ত্বক চুলের যত্নে পেয়ারা পাতার কার্যকারিতা - পেয়ারা পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা

 

পেয়ারা পাতা আমাদের ত্বক এবং চুলের যত্নে দারুন কার্যকরী। কারন শুধু পেয়ারায় নয় এই পেয়ারা পাতায়ও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। এছাড়া আজকের পোস্টে পেয়ারা পাতার বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জানব।

ইমেজ

পোস্ট সূচীপত্রঃপেয়ারা আমাদের সবার পরিচিত পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল। পেয়ারা খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। পেয়ারা যেমন পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ তেমনি পেয়ারা পাতাও কম যায় না। তাই দিনে দিনে পেয়ারা পাতার ব্যবহার সচেতন মানুষের কাছে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ত্বকের যত্নে পেয়ারা পাতার ব্যবহার

ত্বকের যত্নে পেয়ারা পাতা দারুন কার্যকরী একটি উপাদান। পেয়ারা পাতা এন্টি অক্সিডেন্ট এ ভরপুর হওয়ায় ত্বকে যেকোনো ধরনের সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া পেয়ারা পাতায় রয়েছে পটাশিয়াম এবং ফলিক এসিড যা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। তাই সুন্দর, মসৃণ এবং স্বাস্থ্যজ্জ্বল ত্বক পেতে পেয়ারা পাতা ব্যবহার করতে পারেন আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী।

তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে পেয়ারা পাতা

তৈলাক্ত ত্বকের একটি প্রধান সমস্যা হল ত্বক হতে অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ হওয়া। ফলে ত্বক দেখা যায় নির্জীব এবং মলিন। এছাড়া এ কারণে ব্রনের আবির্ভাব তৈলাক্ত ত্বকে বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে এই গরমে তৈলাক্ত ত্বকে তেল নিঃসরণ বেশি হওয়ায় এই সমস্যায় ভুগে থাকেন বেশি। তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী যারা তারা এই পেয়ারা পাতার প্যাক বানিয়ে ব্যবহার করে উপকার পেতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ গরমে ত্বকের উজ্জ্বলতা রক্ষায় আইস কিউব আটটি কার্যকরী ব্যবহার

কারণ এই পেয়ারা পাতার প্যাক ত্বক হতে অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ হতে বাধা সৃষ্টি করে। এজন্য নিয়মিত পেয়ারা পাতার প্যাক ত্বকে ব্যবহার করলে অনেকটাই এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। পেয়ারা পাতার প্যাক বানানোর জন্য আমাদের এক মুঠো পেয়ারা পাতা ভালোভাবে পানি দিয়ে পরিষ্কার করার পর পাটায় বেটে নিতে পারেন বা ব্লেন্ড করে নিলেও হবে।

এই পেয়ারা পাতার পেস্টের সাথে আমাদের হাফ চা চামচ লেবুর রস ভালোভাবে মিক্সড করে পরিষ্কার ত্বকে এপ্লাই করতে হবে। মুখে এই ফেসপ্যাকটি ১০ থেকে ১৫ মিনিট রাখার পর আলতো ভাবে ঘষে ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত এই প্যাক ব্যবহারে  ত্বক হবে মসৃণ এবং সুন্দর। এছাড়া ত্বক পরিষ্কার রাখতেও এই প্যাকটি দারুন কার্যকরী।

পেয়ারা পাতার টোনার বা মিস্ট

পেয়ারা পাতা দিয়ে দারুন কার্যকারী টোনার বা মিস্ট তৈরি করা যায়। যা যে কোন ত্বকের জন্য উপকারী। এজন্য এক মুঠো পেয়ারা পাতা ভালোভাবে পরিষ্কার করার পর এক মগ পানিতে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর এই পানীয় টি ঠান্ডা হলে কোন স্প্রে বোতলে ভরে নিতে হবে। গোসলের পর বা ত্বক পরিষ্কার করার পর এই মিশ্রণটি ত্বকে স্প্রে করলেই হবে।

আপনার ত্বক যদি সেনসিটিভ বা বেশি সংবেদনশীল হয়ে থাকে তাহলে এই টোনার আপনি নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া আপনার ত্বকে যদি ব্রণ থাকে তাহলে এই পানির সাথে দুই তিন ফোঁটা টি ট্রি ওয়েল মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বক হবে ব্রণ মুক্ত। এছাড়া যে কোনো জায়গায় মশা বা পোকামাকড় কামড়ালে এই পেয়ারা পাতার পানি ব্যবহার করতে পারেন জ্বালা ভাব কমানোর জন্য।

ইমেজ

ব্রণ মুক্ত উজ্জ্বল ত্বকের জন্য পেয়ারা পাতা

ব্রণ মুক্ত সুন্দর, উজ্জ্বল ত্বকের জন্য এবং ত্বক হতে ব্ল্যাকহেড, হোয়াইটহেড দূর করে মসৃণ ত্বক পেতে নিয়মিত পেয়ারা পাতা ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য কয়েকটি পেয়ারা পাতা ভালোভাবে ধুয়ে পাটায় বেটে বা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে পেস্ট বানাতে হবে। এক টেবিল চামচ এলোভেরা জেল ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। সাথে দিতে পারেন এক চিমটি কস্তুরী হলুদ।

এই মিশ্রণটি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ত্বকে ব্যবহার করলে ভালো উপকার পাবেন। ত্বক পানি দিয়ে ধোয়ার পর এই প্যাকটি সারা মুখে এপ্লাই করতে হবে। প্যাকটি মুখে শুকিয়ে আসলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য এই প্যাকটি নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন। 

চুলের যত্নে পেয়ারা পাতার ব্যবহার

চুলের যত্নেও পেয়ারা পাতার পুষ্টি উপাদান অনেক কার্যকরী। চুলের বিভিন্ন সমস্যা যেমনঃ চুল পড়া বন্ধ করতে, নতুন চুল গজানোর জন্য, মাথার তালু পরিষ্কার করতে পেয়ারা পাতা ব্যবহার করা যায় বিভিন্নভাবে।

পেয়ারার মত পেয়ারা পাতায়ও রয়েছে ভিটামিন সি এবং বি যা চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ভিটামিন সি কোলাজেন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে থাকে, ফলে চুলের বৃদ্ধি ঘটে খুব সহজে। পেয়ারা পাতায় থাকা ভিটামিন সি এন্টিঅক্সিডেন্টের ভান্ডার, ফলে নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে থাকে। এছাড়া এর এন্টি ইনফ্লামেটরি এবং এন্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।

এছাড়া পেয়ারা পাতায় থাকা লাইকোপিন নামক উপাদান ইউবি রশ্মি থেকে আমাদের মাথার ত্বক এবং চুলকে রক্ষা করে, ফলে চুল রুক্ষতা এবং শুষ্কতা থেকে রক্ষা পায় এবং চুল থাকে স্বাস্থ্যজ্জল এবং সুন্দর। চুলের যত্নে আপনি নিয়মিত পেয়ারা পাতার মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন। পেয়ারা পাতার মিশ্রণটি নিম্নোক্তভাবে তৈরি করতে পারেনঃ

এই পেয়ারা পাতার মিশ্রণ তৈরি করার জন্য আপনার লাগবে এক মুঠো পরিষ্কার পেয়ারা পাতা এবং এক লিটার পানি। চুলায় একটি পাত্রে পানি এবং পেয়ারা পাতা নিয়ে বিশ মিনিটের মত মিডিয়াম আচে ফুটাতে হবে। ফুটানোর পর মিশ্রণটিকে ঠান্ডা হতে দিতে হবে। ভালো ফলাফল পেতে এই মিশ্রণটি আপনার পরিষ্কার মাথার ত্বকে ব্যবহার করতে হবে।

আরো পড়ুনঃ ফুলকপি বাঁধাকপির যত পুষ্টিগুণ - ফুলকপি বাঁধাকপি সারা বছর সংরক্ষণ উপায়

মিশ্রণটি ঠান্ডা হওয়ার পর মাথার চুল ভাগ করে গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত সমান ভাবে এপ্লাই করতে হবে। এপ্লাই করার পর ১ থেকে দেড় ঘন্টা চুলে রেখে নরমাল পানি দিয়ে বা হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে মাথার ত্বক থেকে চুল পর্যন্ত ধুয়ে ফেলতে হবে। ভালো ফলাফলের জন্য আপনি এই মিশ্রণটি মাথার ত্বকে দেয়ার পর হালকা হাতে ৫ থেকে ১০ মিনিটে মত ম্যাসাজ করতে পারেন।

পেয়ারা পাতার এই মিশ্রণটি আপনি যদি চুল পড়া রোধের জন্য ব্যবহার করতে চান তাহলে সপ্তাহে তিনবার ব্যবহার করতে পারেন। আর চুলের বৃদ্ধি দ্রুত করার জন্য এবং চুলকে শাইনি করার জন্য ব্যবহার করেন, তাহলে সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করলেই হবে। এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক হওয়ায় পুরোপুরি কেমিক্যাল মুক্ত, ফলে আপনার চুলের যত্নে আপনি নিয়মিত পেয়ারা পাতার মিশ্রণ টি ব্যবহার করতে পারেন।

দাঁতের যত্নে পেয়ারা পাতা ব্যবহার

শুধু ত্বক এবং চুলের যত্নেই পেয়ারা পাতা কার্যকরী নয়, পেয়ারা পাতায় থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা থেকেও মুক্তি পেতে সহায়তা করে। দাঁতের যত্নে পেয়ারা পাতা বিভিন্নভাবে আমরা ব্যবহার করতে পারি। পেয়ারা পাতায় থাকা এন্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান দাঁত ব্যথা, মাড়ি ফুলে যাওয়া, মাড়ি থেকে রক্ত পড়া রোধ করতে সহায়তা করে থাকে। 

এজন্য পেয়ারা পাতা পেস্ট করে দাঁত মাজতে পারেন, বা দুই একটা পেয়ারা পাতা ধুয়ে পরিষ্কার করে লবণ দিয়ে চিবুতে পারেন। বর্তমানে টুথপেস্ট বা মাউথ ওয়াশের কিছু উপাদান হিসেবেও পেয়ারা পাতা ব্যবহার হয়ে থাকে। এছাড়া গলা ব্যথায় পেয়ারা পাতা ফুটানো পানি দিয়ে গার্গল করলে উপকার মিলে।

আরো পড়ুনঃ সহজ উপায়ে ওজন কমানোর কাঁচকলা ডায়েট সম্পর্কে জানুন

পেয়ারা পাতা দিয়ে তৈরি চা নিয়মিত পান করলে দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে সহজে। এই চা দাঁত কে শক্ত মজবুত করতে এবং পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে। এজন্য দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে পেয়ারা পাতার ব্যবহার অনেক আগে থেকেই চলে আসছে।

 সুস্বাস্থ্য রক্ষায় পেয়ারা পাতার ব্যবহার

আমরা সবাই জানি স্বাস্থ্য রক্ষায় পেয়ারা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে। পেয়ারা পাতার সঠিক ব্যবহার আমাদের শরীরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপকার বয়ে নিয়ে আসে। এক্ষেত্রে পেয়ারা পাতার সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জানতে হবে, তাহলেই আমরা এ থেকে যথাযথ উপকার পেতে পারি।

কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি মেলেঃ পেয়ারা পাতায় রয়েছে লেকসেটিভ উপাদান যা আমাদের শরীরে ভেতরে গিয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। তাই যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত পেয়ারা পাতা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে পারেন সহজে। এক্ষেত্রে আপনি পেয়ারা পাতা পরিস্কার পানিতে ধুয়ে লবণ দিয়ে চিবিয়ে খেতে পারেন বা পেয়ারা পাতার রস করে খেলেও উপকার পাবেন।

ওজন কমাতে সহায়তা করেঃ পেয়ারা পাতায় রয়েছে পর্যাপ্ত ফাইবার। পেয়ারা পাতায় থাকা ফাইবার মেটাবলিজমের হার বাড়াতে সহায়তা করে। এছাড়া এই পাতার অন্যান্য পুষ্টিগুণের ফলে সহজে ক্ষুধা পায় না এবং এর ফলে শরীরের অতিরিক্ত মেদ  ঝরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই যারা অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান তারা পেয়ারা পাতা খেতে পারেন নিয়মিত।

পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করেঃ পেয়ারা পাতা হজমেও সহায়তা করে থাকে। তাই যারা গ্যাস, পেট ফাঁপা বা এসিডিটির সমস্যায় ভুগেন তারা পেয়ারা পাতা খেয়ে দেখতে পারেন। পেয়ারা পাতা হজমে সহায়তা করার কারণে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় সহজে। এছাড়া পেয়ারা পাতা ডায়রিয়া রোগের মূল ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলতে সহায়তা করে, ফলে এ রোগ থেকে মুক্তির জন্য পেয়ারা পাতা খেতে পারেন।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পেয়ারা পাতাঃ ডায়াবেটিসের মত রোগে পেয়ারা পাতা হতে পারে দারুন উপকারী। পেয়ারা পাতায় থাকা পুষ্টি উপাদান রক্তে দুই ধরনের সুগার সুক্রোজ এবং মেলাটোস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। এজন্য আপনি খাওয়ার পর পেয়ারা পাতার চা পান করতে পারেন নিয়মিত। 

কোলেস্টেরনের নিয়ন্ত্রণে পেয়ারা পাতার ব্যবহারঃ পেয়ারা পাতা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে থাকে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত আট সপ্তাহ ধরে পেয়ারা পাতার চা পান করলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে অনেকটাই। এছাড়া পেয়ারা পাতায় থাকা লাইকোপিন নামক উপাদান শরীরের ব্রেস্ট ক্যান্সার, ওরাল ক্যান্সার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।

চোখের জন্য পেয়ারা পাতার ব্যবহারঃ পেয়ারা পাতায় রয়েছে ভিটামিন এ, যা চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। পেয়ারা পাতা চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় এবং প্রখর দৃষ্টি শক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়া পেয়ারা পাতা নিয়মিত খেলে চোখের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা এবং ড্যামেজ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় সহজে।

স্ট্রেস থেকে মুক্তি জন্য পেয়ারা পাতাঃ পেয়ারা পাতায় থাকা এন্টি অ্যাংজাইটি এবং রিলাক্সিং উপাদান শরীরের অ্যাংজাইটি হরমোন কমাতে সহায়তা করে। তাই নিয়মিত পেয়ারা পাতা সেবন মানসিক প্রশান্তি প্রদান করে, ফলে আপনি পাবেন একটি শান্ত এবং দুশ্চিন্তা মুক্ত জীবন।

মাসিকের বিভিন্ন সমস্যা হতে মুক্তিঃ পেয়ারা পাতায় রয়েছে ব্যথা কমানোর এবং সারানোর মতো উপাদান যা মহিলাদের মাসিকের সময় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়। তাই নিয়মিত পেয়ারা পাতা সেবন করলে আপনার মাসিকের সময় টা হতে পারে অনেক সহজ এবং স্বস্তির।

ব্রণ থেকে মুক্তি পেতে পেয়ারা পাতার ব্যবহারঃ আপনি যদি ব্রনের সমস্যায় ভুগেন তাহলে নিয়মিত পেয়ারা পাতার চা পানে উপকার পাবেন। পেয়ারা পাতার চা শরীর থেকে টক্সিক পদার্থ বের করে দিতে সহায়তা করে থাকে। ফলে নিয়মিত পেয়ারা পাতার চা পানে আপনি পেতে পারেন ব্রণ মুক্ত সুন্দর একটি মুখ।

শুক্রাণু উৎপাদনে পেয়ারা পাতার ব্যবহারঃ পেয়ারা পাতা পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে থাকে। কারন পেয়ারা পাতার গুনাগুন পুরুষদের স্পার্ম কাউন্ট বাড়াতে সহায়তা করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, পেয়ারা পাতায় থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট পুরুষদের শুক্রাণু বিষাক্ততার উপর পজিটিভ প্রভাব ফেলে এর ফলে পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

ক্ষত এবং ইনফেকশন সারাতে পেয়ারা পাতার ব্যবহারঃ পেয়ারা পাতা যে কোন ধরনের ক্ষত এবং ইনফেকশন সারাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পেয়ারা পাতায় থাকা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ইনফেকশনের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া বিনাশ করতে সহায়তা করে থাকে। ফলে যে কোন ধরনের ইনফেকশন থেকে মুক্তি পাওয়া যায় সহজে। এছাড়া এই পাতার ঔষধি গুনাগুন ক্ষত সারাতেও অনেক উপকারী।

এলার্জি দূর করতে পেয়ারা পাতার ব্যবহার

এলার্জি দূর করতেও পেয়ারা পাতা দারুন কার্যকরী। আমরা অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের এলার্জিতে ভুগি এবং আক্রান্ত হয়ে থাকি। পেয়ারা পাতার বিভিন্ন ঔষধি গুন এই এলার্জি দূর করতে সহায়তা করে। এজন্য পেয়ারা পাতা আপনি পেস্ট বানিয়ে খেতে পারেন বা চা বানিয়ে পান করে উপকার পেতে পারেন। এজন্য চার পাঁচটি কচি পেয়ারা পাতা ভালোভাবে ধুয়ে পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে এবং এর সাথে যোগ করতে হবে কালিজিরার গুড়া।

ইমেজ

এই দুইটি উপাদান পানি দিয়ে ভালোভাবে মিক্সড করে রাতের খাবারের আধা ঘন্টা পর খেতে হবে। রাতের খাবারের পর নিয়মিত এই পেস্ট টি খেলে ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই আপনার অ্যালার্জি, চুলকানি, র‍্যাস থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এছাড়া আপনি পেয়ারা পাতা দিয়ে চা বানিয়ে খেতে পারেন। এই চা নিয়মিত খেলে সাত থেকে আট সপ্তাহের মধ্যেই আপনি যে কোনো ধরনের এলার্জি থেকে মুক্তি পাবেন। 

পেয়ারা পাতার চা কিভাবে বানাবেন

পেয়ারা পাতার চা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে ভরপুর একটি পানীয়। এই চা বানানো খুবই সহজ, তাই আপনি আপনার ডায়েটে নিয়মিত এই চা রাখতে পারেন। এই চা বানানোর জন্য আপনার লাগবে কয়েকটি পেয়ারা পাতা। পাতাগুলি ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেয়ার পর দেড় মগ পানি দিয়ে চুলায় মিডিয়াম  আচে ফুটতে দিতে হবে।

আরো পড়ুনঃ চালের গুড়া দিয়ে ত্বককে জেল্লাদার করতে বিস্তারিত ব্যবহার জানুন

এরপর এই মিশ্রনের সাথে যোগ করতে হবে চা পাতা। চা পাতা দিয়ে পাঁচ থেকে ছয় মিনিট অল্প আচে ফুটানোর পর নামিয়ে নিতে হবে এবং মিশ্রণটি ছেকে নিতে হবে। এরপর এর সাথে মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন। নিয়মিত এই চা পানে আপনার ত্বক, চুল এবং স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই পেয়ারা পাতার চা দিনে দুই থেকে তিনবার খেতে পারেন।

পেয়ারা পাতার কোন অপকারিতা আছে কি

পেয়ারার মতো পেয়ারা পাতায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। একটি গবেষণায় দেখা গেছে এক মগ পেয়ারা পাতা চায়ে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালরি। কার্বোহাইড্রেট রয়েছে ১.০১ গ্রাম কিন্তু এতে অন্যান্য ভিটামিন এবং খনিজ নেই বললেই চলে। এছাড়া যাদের একজিমার মত সমস্যা রয়েছে তাদের এই পেয়ারা পাতার চা এড়িয়ে যাওয়াই ভালো হবে।

পেয়ারা পাতায় থাকা গ্লাইসেমিক নামক উপাদান রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে থাকে। তাই অতিরিক্ত পেয়ারা পাতা খাওয়ার কারণে আপনার রক্তচাপ কমে যেতে পারে এবং এর ফলে আপনি দুর্বল অনুভব করতে পারেন। এছাড়া গর্ভবতী মহিলাদের পেয়ারা পাতা খাওয়ার ব্যাপারে সেরকম কোন তথ্য না পাওয়ায়, পেয়ারা পাতা খাওয়া যাবে কিনা সে বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

পরিশেষে

পেয়ারার সাথে সাথে পেয়ারার পাতার বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান থাকায় আমাদের ত্বক এবং চুলের যত্নে দারুন কার্যকরী। এছাড়া আমাদের স্বাস্থ্যের উপরও পেয়ারা পাতার রয়েছে দারুন উপকারিতা। তাই আমাদের নিয়মিত ডায়েটে আমরা  সহজেই এই ঔষধি গুনাগুন সমৃদ্ধ পাতাটি রাখতে পারি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পেয়ারা পাতার চা জনপ্রিয়তা রয়েছে।

তাই সহজে পাওয়া যাওয়া এই পাতা থেকে শরীরের বিভিন্ন উপকারে কাজে লাগানোর জন্য আমরা ব্যবহার করতে পারি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

passiondrivefiona র নীতিমালা মেনে comment করুন। প্রতিটি comment রিভিউ করা হয়;

comment url