টানটান এবং তারুণ্যদীপ্ত ত্বকের জন্য বিটরুট খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন
টানটান এবং তারুণ্যদীপ্ত ত্বক পেতে আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে রাখতে হবে বিটরুট, সাথে জানতে হবে খাওয়ার নিয়মও। টানটান এবং তারুণ্যদীপ্ত ত্বকের জন্য এই সবজির জুড়ি মেলা ভার।।। এছাড়া আমরা জানবো বিটরুট খাওয়ার অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতা।
পোস্ট সূচীপত্রঃভেতরে গাঢ়ো গোলাপি রঙের বিটরুট কিছুদিন আগেও আমাদের দেশে খুব জনপ্রিয় না থাকলেও, এর বিভিন্ন পুষ্টিগুণাগুণ এবং আমাদের ত্বকের জন্য বিশেষ উপকারী হওয়ায়, বর্তমানে শীতকালীন এই সবজিটি আমাদের দেশে প্রায় সব জায়গাতেই সহজেই পাওয়া যায়।
বিটরুটে কি কি ভিটামিন রয়েছে
ভেতরে গাঢ় গোলাপি রঙের এই বিটরুট আমাদের ত্বককে টানটান এবং তারুণ্যদীপ্ত রাখার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণ, এই সবজিটির ভরপুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। আমরা সবাই জানি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার আমাদের ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। প্রতিদিনের ডায়েটে এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার রাখলে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া, বলি রেখা, কুচকানো ভাবসহ অন্যান্য সমস্যা সহজে সমাধান করা যায়।
আরো পড়ুন: এক টুকরো বরফে হবে গরমে ত্বকের সব সমস্যার সমাধান
এছাড়াও বিটরুটে আরো বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। যেমনঃ ভিটামিন এ, ভিটামিন বি৬, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফলিক অ্যাসিড, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক ইত্যাদি। এছাড়াও বিটরুট ফাইবার সমৃদ্ধ একটি পরিপূর্ণ সবজি। এসব ভিটামিন এবং পুষ্টি উপাদানের কারণে ত্বক সহ আমাদের শরীরের জন্য বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা অনেক।
টানটান এবং তারুণ্যদীপ্ত ত্বকের জন্য বিটরুট
আপনি যদি আপনার ত্বক টানটান এবং তারুণ্যদীপ্ত রাখতে চান, তাহলে আপনার প্রতিদিনের ডায়েটের সঙ্গী করে নেন বিটরুটকে। বিটরুটে রয়েছে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর পর্যাপ্ত ভান্ডার। আর এই এন্টিঅক্সিডেন্টের কারণেই আমাদের ত্বক থাকে টানটান এবং ভেতর থেকে স্বাস্থ্যজ্জ্বল। ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না এই বিটরুট।
বিটরুট বিভিন্নভাবে আপনি আপনার ডায়েটে রাখতে পারেন। বিটরুট অন্যান্য সবজির সাথে মিক্সড করে সবজি হিসেবে খেতে পারেন, বিটরুট কুচি করে সালাদ হিসেবে খেতে পারেন। তবে এই সবজিটি রান্না করে সবজি হিসেবে খাবার চেয়ে, আপনি যদি এই বিটরুটের জুস প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে পারেন তাহলে এর উপকারিতা পাবেন বহুগুণ।
আরো পড়ুন: ত্বক এবং চুলের যত্নে এলোভেরা ব্যবহারের উপকারিতা
প্রতিদিন সকালে একটি বিটরুটের অর্ধেকটা কেটে নিয়ে এক গ্লাস পানির সাথে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে জুস খেতে পারেন। এছাড়া আপনি চাইলে এর সাথে একটি আমলকি কুচি করে দিতে পারেন। সাথে যোগ করতে পারেন এক টুকরো লেবুর রস। বিটরুট স্বাদে কিছুটা মিষ্টি হওয়ায় এর সাথে মধু যোগ করার প্রয়োজন নেই।
আপনি যদি প্রতিদিন সকালের ডায়েটে এই পানিওটি রাখতে পারেন তাহলে কিছুদিনের মধ্যেই আপনি আপনার ত্বকের পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবেন। তাই বিটরুট খাওয়ার আপনার যদি কোন সমস্যা না থাকে তাহলে টানটান এবং তারুণ্যদীপ্ত ত্বকের জন্য নিয়ম করে আজ থেকেই খাওয়া শুরু করুন।
বিটরুটের অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতা
বিটরুট শুধু আমাদের ত্বককেই টানটান এবং তারুণ্যদীপ্ত রাখেনা, এই সবজিটির অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতাও বহুবিধ। আর এইসব স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্যই আমাদের শরীর ভেতর থেকে সুস্থ থাকতে সহায়তা করে এবং এর প্রভাব আমাদের ত্বকেও দেখা যায়। ফলে ত্বক থাকে সুন্দর, সজীব এবং স্বাস্থ্যজ্জ্বল।
ক্যান্সার কোষ রোধে বিটরুটের ভূমিকাঃ বিটরুটে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিটেলেইন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আর এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার কোষ তৈরি রোধ করতে সহায়তা করে থাকে। এজন্য ক্যান্সারের মতো রোগ হতে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হয়।
আরো পড়ুন: চুল পড়া রোধে মেথি ব্যবহারের উপকারিতা - নতুন গজাতে মেথির ব্যবহার
রক্তের হিমোগ্লোবি বৃদ্ধি করতে বিটরুটঃ নিয়মিত বিটরুট খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে সহায়তা করে থাকে। বিটরুটে থাকা আইরন রক্তে হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে থাকে। তাই যারা রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়াতে চান তারা নিয়ম করে প্রতিদিন বিটরুট খেতে পারেন।
ভালো হরমোন তৈরিতে বিটরুটঃ বিটরুট আমাদের শরীরে ভালো হরমোন নামে পরিচিত সেরোটোনিন এবং ডকমিন হরমোন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে এই বিটরুট। এই হরমোন অক্সিডেসিভ ট্রেস থেকে আমাদের মুক্তি পেতে সহায়তা করে থাকে। তাই আপনি আপনার ডায়েটে নিয়মিত এই উপকারী সবজিটি রাখতে পারেন।
উচ্চ রক্তচাপ কমাতে বিটরুটঃ বিটরুট উচ্চ রক্তচাপ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিটরুটে থাকা নাইট্রেটস স নামক উপাদান রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। এছাড়া এই উপাদানটি রক্তনালির প্রসারণ ক্ষমতাও বাড়িয়ে তোলে। তাই আপনি যদি উচ্চ রক্তচাপে ভুগেন, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ মত আপনার দৈনিক ডায়েটে বিটরুট রাখতে পারেন।
হার্টের সুস্থতায় বিটরুটের ভূমিকাঃ বিটরুটে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান হার্টের সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই আপনার হার্টের সুস্থতায় নিয়মিত বিটরুট খেতে পারেন। এছাড়া রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতেও বিট রুট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিটরুটঃ বিটরুটে রয়েছে ভিটামিন এ, ফলে আমাদের চোখের সমস্যা সমাধানে বিটরুটের ভূমিকা অনেক। নিয়মিত খেলে চোখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং চোখের টিসুগুলোকেও ভালো রাখতে সহায়তা করে থাকে।
ফাইবার সমৃদ্ধ বিটরুটঃ বিটরুট ফাইবারে পরিপূর্ণ একটি সবজি। তাই নিয়মিত বিটরুট খেলে আপনার হজমের সমস্যা দূর হতে সহায়তা করবে, হলে পরিপাকতন্ত্রের কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারে। এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এছাড়া কোলন ক্যান্সারের মতো রোগ থেকেও দূরে রাখে এই বিটরুট।
মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিটরুটঃ অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়ার সাথে সাথে নিয়মিত বিটরুট খেলে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো হয় এবং মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে কর্মক্ষম করে তুলতে সহায় থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ বিটরুটে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন এবং পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে থাকে। এছাড়া বিটরুট শরীর থেকে টক্সিন পদার্থ বের করে আমাদের শরীরকে রাখে ঝরঝরে এবং কর্মউদ্যম।
আরো পড়ুন: রূপচর্চায় গোলাপজল এবং গ্লিসারিন ব্যবহারের উপকারিতা
জন্ডিস এবং কিডনি ভালো রাখতে বিটরুটঃ বিটরুট জন্ডিসের মত রোগ ভালো করতে সহায়তা করে থাকে। বিটরুটে থাকা বিটেলেইন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভারে চর্বি জমা হতে বাধা দেয়। ফলে লিভার কে রাখে সুস্থ এবং জন্ডিসের মতো রোগ থেকে আমাদেরকে দূরে রাখে। এছাড়া বিটরুট শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করতে সহায়তা করায় আমাদের কিডনিও ভালো থাকে।
বিটরুট কি সবার জন্যই উপকারী
বিটরুট আমাদের ত্বককে টানটান এবং তারুণ্য দীপ্ত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়া নিয়মিত বিটরুট খেলে আরো মিলে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। কিন্তু কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে উপকারী এই সবজিটি এড়িয়ে চলাই ভালো হবে। বা চিকিৎসকের পরামর্শ মত পরিমাণ মত খেতে পারেন।
যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে এবং এর জন্য নিয়মিত ইনসুলিন গ্রহণ করতে হয় তাদের বিটরুট এড়িয়ে চলাই ভালো হবে। কারণ বিটরুটে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এর মাত্রা অত্যন্ত বেশি হওয়ায় ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়া যারা নিম্ন রক্তচাপে ভুগেন তারাও এই সবজিটি এড়িয়ে চলবেন বা চিকিৎসকের পরামর্শ মত ডায়েটে রাখতে পারেন।
যাদের বিটরুটে এলার্জি রয়েছে তারাও এই সবজিটি খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। এই সবজি গ্রহণের ফলে চুলকানি, রেস বেড়ে যেতে পারে এবং ত্বক লাল লাল হয়ে ফুলে যেতে পারে। যাদের কিডনিতে পাথর সমস্যায় ভুগছেন, তারাও এই সবজিটি খাওয়ার ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলবেন।
এছাড়া বলা হয় যে, অনবরত নিয়মিত এই সবজিটি গ্রহণ না করে মাঝে মাঝে বিরতি দিয়ে খাওয়া ভালো। তাহলেই আপনি পুরোপুরি এর স্বাস্থ্য উপকারিতা পাবেন।
পরিশেষে
বিটরুট,গাঢ়ো গোলাপি রঙের শীতের এই সবজিটি আমাদের ত্বক টানটান রাখতে এবং ত্বকের বয়স কমিয়ে রাখতে নিয়মিত আমরা আমাদের ডায়েটে রাখতে পারি। বিটরুটে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান আমাদের ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে না দেওয়ার জন্য দারুন কার্যকরী। এছাড়া বিটরুটে থাকা আরও বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং পুষ্টি উপাদান আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।
বর্তমানে আমাদের দেশে প্রায় সারা বছরই এই সবজিটি পাওয়া যায়। তাই আপনি আপনার ডায়েটে নিয়মিত এই সব্জিটি রেখে এর সুফল পুরোপুরি ভাবে পেতে পারেন।
passiondrivefiona র নীতিমালা মেনে comment করুন। প্রতিটি comment রিভিউ করা হয়;
comment url