করোসল গাছের পাতায় ফলে সত্যিই কি ক্যান্সারের কোষ ধ্বংসকারী উপাদান রয়েছে
করোসল গাছের পাতা এবং ফলে ক্যান্সার কোষের ধ্বংসকারী উপাদান রয়েছে বলে অনেকে দাবী করেন। করোসল গাছের পাতা এবং ফলে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে। এছাড়া জানবো এই গাছের পাতা এবং ফল খাওয়ার নিয়ম।
পোস্ট সূচীপত্রঃকরোসল গাছের ফল মূলতঃ আমাদের দেশের আতাফল এর মত কিছুটা। এই গাছের পাতা, ফল, বাকল ইত্যাদি ঔষধি গুনে ভরপুর। তাই বর্তমানে এই গাছের পাতা এবং ফল ক্যান্সারের কোষ ধ্বংসকারী হিসেবে অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
করোসল গাছের উৎপত্তি কোথায়
করোসল গাছের পাতা এবং ফলে ক্যান্সার কোষের ধ্বংস করার উপাদান রয়েছে। তবে এই গাছটি আমাদের দেশের কোন পরিচিত ফলের গাছ নয়। এই গাছটি মূলতঃ বেশি দেখা যায় আমাজন নদীর উপত্যকা দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে। এছাড়াও ব্রাজিল, অস্ট্রেলিইয়া, চায়না ইত্যাদি দেশেও এই গাছ দেখতে পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ ঔষধি গুনাগুন সম্পন্ন ভেষজ গাছ তেলাকুচার ১৫ টি উপকারিতা জানুন
আমাদের দেশে পরিচিত গাছ না হলেও বর্তমানে এই গাছের ঔষধি উপাদানের কথা বিবেচনা করে অনেকেই এই গাছের চাষ করছে। তবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই গাছের চাষ বেশি হচ্ছে বলে দাবি করা হয়। বর্তমানে ফেনী, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহের কিছু বাগানে এই গাছের চাষ ব্যক্তিগত উদ্যোগে হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে এই গাছ গ্র্যভিউলা, সাওয়ারশপ, গুয়ানামা, ব্রাজিলিয়ান পাও পাও ইত্যাদি নামে বেশি পরিচিত।
করোসল গাছের পাতা ফলে ক্যান্সার কোষ ধ্বংসকারী উপাদান
করোসল গাছের পাতা এবং ফলে যে ক্যান্সারের কোষ ধ্বংসকারী উপাদান রয়েছে বলে দাবি করা হয়, তার মূলে রয়েছে অ্যানোনাসিয়াস এস্ট্রোজেনিন নামক একটি যৌগের উপস্থিতির কারণে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, এই গাছের পাতা এবং ফলে এই যৌগের উপস্থিতি পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। ফলে এই গাছের পাতা এবং ফল ক্যান্সার আক্রান্ত কোন ব্যক্তি গ্রহণ করলে ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি হতে পারেনা।
মূলতঃ করোসল গাছের পাতা এবং ফলে এনোনাসিয়াস অ্যাস্ট্রোজেনিন উপাদান টি মানব দেহে ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি হতে বাধা দেয়। ফলে ক্যান্সারের মূল কারণ শরীরের কোন একটি কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এছাড়া ক্যান্সার কোষে প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করতে বাধা প্রদান করে থাকে এবং সাথে কোষে রক্ত প্রবাহের ক্ষেত্রেও বাধা প্রদান করে।
ক্যান্সারে আক্রান্ত কোন ব্যক্তি কে কেমোথেরাপি দেওয়া হয় ক্যান্সারের কোষ যাতে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হতে না পারে এজন্য। মূলতঃ কেমোথেরাপির মাধ্যমে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি বন্ধ করে দেয়া হয়, ফলে ক্যান্সার কোষ আর বাড়তে পারে না। করোসল গাছের পাতা এবং ফলের কথা আলোচনা করছি এতেও ক্যান্সারের কোষ কেমোথেরাপির মতো ধ্বংস করার ক্ষমতা রয়েছে।
গবেষণায় জানা যায় যে, করোসল গাছের পাতা এবং ফলে যে উপাদান রয়েছে তা কেমোথেরাপিতে যে অ্যাড্রিমিয়াসিন ব্যবহৃত হয় এর চেয়ে ১০,০০০ গুণ বেশি কার্যকরী। এছাড়া কেমোথেরাপির জন্য ক্যান্সার রোগীর যে চুল পড়ে টাক হওয়ার প্রবণতা দেখা যায় এই গাছের ফল এবং পাতা খেলে সেই সম্ভাবনাও নেই। এছাড়া অন্যান্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও নেই বলে উল্লেখ করা হয়।
এজন্যই মূলতঃ করোসল গাছের পাতা এবং ফল কে কেমোথেরাপি সাথে তুলনা করা হয়ে থাকে। এবং ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তি নিয়মিত করোসল গাছের পাতার রস এবং ফল খেলে কেমোথেরাপি দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
করোসল গাছের পাতা এবং ফল খাওয়ার নিয়ম
ক্যান্সার কোষ ধ্বংসকারী করোসল গাছের পাতা এবং ফল বিভিন্নভাবে খাওয়া যেতে পারে। করোসল গাছের পাতা সাধারণত শরবত বানিয়ে খাওয়ার কথা বলা হয়ে থাকে। এছাড়া অনেকে করোসল গাছের পাতা রস বানিয়ে খেয়ে থাকেন। অনেকে আবার পাতা পানি দিয়ে ফুটিয়ে চায়ের মত পান করে থাকেন।
করোসল গাছের ফলের উপরের কাটাযুক্ত অংশ ফেলে দিয়ে ভেতরের সাদা নরম অংশ খাওয়া হয়। এই ফল সাধারণত এসিডিক এবং সুগন্ধযুক্ত হয়ে থাকে। ফলের ভেতরের নরম অংশ চামচ দিয়ে তুলে খাওয়া হয়ে থাকে। তবে দিনে কতবার কতটুকু পরিমান পান করতে হবে বা খেতে হবে সে ব্যাপারে নিদিষ্ট কোনো ব্যাখা পাওয়া যায়নি।
করোসল গাছের পাতা এবং ফলের অন্যান্য উপকারিতা
করোসল গাছের পাতা এবং ফল শুধু ক্যান্সারের কোষ কে বৃদ্ধি ব্যাহত করে না বরং এই গাছের পাতা এবং ফল খেলে আরো অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে বলে দাবি করা হয়। এই গাছের পাতা এবং ফলে ভিটামিন সি থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক। এছাড়া রক্ত কে পরিশোধনকারী হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।
আরো পড়ুন: পেয়ারা পাতার সাস্থ্য উপকারিতা সম্পরকে জানুন
এই গাছের পাতা এবং ফল, বাকল ইত্যাদি গ্রহণের ফলে কিডনি এবং হার্ট ভালো থাকে। এছাড়াও লিভারকে পরিষ্কার করার ক্ষমতা রয়েছে বলে দাবি করা হয়। এজন্য এই গাছের পাতা এবং ফলের আমেরিকার মত দেশগুলোতে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। করোসল গাছ থেকে তৈরি তেল ব্রণ এবং ফোড়ায় ব্যবহারের ফলে বিশেষ উপকারিতা মিলেছে। কারণ এই তেলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
এজন্য এই তেল এন্টি এজিং উপাদান হিসেবে আমাদের ত্বকে সরাসরি ব্যবহার করা যায়। এছাড়া একজিমা এবং সিরোসিসের মতো রোগে এই তেল অত্যন্ত কার্যকরী বলে দাবি করা হয়। ত্বক শুষ্ক হওয়ার জন্য যে ফাটা হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, তা এই তেল ব্যবহারে অনেকটাই দূর করা সম্ভব। এই তেল সাধারণত লাইট ওয়েট এবং হালকা সুগন্ধি যুক্ত হয়ে থাকে।
করোসল গাছের ফল কেমন হয়ে থাকে
করোসল গাছে যে ফল ধরে সেই ফলের ওজন সাধারণত ২৫০ গ্রামের মতো হয়ে থাকে। এই ফল দেখতে অনেকটা আমাদের দেশের আতা ফলের মত। উপরে কাঁঠালের মতো কাটাযুক্ত সবুজ আবরণ রয়েছে এবং ভিতরে সাদা বিচি সহ নরম অংশ রয়েছে যা খাওয়া হয়ে থাকে। তবে এই ফলের বিচি বিষাক্ত বলা হয়ে থাকে। এজন্য এই ফল খাওয়ার সময় বিচি ফেলে দিয়ে ভেতরের অংশ চামচ দিয়ে তুলে খেতে হয়।
করোসল গাছের ফলের বর্তমান দাম
করোসল গাছের ফল ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ব্যাহত করার ক্ষমতা থাকায়, বর্তমানে এই ফলের দাম উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ফলের চাহিদার কথা বিবেচনা করে অনেক ব্যবসায়ী বা যারা এই গাছের চাষ করে থাকেন তারা এক একটি ফলের দাম ৪৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করেন। এই গাছের ফল সাধারণত ৫০০ গ্রাম থেকে এক কেজি পরিমাণ হয়ে থাকে।
করোসল গাছের পাতা এবং ফল কি সত্যি ক্যান্সার কোষ বৃদ্ধি বাধা দেয়
বর্তমানে করোসল গাছের পাতা এবং ফল ক্যান্সার কোষ কে বৃদ্ধিতে বাধা দিতে পারে বা ধ্বংস করতে পারে বলে অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কিছু ব্যক্তি এই গাছের পাতা এবং ফল খাওয়ার ফলে ক্যান্সার রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন বলে দাবি করা হয়। কিন্তু এই গাছের পাতা এবং ফল কি আদৌ ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা দিতে পারে?
এই সম্পর্কে ইউ,কে র একটি ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট জানায় যে, করোসল বা গ্রাভোলা গাছের পাতা এবং ফল খেলে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস হয় কিনা এ ব্যাপারে এখনো বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়নি। এ সম্পর্কে আরো বলা হয়, কিছু ধরনের লিভার এবং স্তন ক্যান্সারের কিছু কোষ কে ধ্বংস করার মতো কাজ হয়তো করে থাকে। তবে এজন্য আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ সাবুদানা খাওয়ার যত উপকারিতা - সাবুদানা কি থেকে তইরি হয়
তাই আপনারা এই গাছের ফল এবং পাতা ক্যান্সার প্রতিরোধের উপাদান হিসেবে খাওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই সচেতন থাকবেন এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মতো গ্রহণ করা একটি উপযুক্ত সিদ্ধান্ত হবে।
পরিশেষে
বর্তমানে করোসল বা গ্র্যাভিউলা গাছের পাতা এবং ফল খেলে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস হতে পারে, এ বিষয়ে কিছু মানুষ দাবি করলেও, এর সত্যতা প্রমাণের জন্য আরো অনেক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। যদি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়, তাহলেই ক্যান্সারের মতো একটি মরণ ব্যাধিকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।
তবে আমাদের দেশের অনেক এলাকায় নিজ উদ্যোগে এই গাছের চাষ হোওয়ায় ভালো একটি নতুন কিছুর দ্বার উন্মোচনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আশা করি এ ব্যাপারে সবাই নিজের, পরিবারের এবং আশেপাশের মানুষকে সচেতন রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।
passiondrivefiona র নীতিমালা মেনে comment করুন। প্রতিটি comment রিভিউ করা হয়;
comment url