স্বাদে তেতো হলেও এই পাঁচ খাবারের স্বাস্থ্য উপকারিতা বহুগুণ

স্বাদে তেতো কিন্তু ভিটামিন এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর পাঁচটি তেতো খাবার এর স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। তেতো খাবারের নাম শুনলেই আমরা সাধারণত দূরে থাকার চেষ্টা করি। বিশেষ করে ছোটরা এই খাবার মুখে তুলতে চায় না। আরো জানব তেতো খাবারে কি কি ভিটামিন রয়েছে।

ইমেজ

পোস্ট সূচীপত্রঃকিন্তু স্বাদে তেতো হলেও এর ভরপুর পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বিশেষ করে গরমের সময় বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বাড়তে দেখা যায়। তেতো খাবার আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে এইসব রোগ থেকে দূরে থাকতে সহায়তা করে। 

    তেতো খাবারে কি কি ভিটামিন রয়েছে

    বিভিন্ন ধরনের তেতো খাবার আমাদের আশেপাশে সব সময়ই পাওয়া যায়। বিশেষ করে গরমের এই সময় তেতো খাবার বাজারে খুঁজলেই সহজেই পেয়ে যাবেন। তেতো খাবার বলতে আমরা সাধারণত করলা, নিমপাতা, পাট শাক, চিরতা, মেথি, সজনে পাতা, থানকুনি পাতা, গ্রিন টি, ডার্ক চকলেট ইত্যাদি।

    আরো পড়ুনঃ সাবুদানা খাওয়ার যত স্বাস্থ্য উপকারিতা - সাবুদানা কি থেকে তৈরি

    এসব তেতো খাবারে ভিটামিন এ, বি কমপ্লেক্স ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, এন টি ইনফ্লেমেটরি, এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ইত্যাদি ভিটামিন পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। তাই আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্তত একটি করেও তেতো খাবার রাখলে গরমের এই সময় ভিটামিনের চাহিদা অনেকটাই পূরণ হবে।

    করলা খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা

    তেতো খাবারের নাম শুনলে প্রথমেই যে খাবারের কথা মনে আসে, তা হল করলা। করলা নামটি শুনলে প্রথমেই তেতো স্বাদের কথা মনে হলেও, এর স্বাস্থ্য উপকারিতা জানলে আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে এই উপকারী সবজিটি না রেখে পারবেন না। এই সবজিটির স্বাদ যেমন তেতো, পুষ্টিগুণে তেমনি মধুর।

    বাজারে প্রায় সারা বছরই এই সবজিটি পাওয়া যায়। তাই আপনার স্বাস্থ্যগত দিক উন্নত করতে এবং প্রতিদিনের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে এই সবজিটি বিভিন্নভাবে আপনার পাতে রাখতে পারেন।করলায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ,রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ আরও যেসব উপকার রয়েছে তা নিচে দেখে নিনঃ

    • যারা ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন, তারা নিয়মিত পাতে করলা রাখতে পারেন। করল্লা রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে থাকে। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। এজন্য করলার জুস করে খেতে পারলে বেশি উপকার পাবেন।
    • করল্লায় রয়েছে ভিটামিন এ, সি সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান প্রচুর পরিমাণে। হলে প্রতিদিন পাতে করলা রাখলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়।
    • নিয়মিত করলা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত রোগ দূরে থাকে। কারণ করলায় রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার। ফলে হজম প্রক্রিয়া সহজ হতে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়।
    • করলা লিভার কে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে থাকে। করলা শরীর থেকে টক্সিন পদার্থ বের করতে সহায়তা করে থাকে। এছাড়া করালায় থাকা বিভিন্ন ভিটামিন এবং পুষ্টি উপাদান রক্ত পরিশোধনের কাজ করে থাকে, ফলে লিভারে চর্বি জমা সহ অন্যান্য থেকে দূরে রাখে।
    • যারা অতিরিক্ত ওজন সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রতিদিনের ডায়েটে করলা রাখলে অনেকটাই উপকার পাবেন। কারণ করলা একটি লো ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার হওয়ায় ওজন কমাতে সহায়তা করে থাকে।
    • যারা রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত করোলা পাতে রাখলে এই সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পেতে পারেন। এর ফলে হার থাকবে সুস্থ এবংআপনাকে হার্টের সমস্যা থেকেও মুক্তি দিবে।
    • করলা পাইলসের মত সমস্যায় জাদুকরি একটি উপাদান। এক্ষেত্রে করলার রস আপনাকে পাইলসের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
    • করালায় থাকা ভিটামিন এ এবং সি আমাদের ত্বক এবং চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বিশেষ করে যারা সব সময় ব্রণের সমস্যায় ভুগেন, তারা নিয়মিত করলা পাতে রাখলে ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। এছাড়া চুলের আগা ফাটা, খুশকি এবং চুল ঝরা সমস্যা থেকেও মুক্তি পাবেন।
    • করলা ক্যান্সারের মতো রোগ থেকে দূরে রাখতে সহায়তা করে থাকে। কারণ করলায় থাকা বিভিন্ন ভিটামিন ক্যান্সারের কোষ তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে। হলে ক্যান্সার থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়।
    • নিয়মিত করলা পাতে রাখলে যে কোন ধরনের ইনজুরি থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়। করলায় থাকা এন্টি ইনফ্লেমাটরি এর উপাদান যে কোন ইনজুরি এবং ক্ষত দ্রুত ভালো হতে সহায়তা করে থাকে।
    • আপনি যদি গলার কফ,শ্বাসকষ্ট ব্রংকাইটিসের মত সমস্যায় ভুগেন, তাহলে করলা রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন। এ ছাড়া এই জুস জ্বরের সময় খেলে জ্বর ভালো হতে সহায়তা করে থাকে।
    • করলায় রয়েছে ভিটামিন এ, ফলে নিয়মিত পাতে করলা রাখলে চোখের দৃষ্টি বৃদ্ধিসহ আরো অন্যান্য রোগ রক্ষা পাওয়ার সম্ভব হয়।
    • অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন কারণে আমাদের খাওয়ায় অরুচি চলে আসে। এক্ষেত্রে পাতে করলা রাখলে মুখের রুচি বাড়বে এবং পরবর্তীতে যে কোন খাবার খাওয়ার স্বাদ এবং ইচ্ছাও বৃদ্ধি পাবে।
    আমাদের স্বাস্থ্যের উপর করলার বিভিন্ন উপকারিতা পাওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে আমরা করলা আমাদের ডায়েটে রাখতে পারি। যেমনঃ আমাদের দেশে সবুজ এই সবজিটি ভাজি এবং ঝোল করে খেতে বেশি দেখা যায়। তবে আপনারা যদি করলার রস বা জুস করে খেতে পারেন তবে এর উপকারিতা অনেক গুণে বৃদ্ধি পাবে।
    এছাড়া করোলা রস করে এর সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। অনেকে আবার স্নাক্স হিসেবে করলা খেতে পছন্দ করেন। তবে একটি কথা না বললেই নয়, করলা যেহেতু লো ক্যালোরিযুক্ত খাবার, তাই নিয়মিত করলা খাওয়ার ফলে আপনার ব্লাড সুগার কমে যায় কিনা সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

    নিমপাতা খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা

    তেতো খাবারের মধ্যে যে খাবারে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে ভরপুর এবং আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী তা হল, নিমপাতা। নিমপাতা স্বাস্থ্যকারিতা সম্পর্কে আমরা সকলেই কম বেশি জানি। বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে এবং আমাদের ত্বকের যত্নেও নিম পাতা বহুল ব্যবহৃত একটি উপাদান। এ কারণেই অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় নিমপাতা ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
    ইমেজ

    নিমপাতার বিভিন্ন ঔষধি গুনাগুনের কারণে অনেক অঞ্চলে একে ঔষধি গাছ হিসেবেও অভিহিত করা হয়।

     নিচে নিমপাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলো জেনে নিনঃ

    • নিমপাতা এলার্জি কমাতে দারুন কার্যকরী এবং বহুল ব্যবহৃত একটি উপাদান। শরীরের যে কোন ধরনের চুলকানি, র‍্যাশ ইত্যাদি কমাতে নিম পাতার উপর ভরসা করা যায় চোখ বন্ধ করে। এক্ষেত্রে নিম পাতা ফুটানো পানি বা গোসলের পানিতে এক ঘন্টা নিমপাতা রেখে ওই পানিতে গোসল করলে এলার্জি কমাতে সহায়তা করবে। এছাড়া নিমপাতা এবং হলুদের পেস্ট করে এলার্জি জায়গায় লাগালেও উপকার পাবেন।
    • ত্বকের যেকোনো সমস্যা যেমনঃ ত্বক লাল হয়ে যাওয়া, ব্রণের সমস্যা ইত্যাদি কমাতে নিমপাতা এবং হলুদের ব্যবহার আমাদের দাদি নানিদের সময় থেকেই চলে আসছে। তাই আপনি যদি এ ধরনের সমস্যায় ভুগেন, তাহলে নিমপাতা এবং হলুদের পেস্ট তৈরি করে ত্বকের ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
    • ত্বকের সমস্যার সাথে সাথে আমাদের মাথার তালুতেও যেকোনো ধরনের চুলকানি, ফাঙ্গাস ইনফেকশন, খুশকি ইত্যাদি সমস্যা সমাধানে নিমপাতা দারুন উপকারী। নিমপাতা তে থাকা এন্টি ফাঙ্গাল এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদানের কারণে মাথার তালুর যে কোন সমস্যার সমাধানের সহজ একটি উপায়।
    • আপনি যদি এসিডিটি এবং বদ হজমের সমস্যায় ভোগেন, তাহলে নিমপাতা বেটে বা পেস্ট করে ছোট ছোট বড়ি করে রোদে শুকিয়ে নিয়মিত খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। এছাড়া নিমপাতাতে এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান থাকায় পাকস্থলীর যেকোনো সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে থাকে।
    • নিমপাতা রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে সহায়তা করে থাকে। ফলে নিয়মিত নিম পাতা খেলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে ডায়াবেটিসস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। তাই যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন সম্ভব হলে নিম পাতা শুকনো বড়ি খেতে পারেন।
    • দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা যেমনঃ দাঁত ব্যথা, মাড়ি ফুলে যাওয়া, মাড়ি থেকে রক্ত পড়া ইত্যাদি সমস্যায় নিমপাতা বহুল ব্যবহৃত একটি উপাদান। নিমের নির্যাস এর টুথপেস্ট এর এজন্যই এত জনপ্রিয়।
    • আমরা অনেকেই অনেক সময় কৃমির সমস্যায় ভুগি। এটি খুবই অস্বস্তিকর এবং শরীরের জন্য খারাপ একটি বিষয়। এই কৃমি কমাতে নিম পাতা শুকিয়ে বড়ি করে বা নিমপাতার রস তৈরি করে খেলে উপকার পাবেন।
    • নিম পাতায় রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিফাঙ্গাল উপাদান। এজন্য নিয়মিত নিম পাতা খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শরীরে যে কোন টক্সিন পদার্থ বের করতে সহায়তা করে। ফলে লিভার এবং কিডনির স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং যে কোনো সমস্যা থেকে দূরে রাখে।
    • শরীরে কোন আঘাতের কারণে ক্ষত হলে, পোকামাকড় কামড়ালে নিমপাতা বেটে পেস্ট করে লাগালে ব্যথার উপশম হবে।
    তবে গর্ভাবস্থায় নিমপাতা না খাওয়াই ভালো হবে। এছাড়া নিমপাতা খাওয়ার কারণে আপনি যদি অন্য কোন সমস্যা অনুভব করেন তাহলে এড়িয়ে চলাই ভালো। যে কোন খাবার দীর্ঘদিন একনাগারে খাওয়ার জন্য অনেক সময় অনেক ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এজন্য নিম পাতা খাওয়ার সময় কিছুদিন পর পর বিরতি দিয়ে খাওয়াই ভালো। 

    পাট শাক খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা

    পাট শাক খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা জানলে আপনারা এই শাক পাতে না রেখে পারবেন না। এই শাক টি মূলত গরমের সময় বাজারে বেশি পাওয়া যায়। তাই এর স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা মাথায় রেখে আপনাদের প্রতিদিনের ডায়েটে রাখতেই পারেন। আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলে এইশাকের খাওয়ার প্রচলন থাকলেও বর্তমানে শহরেও এই শাকের জনপ্রিয়তা অনেক।

    পাট শাক খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা নিচে দেয়া হলোঃ

    • আপনারা যারা প্রায়ই গ্যাস ই বা এসিডিটির সমস্যায় ভোগেন, তারা নিয়ম করে পাট শাক আপনাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। পাট শাকে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার, যা হজমে সহায়তা করে এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে দারুন কার্যকরী। ফলে গ্যাস বা এসিডের সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
    • পাট শাকে রয়েছে ভিটামিন সি, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর ভরপুর ভান্ডার। আর এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এর কারণে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
    • এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পাটশাকে রয়েছে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম এর মত ভিটামিন। ফলে নিয়মিত পাট শাক পাতে রাখলে দাঁত এবং হাড় মজবুত করতে, হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে দারুন কার্যকরী হবে।
    • আমাদের শরীরে প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ হতে দেখা যায়। আর এই প্রদয়ের কারণে আমরা বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হই। এই প্রদাহ থেকে মুক্তি পেতে পাট শাক নিয়মিত পাতে রাখলে উপকার পাবেন। কারণ পাট শাকে রয়েছে ওমেগা থ্রি এর মত উপকারী ভিটামিন।
    • পাট শাক ওজন কমাতেও দারুন কার্যকরী। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। তাই এই শাক পাতে রাখলে অনেকক্ষণ পেট ভরা অনুভূতি দিবে, ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার ক্রেভিং থেকে দূরে রাখবে। আর ওজন কমানো সহজ হবে।
    পাট শাক বিভিন্নভাবে আপনি আপনার ডায়েটে রাখতে পারেন। আমাদের দেশে সাধারণত এইশাক ভাজি এবং ঝোল করে তরকারি খেতে বেশি দেখা যায়। তবে আপনি চাইলে এই শাক দিয়ে চা বানিয়ে খেতে পারেন। এছাড়া বিভিন্ন দেশে এই শাকের সূপ, সটু, পাকৌড়া ইত্যাদি হিসেবে খাওয়া হয়।

    চিরতা খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা

    চিরতার স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্যই স্বাদে তেতো হওয়া সত্ত্বেও ঘরোয়া চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত একটি উপাদান। আমাদের দেশে অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার ঘরোয়া টোটকা হিসেবে চিরতা ব্যবহার হয়ে আসছে। যদিও সকালে চিরতা পানি খাওয়ার কথা বেশি শোনা যায়, তবে আপনি আরো বিভিন্নভাবে চিরতা খেতে পারেন। 
    ইমেজ

    আপনি যদি চিরতা খাওয়ার পরিকল্পনা করে থাকেন তাহলে এর স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আগে ভালোভাবে জেনে নিন।
    • চিরতা আমাদের শরীরের টক্সিন পদার্থ গুলো বের করতে সহায়তা করে থাকে। এর ফলে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ থেকে আমাদের শরীর রক্ষা পায়।
    • চিরতা নিয়মিত খেলে আপনার ইমিউন সিস্টেম বৃদ্ধি পাবে। ফলে আপনি সহজেই রোগাক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে মুক্ত থাকবেন।
    • চিরতা রক্ত পরিশোধনকারী হিসেবেও কাজ করে। তাই নিয়মিত চিরতা ডায়েটে রাখলে আপনার রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া সহজ এবং মসৃণ হবে।
    • পেটের গ্যাস বা এসিডিটি সমস্যায় ভুগলে চিরতাকে আপনার ডায়েটে সঙ্গী করে নেন। কারণ চিরতা পেটের গ্যাস এবং এসিডিটি দূর করতে দারুন কার্যকরী।
    • ওজন কমাতেও চিরতার বহুল ব্যবহার আমাদের দেশে হয়ে আসছে। তাই আপনি যদি অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান তাহলে চিরতা খেলে উপকার পাবেন।
    • আমরা অনেকেই তিমির মত অস্বস্তিকর একটি সমস্যায় ভুগে থাকি। এর ফলে অনেক সময় পেট ব্যথা, পেট ফাঁপা এবং পেট খুলে যাওয়ার মত সমস্যা দেখা দেয়। এই কৃমির সমস্যা থেকে চিরতা সহজেই মুক্তি দিতে পারে।
    • লিভারের যেকোনো সমস্যা যেমনঃ ফ্যাটি লিভার, লিভারের প্রদাহ ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে চিরতার দারুন কার্যকরী একটি উপাদান। তাই আপনি এই সমস্যায় ভুগলে চিরতা আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।
    • রক্তের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে চিরতার ভূমিকা অনেক। তাই আপনি যদি রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমিয়ে ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণ করতে চান তাহলে নিয়মিত চিরতা খেতে পারেন।
    • ত্বকের যেকোনো সমস্যায় যেমনঃ ত্বকের যে কোন প্রদাহ, লাল হয়ে যাওয়া, ব্রণ ইত্যাদি থেকে মুক্তি দিতেও চিরতার ভূমিকা অপরিসীম।
    • ম্যালেরিয়ার মত জর সারিয়ে তুলতে চিরতা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এছাড়া সাধারণ জ্বর ভালো করতেও আপনি চিরতা খেতে পারেন।
    • বলা হয়ে থাকে, বাতের ব্যথার মতো সমস্যার সমাধানে চিরতা দারুন কার্যকরী একটি উপাদান। এছাড়া ফুলে যাওয়া সমস্যা ও চিরতা দারুন কার্যকরী।
    • ক্যান্সারের মতো রোগ প্রতিরোধেও চিরতা স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক।

    থানকুনি পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা

    আমাদের দেশে বিভিন্ন রোগের ঘরোয়া চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত আরেকটি নাম হলো থানকুনি পাতা। থানকুনি পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্যই বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। দেশের প্রায় সব জায়গাতেই, আনাচে-কানাচে উপকারে এই পাতা দেখতে পাওয়া যায়। তাই আপনিও বিভিন্ন রোগ সারিয়ে তুলতে এই পাতা ডায়েটে রাখতে পারেন।

    থানকুনি পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলো জেনে নিনঃ

    • পেটের যেকোনো সমস্যা সারিয়ে তুলতে থানকুনি পাতার ব্যবহার অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। থানকুনি পাতা পুরাতন আমাশয় ভালো করতেও দারুণ কার্যকরী। এছাড়া আপনি প্রায়ই পেটের অসুখে ভুগলে থানকুনি পাতার রস এই সমস্যা থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে।
    • আপনি যদি গ্যাস এসিডিটি সমস্যায় ভুগেন তাহলে থানকুনি পাতা আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। এছাড়া এই পাতা আলসারের মতো রোগ সারাতেও দারুণ কার্যকরী।
    • শরীরে যে কোন ক্ষত সারাতে থানকুনি পাতার রস বের করে বা পাতা পেস্ট করে ক্ষতস্থানে লাগালে উপকার পাবেন।
    • শরীরকে ঠান্ডা রাখতে থানকুনি পাতার জুরি মেলা ভার। কারণ থানকুনি পাতার রস শরবত শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে।
    • নিয়মিত থানকুনি পাতার রস খেলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া এবং স্বাভাবিক হতে সহায়তা করে।
    • ত্বকের যে কোন সমস্যার সমাধানেও থানকুনি পাতার ব্যবহার বহুল প্রচলিত। আপনি যদি ব্রণের সমস্যায় ভুগেন তাহলে থানকুনি পাতা ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
    • চুলের যেকোনো সমস্যাও থানকুনি পাতা দারুন কার্যকরী একটি উপাদান।
    • বলা হয়ে থাকে, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতেও থানকুনি পাতার রস অনেক উপকারী।

    পরিশেষে

    স্বাদে তেতো হলেও, এই পাঁচ খাবারের স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। তাই আপনি যে কোন সমস্যায় তেতো সাদে এই খাবার গুলো আপনার পাতে নিয়মিত রাখতে পারেন। এই খাবারগুলির আরেকটি সুবিধা হল আমাদের দেশে সব সময় সব জায়গাতেই সহজেই পাওয়া যায়। তাই যে কোন রোগের ঘরোয়া চিকিৎসার টোটকা হিসেবে এই খাবারগুলো নিয়মিত খেতে পারেন।

    তাই বলা হয়ে থাকে যে, স্বাদে তেতো কিন্তু উপকারিতার দিক থেকে মধুর চেয়েও মিষ্টি। আপনার যেকোনো সমস্যায় তেতো সাধের এই খাবারগুলো রাখতে পারেন নিশ্চিন্তে।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    passiondrivefiona র নীতিমালা মেনে comment করুন। প্রতিটি comment রিভিউ করা হয়;

    comment url