গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার যে সকল উপকারিতা রয়েছে জানুন
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনি যদি জানতে চান তাহলে ঠিক জায়গায় এসেছেন। কারণ আজকের আর্টিকেলে গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার যে সকল উপকার রয়েছে তা বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি। এছাড়া জানব গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার অপকারিতা আছে কিনা সম্পর্কে।
পোস্ট সূচীপত্রঃখেজুর একটি মিষ্টি জাতীয় সুস্বাদু ফল। আমাদের দেশের খেজুরের চাষ খুব বেশি না হলেও সারা বছরই বিভিন্ন ধরনের খেজুর সব সময় পাওয়া যায়। খেজুরে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন এবং পুষ্টি উপাদানের কারণে গর্ভাবস্থায় নিয়মিত খেজুর খাওয়ার ফলে পাওয়া যায় নানা উপকারিতা। গর্ভাবস্থায় খেজুর খেলে একজন গর্ভবতী মায়ের যে সকল সুফল মিলে তা জানতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে এখন আপনাদের জানাবো। গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় এমন কিছু খাবার প্রতিদিন রাখতে হবে যে খাবার গুলো গর্ভাবস্থার পুরো সময় বিভিন্ন ধরনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করবে। এরকম একটি খাবার হল খেজুর।
একজন গর্ভবতী মায়ের গর্ভাবস্থায় যে সকল পুষ্টির চাহিদা প্রয়োজন তার অনেকটাই পূরণ করা সম্ভব খেজুর খাওয়ার মাধ্যমে। কারণ খেজুর অনেক ধরনের প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ। খেজুরে থাকা এই সকল ভিটামিন এবং পুষ্টি উপাদান একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার ফলে যে সকল উপকারিতা পাওয়া যায় তা নিচে আলোচনা করা হলোঃ
দ্রুত শক্তি বৃদ্ধিকারী খেজুরঃ গর্ভাবস্থায় সাধারণ একটি সমস্যা হল দুর্বল লাগা। এই দুর্বলতা দূর করে তাৎক্ষণিক শক্তি প্রদান করে খেজুর। কারণ খেজুর উচ্চ কার্বোহাইড্রেট যুক্ত একটি খাবার। তাই খেজুর খাওয়ার মাধ্যমে গর্ভাবস্থায় দুর্বলতা দূর করা যায় সহজে।
প্রসবকালীন শক্তি প্রদান করে খেজুরঃ গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন নিয়ম করে খেজুর খেলে তা যেমন পুরো গর্ভাবস্থার সময়ে দুর্বলতা দূর করে শক্তি প্রদান করে, তেমনি গর্ভবতী মায়ের দুর্বলতা দূর হওয়ার কারণে প্রসবকালীন সময় যে বাড়তি শক্তির প্রয়োজন হয়, তা নিয়মিত খেজুর খাওয়ার মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব।
হজমে সহায়তা করে খেজুরঃ গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মহিলা প্রায়ই যে সমস্যায় ভুগেন তা হল কোষ্ঠকাঠিন্য। গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের জন্য এটি খুবই কষ্টদায়ক একটি ব্যাপার। খেজুরে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার, তাই একজন গর্ভবতী মহিলা নিয়মিত খেজুর খেলে হজমে সহায়তা হবে এবং কাঠিন্যের মতো সমস্যা দূর করবে।
রক্তশূন্যতা দূর করবে খেজুরঃ আমাদের দেশে গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মহিলা অনেক সময়ই রক্তশূন্যতায় ভুগে থাকেন। বিভিন্ন কারণে এই সমস্যা হতে পারে। তবে গর্ভবতী মহিলার খাদ্য তালিকায় যদি খেজুর রাখা যায় তবে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে এবং সাথে রক্তস্বল্পতার সমস্যাও দূর করবে।
গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে খেজুরঃ অনেক সময়েই গর্ভাবস্থায় অনেকের উচ্চ রক্তচাপ হতে দেখা যায়। এই উচ্চচাপ নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করবে খেজুর। খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। এই পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
সম্পূরক খাবার হিসেবে খেজুরঃ গর্ভাবস্থায় অনেক সময় সম্পূরক খাবার হিসেবে খেজুর খাওয়ার কথা বলা হয়ে থাকে। কারণ খেজুর উচ্চ ফলেট সম্পন্ন একটি খাবার, যা একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
সুষ্ঠু জন্মদান প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেঃ খেজুর এমন একটি খাবার যা গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে নিয়মিত খাওয়ার মাধ্যমে গর্ভস্থ শিশুর জন্মদানের যে প্রক্রিয়া তা অনেকটাই সহজ করে তুলে এবং জন্মদান প্রক্রিয়া দ্রুত এবং ব্যথা মুক্ত করতে সহায়তা করে থাকে। গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের জরায়ুতে যে সংবেদনশীলতা তৈরি হয় তা অনেকটাই দূর করে প্রসবকালীন ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে খেজুর।
আরো পড়ুনঃ সিজারের পর দ্রুততল পেট কমাতে মেনে চলুন পাঁচটি নিয়ম
প্রসবকালীন ব্যথা কমাতে খেজুরঃ খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড, যা প্রসবকালীন সময় জরায়ুর মাসল এর ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে থাকে। এর ফলে প্রসবকালীন সময় যে তীব্র ব্যথা হয় তা অনেকটাই কম হয়ে থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে খেজুরঃ খেজুরে রয়েছে ফ্লেবোনয়েড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে। খেজুরে থাকা ফেনেলিক নামক যৌগ আমাদের শরীরে ফ্রী রেডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে, যে কারণে কোষের ক্ষয় রোধ করা সম্ভব হয়। যা গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের সার্বিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভালো ঘুমের সহায়ক খেজুরঃ গর্ভাবস্থায় একজন মহিলা আরেকটি যে সাধারণ সমস্যায় ভুগেন তা হল রাতে ঠিকমত ঘুম না হওয়া। এই সময় অনেকেরই রাতে ঘুম কম হতে দেখা যায়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে খেজুর। কারণ খেজুরে থাকা বিশেষ উপাদান রাতে ভালো ঘুমের জন্য সহায়ক মেলাটোনিন হরমোন নিঃসরণে সহায়তা করে থাকে। তাই নিয়মিত খেজুর খেলে ঘুমের সমস্যা অনেকটাই দূর করা সম্ভব।
গর্ভস্থ শিশুর দাঁত এবং হাড় গঠনে খেজুরঃ খেজুরে থাকা প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম গর্ভবতী মায়ের জন্য যেমন অনেক উপকারী, তেমনি গর্ভস্থ শিশুর হাড় এবং দাঁত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
গর্ভাবস্থায় নিয়মিত খেজুর খাওয়ার মাধ্যমে উপরোক্ত উপকারিতা ছাড়াও আরো যেসব উপকার পাওয়া যায় তা হল-
- খেজুর গর্ভাবস্থায় মর্নিং সিকনেস দূর করতে সহায়তা করে থাকে।
- খেজুরে থাকা উপকারী প্রোটিন শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যামিনো এসিড তৈরিতে সহায়তা করে থাকে।
- খেজুর শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম পূরণেও সহায়তা করে থাকে।
- গর্ভাবস্থায় অনেক সময় খাওয়ার রুচি কমে গেলে তা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে খেজুর।
খেজুরের কি কি ভিটামিন রয়েছে
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা পাওয়া যায় মূলতঃ খেজুরে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন এবং মিনারেলস এর কারণে। আর্টিকেলের এই অংশে জানাবো, খেজুরে কি কি ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে সে সম্পর্কে।
খেজুর খেতে ভালোবাসে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না, মিষ্টি জাতীয় এই ফলটি ছোট বড় সবাই খেতে পছন্দ করে। খেজুরে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাই একজন গর্ভবতী মায়ের জন্যও গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার রয়েছে অনেক উপকার। গর্ভাবস্থায় নিয়মিত খেজুর খাওয়ার মাধ্যমে পুষ্টির চাহিদা অনেকটাই পূরণ সম্ভব।
আরো পড়ুনঃ কিসমিস ভেজানো পানি খাওয়ার উপকারিতা
খেজুর একটি শুকনো, লম্বাটে উচ্চ ক্যালোরি যুক্ত ফল। এছাড়াও খেজুরে আরো যে সকল ভিটামিন রয়েছে তা হলঃ পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার, পটাশিয়াম, প্রোটিন, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি৬ এবং ভিটামিন কে সহ আরো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান।
এই সকল পুষ্টি উপাদান এবং ভিটামিন একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সাথে গর্ভস্থ শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভাবস্থায় খেজুর কিভাবে খেতে পারেন
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনারা উপরে জেনেছেন। এখন জানবেন, গর্ভাবস্থায় খেজুর কিভাবে আপনাদের ডায়েটে রাখতে পারেন সে সম্পর্কে। একজন গর্ভবতী মহিলা বিভিন্নভাবে খাদ্য তালিকায় খেজুর রাখতে পারেন। যে উপায়ে খেজুর খেতে পারেন তা এক নজর দেখে নিনঃ
- খেজুর এবং দুধ দিয়ে স্মুদি তৈরি করে খেতে পারেন। এর সাথে যোগ করতে পারেন কিছু বাদাম। তাহলে এর সাদ আরো বৃদ্ধি পাবে।
- টকদই এর সাথে খেজুর এবং বিভিন্ন ধরনের বাদাম মিশিয়ে খেতে পারেন।
- বিভিন্ন ফলের সাথে মিক্সড করে কুচি কুচি করে খেজুর দিয়ে খেলে ভালো লাগবে।
- খেজুর এবং বাদাম একসাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
- বিভিন্ন ধরনের কেক এবং মাফিন তৈরিতে খেজুর ব্যবহার করতে পারেন।
- সাবুদানা বা ওটস এর সাথে দুধ এবং খেজুর মিশিয়ে খেলে আপনার পুষ্টির পরিমাণ আরো বাড়বে।
- আপনি ইচ্ছে করলে কয়েকটি খেজুর ধুয়ে নিয়ে খেয়ে নিতে পারেন।
- মিষ্টি জাতীয় যে কোন খাবারের উপরে খেজুরের স্লাইস ছিটিয়ে দিয়ে খেতে পারেন।
গর্ভাবস্থার কোন পর্যায়ে কতটুকু খেজুর খাবেন
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার অপকারিতা আছে কি
- আপনি যদি অতিরিক্ত খেজুর গ্রহণ করেন তাহলেই রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে ডায়াবেটিস সহ আরো অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
- অতিরিক্ত খেজুর গ্রহণ করার ফলে অনেক সময় ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা দেয়। কারণ খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট।
- খেজুরে যেহেতু ফাইবারের পরিমাণ অনেক বেশি, তাই অতিরিক্ত খেজুর গ্রহণের ফলে হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- এজন্য গর্ভাবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে খেজুর খাওয়ার পরিমাণ চিকিৎসকের পরামর্শ মত গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
passiondrivefiona র নীতিমালা মেনে comment করুন। প্রতিটি comment রিভিউ করা হয়;
comment url