনের ফেসপ্যাক বা বিভিন্নভাবে চালের গুড়া ব্যবহার করে উপকার পেতে পারি। এজন্য ত্বকে ব্যবহারের জন্য চালের গুড়া আমরা সব ধরনের ভালো মানের পরিষ্কার চাল থেকে তৈরি করা নিতে পারি।
আরো পড়ুনঃ ঢেঁকিছাটা লাল চালের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানলে অবাক হবেন
তবে আতপ চালের গুড়া ত্বকের জন্য বেশি ভালো হবে। এই চালের গুড়া আপনি বাজার থেকে কিনে আনতে পারেন অথবা নিজেই ঘরে তৈরি করতে পারেন। অনেক সময় ঘরেই থাকে আমাদের রূপচর্চার জন্য দরকারি চালের গুড়া। আপনি চাইলে এই চালের গুড়া দিয়েও আপনার ত্বক পরিচর্যা করতে পারেন নিয়মিত।
শুষ্ক ত্বকের জন্য চালের গুড়ার ফেসপ্যাক
চালের গুড়া দিয়ে ত্বক পরিচর্যার মাধ্যমে শুষ্ক ত্বকে জেল্লাভাব আনতে পারেন সহজে। শুষ্ক ত্বকের জন্য আমরা চালের গুড়া দিয়ে ফেসপ্যাক ব্যবহার করে উপকার পেতে পারি। চালের গুড়া ত্বকে থাকা মৃত কোষগুলোকে সরিয়ে ফেলতে সহায়তা করে এবং নতুন কোষ গজাতে সাহায্য করে। এজন্য আমরা এক চা চামচ চালের গুড়ার সাথে এক চা চামচ এলোভেরা জেল, এক চা চামচ মধু এবং দুই চিমটি হলুদ মিশে ফেসপ্যাক বানিয়ে ব্যবহার করতে পারি। এতে ত্বক হবে সুন্দর ,মসৃণ এবং ঝকঝকে।
চালের গুড়ার কোন অপকারিতা আছে কি
চালের গুড়া ব্যবহার করে ত্বক জেল্লাদার করতে চালের গুড়ার উপকারিতার কথা আমরা জানলাম। চালের গুড়ায় থাকা বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। তাছাড়া এটি প্রাকৃতিক এবং সহজলভ্য হওয়ায় সহজে আমরা রূপচর্চায় এই উপাদানটি ব্যবহার করতে পারি। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে উপকারী এই চালের গুড়া কারো জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
যাদের চালের গুড়ায় এলার্জি রয়েছে তাদের চালের গুড়া ত্বক পরিচর্যায় ব্যবহার না করাই ভালো হবে। কারণ এতে ত্বকে রেস হতে পারে, ত্বক চুলকাতে পারে এবং ফুলে যেতে পারে। এছাড়া অনেক পুরনো চালের গুড়া ত্বকে ব্যবহার না করাই ভালো হবে। এতে উপকার চেয়ে অপকারিতাই বেশি বয়ে আনবে।
আবার যাদের ব্রণের সমস্যা আছে তাদেরও চালের গুড়া ব্যবহার না করাই ভালো হবে। এছাড়া খুব বেশি শুষ্ক ত্বক হলে চালের গুড়া খুব পরিমিত ভাবে রূপচর্চায় রাখতে হবে।
পরিশেষে
চালের গুড়া দিয়ে ত্বক পরিচর্যার মাধ্যমে ত্বককে জেল্লাদার করতে এর উপকারিতা অপরিসীম। তাই বর্তমান সময়ে চালের গুড়া দিয়ে ত্বক পরিচর্যা করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি সহ, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে, ত্বককে দাগ মুক্ত এবং টানটান করতে চালের গুড়ার ব্যবহার অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কারণ এই প্রাকৃতিক উপাদানটি বিভিন্ন ভিটামিনে ভরপুর এবং সহজলভ্য।
তাছাড়া এটি পুরোপুরি কেমিক্যাল মুক্ত হওয়ায় যারা প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ত্বকের যত্ন নিতে চান তাদের কাছে এটি আশীর্বাদ। তাই আপনি আপনার ত্বক পরিচর্যার রুটিনে চালের গুড়া রাখতে পারেন রূপচর্চার একটি অন্যতম অংশ হিসেবে। চালের গুড়া যেহেতু প্রাকৃতিক উপাদান, তাই এটি কোনো রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই আপনার ত্বককে করবে দারুন জেল্লাদার।
passiondrivefiona র নীতিমালা মেনে comment করুন। প্রতিটি comment রিভিউ করা হয়;
comment url