পাকা আমের উপকারিতা - ডায়াবেটিস রোগীদের পাকা আম খাওয়ার নিয়ম
আমের মৌসুমে সুস্বাদু এবং রসালো পাকা আম খেলে মিলে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের আম খাওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। প্রতিদিন কতটুকু পরিমাণ আম খেতে পারবেন তা জানাটা জরুরী। এছাড়া আমরা জানবো কেমিক্যাল মুক্ত আম চেনার উপায়।
পোস্ট সূচীপত্রঃছোট বড় সবাই পাকা আম খেতে ভালোবাসে। আমের এই মৌসুমে বিভিন্ন জাতের আম বাজারে পাওয়া যায়। আমের স্বাদ এবং গন্ধ সবাইকে মন ভরিয়ে দেয়। প্রতিদিন আম খাওয়ার ফলে আমরা পেতে পারি অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের অবশ্যই দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমাণ আম খাওয়ার বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ পাকা আমের উপকারিতা - ডায়াবেটিস রোগীদের আম খাওয়ার নিয়ম
- পাকা আমে কি কি ভিটামিন রয়েছে
- পাকা আম খাওয়ার উপকারিতা
- ডায়াবেটিস রোগীরা আম খাবেন যেভাবে
- অতিরিক্ত পাকা আম খাওয়ার অন্যান্য অপকারিতা
- পাকা আম খাওয়ার উপযুক্ত সময়
- কেমিক্যাল মুক্ত আম চেনার উপায়
- পরিশেষে
পাকা আমে কি কি ভিটামিন রয়েছে
পাকা আম খুবই সুস্বাদু এবং বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে ভরপুর একটি ফল হওয়ায়, পাকা আম খাওয়ার উপকারিতা অনেক। আম খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমে রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিন এবং পুষ্টি উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে। তাই আমের এই মৌসুমে নিয়মিত আম পাতে রাখলে, বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান আমরা সহজে পেতে পারি। আম বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, খনিজ লবণ এর ভরপুর ভান্ডার।
আরো পড়ুনঃ পেয়ারা পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা
পাকা আমে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি, প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি৬, প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, পটাশিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, থায়ামিন, খনিজ লবন, প্রোটিন, সেচুরেটেড ফ্যাট, ভিটামিন বি১, বি২, প্রচুর পরিমাণে শ্বেতসার।
পাকা আম খাওয়ার উপকারিতা
পাকা আমে বিভিন্ন ভিটামিন পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকায়, আমের এই মৌসুমে নিয়মিত আম খেলে আমরা অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে পারি। প্রতিদিন আম খাওয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীরের ভিটামিনের অনেকটাই সহজে পূরণ করতে পারি।
আমের এই মৌসুমে ছোট থেকে বড় সবাই আম খেতে ভালবাসি। আম খাওয়ার ফলে আমরা যে সকল উপকারিতা পেয়ে থাকি তা এক নজর দেখে নিন।
- আম ভিটামিন এ র একটি অন্যতম উৎস। তাই নিয়মিত আম খেলে আমাদের চোখের দৃষ্টি ভালো হয় এবং চোখের অন্যান্য সমস্যা থেকেও আমরা দূরে থাকতে পারি।
- আমে রয়েছে ভিটামিন সি পর্যাপ্ত পরিমাণে। তাই নিয়মিত আম খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, শরীরে ভিটামিন সি র চাহিদা অনেকটাই পূরণ হয়।
- আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। তাই আমের এই সময়ে নিয়মিত আম খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়।
- আমে থাকা ভিটামিন সি আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। কারণ ভিটামিন সি আমাদের ত্বকের কোলাজেন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে। ফলে ত্বক থাকে টানটান এবং মসৃণ।
- আমে থাকা ভিটামিন সি এবং ই আমাদের চুলের বৃদ্ধি সহ যে কোন সমস্যা দূর করণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- পাকা আমে চিনির পরিমাণ অনেক বেশি থাকায়, যারা ওজন বাড়াতে চান তারা নিয়মিত ডায়েটে আম রাখতে পারেন।
- আমে রয়েছে আয়রন এবং পটাশিয়াম, ফলে নিয়মিত আম খেলে শরীরের রক্তস্বল্পতা সমস্যা দূর করা সম্ভব হয়।
- আমে রয়েছি ভিটামিন সি, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভরপুর ভান্ডার। ফলে কোলন, স্তন, প্রোস্টেট ক্যান্সার সহ অন্যান্য ক্যান্সার রোধে সহায়তা করে থাকে।
- আমে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফলে নিয়মিত আম খেলে হাড় এবং দাঁত মজবুত হতে সহায়তা করে।
- আমে থাকা এনজাইমগুলো প্রোটিন উপাদানকে ভাঙতে সহায়তা করে। ফলে পাকস্থলীর যে কোন সমস্যা থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়।
- পাকা আমে লেপটিন নামক উপাদান থাকায়, পাকা আম খাওয়ার ফলে অনেকক্ষণ পেট ভরার অনুভূতি দেয়, ফলে অতিরিক্ত খাওয়া থেকে আমাদের বিরত রাখে এবং ক্যালোরি বার্ন করতে সহায়তা করে। তাই যারা অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান তারা ডাইটিসিয়ানের পরামর্শে দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমাণ আম ডায়েটে রাখতে পারেন।
- এছাড়া বলা হয় যে, পাকা আমে থাকা ফাইবার এবং চর্বি, শরীরের অতিরিক্ত চর্বি দূর করতে সহায়তা করে।
ডায়াবেটিস রোগীরা আম খাবেন যেভাবে
অতিরিক্ত পাকা আম খাওয়ার অন্যান্য অপকারিতা
- অতিরিক্ত পাকা আম খেলে পেটের সমস্যা যেমনঃ ডায়রিয়া, পেট ফাঁপা, বদহজম ইত্যাদি হতে পারে। তাই অবশ্যই নিয়ম মেনে আম খাওয়া উচিত।
- পাকা আমে যেহেতু শর্করা এবং ক্যালোরি পরিমাণ খুবই বেশি, তাই নিয়মিত অতিরিক্ত পাকা আম খেলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই যারা ওজন বৃদ্ধির সমস্যায় ভুগছেন, তাদের দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমাণ আম ডায়েটে রাখতে হবে।
- অনেকের ক্ষেত্রে পাকা আম খাওয়ার ফলে এলার্জি প্রবণতা দেখা দিতে পারে। আমে প্রোটিন লেটেক্স নামক উপাদান থাকায় কোন কোন ব্যক্তির জন্য এলার্জির জনিত অস্বস্তিকর অবস্থা হতে পারে।
- আমে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকায় রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রেও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- আমি যদিও ফাইবারের পরিমাণ বেশি কিন্তু কোন কোন জাতের আমে ফাইবার এর পরিমাণ খুবই কম। তাই আম খাওয়ার সাথে সাথে আপনাকে অন্যান্য ফাইবার যুক্ত খাবার ডায়েটে রাখতে হবে।
- বলা হয় যে, আম খেলে শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তাই প্রতিদিনের ডায়েটে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আম রাখতে হবে।
- যারা বাতের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমাণ আম ডায়েটে রাখতে হবে। অতিরিক্ত পাকা আম খেলে তাদের এই সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে।
- অনেক সময়ই কারো কারো ক্ষেত্রে আমি থাকা ছত্রাক শরীরে ভেতরে গিয়ে জ্বরের কারণ হতে পারে। এছাড়া আমবাত এক ধরনের ত্বকের সমস্যা যেমনঃ চুলকানি, ত্বকে ফোস্কা, ত্বক লালচে হয়ে যাওয়া। ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
আম খাওয়ার উপযুক্ত সময়
পাকা আম নিয়ে সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন এবং উত্তর
কেমিক্যাল মুক্ত আম চেনার উপায়
- বাসায়যে স্থান থেকে আম কিনবেন খেয়াল করবেন আম রাখার জায়গায় মাছি ঘোরাফেরা করছে কিনা। যদি আশেপাশে মাছি দেখতে পান তাহলে বুঝবেন আমটি কেমিক্যাল মুক্ত। কারণ ক্যামিকেল দেয়া আমে কখনোই মাছি বসবে না।
- কেমিক্যাল মুক্ত পাকা আম চেনার আরেকটি উপায় হল, আমের গায়ে দাগ থাকতে পারে এবং উপরের ভাগ কখনোই মসৃণ হবে না। কিন্তু কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো আম উপরের দিকটা সুন্দর এবং মসৃণ দেখতে হয়।
- কেমিক্যাল মুক্ত আমচেনার হ্যালো আরেকটি উপায় হল, আম টি নাকের কাছে নিয়ে ধরলে মিষ্টি সুঘ্রান পাবেন। কিন্তু কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো আমে কখনোই সুঘ্রাণ বের হবে না।
- কেমিক্যাল মুক্ত গাছ পাকা আম কাটলে ভেতরটা লালচে হলুদ রংয়ের হয়ে থাকে। কিন্তু কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো আম ভেতরটা হালকা হলুদ বা সাদাটে রঙের হয়ে থাকে।
- গাছ পাকা কেমিক্যাল মুক্ত পাকা আম অনেক রসালো হয়ে থাকে। কিন্তু কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো আম উপর থেকে দেখে পাকা মনে হলেও ভেতরটা শক্ত শক্ত থাকবে এবং অতটা রসালো হবে না।
- আমের বোটা যদি কুঁচকানো থাকে তাহলে বুঝতে হবে এটি কেমিক্যাল দিয়ে পাকা নাম।
- গাছ পাকা কেমিক্যাল মুক্ত আম কেনার পর পানিতে ডুবিয়ে রাখলে আমটি পানিতে ডুবে যাবে। এটি দেখেও বুঝতে পারবেন আমটি কেমিক্যাল মুক্ত কিনা।
পরিশেষে
গ্রীষ্মকালীন ফল পাকা আমের উপকারিতা অনেক। সুস্বাদু, রসালো এবং লোভনীয় মিষ্টি এই ফলটি পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই ফলটি খেলে রসনার তৃপ্তি মিলে। এই ফলটি আমরা এর স্বাদ, সুঘ্রাণ এবং মিষ্টির জন্যই খেতে পছন্দ করলেও, এই ফলটি নিয়মিত খাওয়ার ফলে পাওয়া যায় অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা।
তবে কিছু কিছু ব্যক্তির জন্য অবশ্যই পাকা আম খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে, এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মত নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্রহণ করতে হবে। তবেই আমরা এর সুফল পুরোপুরি ভাবে ভোগ করতে পারবো।
passiondrivefiona র নীতিমালা মেনে comment করুন। প্রতিটি comment রিভিউ করা হয়;
comment url