থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো কি কি

 

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আজকের ব্লগ পোস্টে আলোচনা করব। আপনি যদি থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান, আজকের পোস্টে বিস্তারিত পেয়ে যাবেন । সাথে জানবেন, থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কেও বিস্তারিত।

থানকুনি-পাতার-উপকারিতা-অপকারিতা

পোস্ট সূচিপত্রঃআমাদের দেশে আনাচে-কানাচে, ডোবা বা পুকুরের ধারে, রাস্তার পাশে হরহামেশাই দেখা যায় এই থানকুনি পাতা। থানকুনি পাতার বিশেষ ভেষজ উপাদান বিভিন্ন রোগ সারাতে প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে ইউনানী, আয়ুর্বেদিক এবং কবিরাজি চিকিৎসায় এই পাতার বহুল প্রচলন রয়েছে। ঘরোয়া টোটকা হিসেবেও এই পাতার জুড়ী মেলা ভার।

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত জানানোর উদ্দেশ্যেই এই পোস্ট সাজানো হয়েছে। তাহলে চলুন দেরি না করে আজকের ব্লগ পোস্টটি শুরু করা যাক।

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন 

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে পোস্টের শুরুতে জানতে পারবেন। থানকুনি পাতা আমাশয় রোগে, হজম জনিত সমস্যায়, সর্দি কাশি ভালো করতে ঘরোয়া উপাদান হিসেবে আমাদের দাদি নানি আমলের সময় থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এছাড়া আমাদের ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এবং চুলের যত্নেও রয়েছে বিশেষ ভূমিকা।

এছাড়া জানব, থানকুনি পাতার অপকারী দিক আছে কিনা সে সম্পর্কে। ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে থানকুনি পাতা বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে উপকার মিললেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপকারী দিকও লক্ষ্য করা যায়। তাই থানকুনি পাতা খাওয়ার আগে কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।

তাহলে চলুন প্রথমে থানকুনি পাতার ১৫ টি উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন-

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে থানকুনি পাতা

থানকুনি পাতায় রয়েছে ভিটামিন সি প্রচুর পরিমাণে, নিয়মিত দুই থেকে তিনটি থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেলে বা থানকুনি পাতার রস খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে নিয়মিত থানকুনি পাতার রস খেতে পারেন।

দ্রুত ক্ষত সারিয়ে তুলতে থানকুনি পাতা

থানকুনি পাতা ত্বকের যে কোন ধরনের ক্ষত সারিয়ে তুলতে দারুন কার্যকরী। থানকুনি পাতায় থাকা এন্টিবায়োটিক উপাদানের কারণে, শরীরের যেকোনো জায়গায় ক্ষতের সৃষ্টি হলে থানকুনি পাতার রস সকাল এবং বিকালে দুই থেকে তিন চামচ করে খেলে দ্রুত উপকার মিলবে। এছাড়া ক্ষতস্থানে থানকুনি পাতার পেস্ট লাগালে দ্রুত ক্ষত জনিত ব্যথা দূর হবে সাথে রক্ত পড়াও বন্ধ হবে।

সর্দি জনিত কাশি ভালো করতে থানকুনি পাতা

আপনারা যারা প্রায়ই সর্দি জনিত কাশিতে ভুগেন তারা নিয়মিত থানকুনি পাতার রস খেতে পারেন। আমি বলব থানকুনি পাতা তাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। সর্দিজনিত কাশি ভালো করতে থানকুনি পাতার রস দুই থেকে তিন চা চামচ সকালে এবং বিকালে মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে দ্রুত কাশি ভালো হবে। তাছাড়া সাথে তুলসী পাতার রস যোগ করলে দ্বিগুণ উপকার পাবেন।

সর্দি জনিত জ্বর ভালো করবে থানকুনি পাতা

অনেকেই আবার প্রায়ই বিভিন্ন কারণে সর্দি জনিত জ্বরে ভুগেন। এই ধরনের সর্দি জনিত জ্বর ভালো করতে থানকুনি পাতার রস নিয়মিত খেলে উপকার মিলবে। প্রতিদিন দুই বেলা থানকুনি পাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে সর্দি জনিত জ্বর দ্রুত ভালো করতে সহায়ক হবে।

আমাশয় রোগের মুক্তি দিবে থানকুনি পাতা

আমাশয় রোগ সারিয়ে তুলতে ঘরোয়া উপাদান হিসেবে থানকুনি পাতার ব্যবহার আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে বহুল প্রচলিত। অনেকে আছে যারা প্রায়ই আমাশয় রোগে ভোগেন। অনেকের আবার পুরাতন আমাশয়ের সমস্যা রয়েছে।

এই ধরনের আমাশয় থেকে মুক্তি পেতে থানকুনি পাতার রস দারুন কার্যকরী। সকালে এবং বিকেলে নিয়মিত থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেলে বা থানকুনি পাতার রস খেলে ২ ধরনের আমাশয় থেকে সহসাই মুক্তি পাবেন।

পেটের আলসার থেকে মুক্তি পেতে থানকুনি পাতা

বর্তমানে পেটের এসিডিটি এবং এসিডিটি থেকে আলসার হওয়ার মতো সমস্যা যেন আমাদের শরীরে ঝেকে বসেছে। সাধারণত জাঙ্ক ফুড, ভাজা পোড়া, মসলাযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত খাবার রুটিন ইত্যাদি কারণে এই সমস্যা এখন বেশি হচ্ছে।

পেটের এই এসিডিটি এবং আলসার থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত থানকুনি পাতার রস বা থানকুনি পাতার সিদ্ধ পানি খেতে পারেন। থানকুনি পাতায় থাকা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান পেটের এসিডিটি হওয়া থেকে দূরে রাখবে এবং আলসারের মতো কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।

হজমে সহায়তা করবে থানকুনি পাতা

বর্তমানে হজম জনিত সমস্যা যেন ঘরে ঘরে। যে কোন খাবার খেলেই যাদের হজমে সমস্যা হয় তাদের এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে থানকুনি পাতা। নিয়মিত থানকুনি পাতার রস খেলে হজম জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। হজমে সমস্যা দূর করার সাথে সাথে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো রোগ থেকেও মুক্তি দিবে থানকুনি পাতা।

মূত্রাশয়ের সংক্রমণ থেকে মুক্তি দিবে থানকুনি পাতা

থানকুনি পাতায় থাকা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান মুত্রাশয়ের যে কোন প্রদাহজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে দারুণ কার্যকরী। যারা প্রায়ই এ ধরনের সমস্যায় ভুগেন তারা সকালে থানকুনি পাতার রস খেলে এই সমস্যায় উপকার পাবেন। এছাড়া কিছু থানকুনি পাতার সিদ্ধ পানি সাথে একটু মধু মিশিয়ে নিয়মিত খেলে এই ধরনের সমস্যা থেকে চিরদিনের জন্য মুক্তি পাবেন।

রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক করবে থানকুনি পাতা

অনেকেই আছেন যাদের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হয় না। এই ধরনের রোগ কে বলে, সম্বসিস। আবার অনেক কারণেও রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। থানকুনি পাতা রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক করতে সহায়তা করে। থানকুনি পাতার রস নিয়মিত খেলে রক্ত বিশুদ্ধ হয় এবং শরীরে প্রতিটি কোষে সহজেই রক্ত পৌঁছাতে পারে।

আরো পড়ুনঃ পদ্ম বীজ খাওয়ার উপকারিতা- গর্ভাবস্থায় পদ্ম বীজ খাওয়ার উপকারিতা

ব্রেনের কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে থানকুনি পাতা

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে থানকুনি পাতা দারুন উপকারী। নিয়মিত থানকুনি পাতা বা থানকুনি পাতার রস খেলে মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হতে সহায়তা করবে এবং এর ফলে ব্রেনের কার্যক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ব্রেনের স্মৃতিশক্তি ও বৃদ্ধি পাবে।

মুখের ঘা সরিয়ে তুলবে থানকুনি পাতা

মুখের ঘা সারিয়ে তুলতেও থানকুনি পাতা দারুন উপকারি। যারা সারা বছরই মুখের ঘায়ে সমস্যায় থাকেন, তারা নিয়মিত থানকুনি পাতার রস খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। কারণ থানকুনি পাতাতে থাকা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান মুখের ঘা নিরাময়ে দারুন কার্যকরী।

বাতের সমস্যায় মুক্তি দিবে থানকুনি পাতা

অনেকেই বয়স জনিত কারণে বা অন্য যেকোনো কারণে বাতের ব্যথায় সমস্যা কষ্ট পেয়ে থাকেন। তারা নিয়মিত থানকুনি পাতার রস সকালে এবং বিকেলে খেলে বা দুই তিনটা থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেলে উপকার পাবেন। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকগনও বাতের চিকিৎসায় থানকুনি পাতা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

মানসিক স্ট্রেস থেকে মুক্তি দিবে থানকুনি পাতা

মানসিক স্ট্রেস থেকে মুক্তি দিতে পারে থানকুনি পাতা। নিয়মিত থানকুনি পাতার রস খেলে স্ট্রেস হরমোন কম নিঃসরণ হয় বা স্ট্রেস হরমোন নিঃসরণে বাধা দেয়। এর ফলে মানসিক যেকোনো ধরনের চাপ, অবসাদ ইত্যাদি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

ভাল ঘুমের সহায়ক থানকুনি পাতা

যারা প্রায়ই অনিদ্রায় সমস্যায় ভুগেন, তাদের জন্যও থানকুনি পাতা আশীর্বাদস্বরূপ। অনিদ্রজনিত সমস্যা দূর করতে প্রতিদিন সকালে এবং বিকেলে থানকুনি পাতার রস খেলে রাতে ভালো ঘুমের নিশ্চয়তা দিবে। তাই যারা এই ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত থানকুনি পাতার রস বা থানকুনি পাতা ভেজানো পানি খেলে স্নায়ুর শিথিলতা বৃদ্ধি পাবে ফলে ঘুমও ভালো হবে।

শরীরে জ্বালাপোড়া কমাবে থানকুনি পাতা

বিভিন্ন কারণে এবং যে কোন অসুস্থতার জন্য শরীরে জ্বালাপোড়া হতে পারে। এই ধরনের জ্বালাপোড়া থেকে রক্ষা পেতে থানকুনি পাতার রস খেতে পারেন। থানকুনি পাতা শরীরের ভিতরে ঠান্ডা অনুভূতি দিবে যা ম্যাডেকাসসাইড নামক উপাদানের কারণে হয়ে থাকে এবং এর ফলে জ্বালাপোড়া কমাতে সহায়তা করবে।

থানকুনি-পাতার-উপকারিতা-অপকারিতা

ত্বকের যত্নে থানকুনি পাতা

বিভিন্ন রোগ সারানোর সাথে সাথে থানকুনি পাতা ত্বকের যে কোন সমস্যা দূর করে ত্বককে সুন্দর এবং লাবণ্যময় করতে, ত্বকের সজীবতা বজায় রাখতে, ত্বকের লালচে ভাব দূর করতে, ত্বকের যে কোন ধরনের বলি রাখা বা কুচকানো ভাব দূর করতে, ত্বককে অকালে বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে থানকুনি পাতা দারুন উপকারী।

এ কারণে বর্তমানে রূপচর্চার বিভিন্ন পণ্যে থানকুনি পাতার ব্যবহার বাড়ছে। থানকুনি পাতাতে রয়েছে ফ্ল্যাবনয়েড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিটা ক্যারোটিন, ফাইটোকেমিক্যাল, অ্যামিনো এসিড যা আমাদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী উপাদান। এছাড়া ত্বককে ব্রণ মুক্ত করতে এবং ব্রনের দাগ দূর করতে থানকুনি পাতার বিশেষ উপকারী।

আরো পড়ুনঃ ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সকালে খালি পেটে পান করুন এই পাঁচটি পানীয়

কারণ থানকুনি পাতাতে রয়েছে ত্বকের জন্য উপকারী অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান। এক্ষেত্রে থানকুনি পাতা পেস্ট করে মধুর সাথে মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলে ব্রণ দূর হয়, সাথে ব্রণের কারণে সৃষ্ট দাগ দূর করতেও সহায়তা করে।

চুলের যত্নে থানকুনি পাতা

ত্বকের যত্নের সাথে সাথে চুলের যত্নেও থানকুনি পাতা বিশেষ উপকারী। যারা চুল পড়ার সমস্যায় ভুগছেন, চুলের গোড়া মজবুত করতে থানকুনি পাতার রস তেলের সাথে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ব্যবহার করলে উপকার পাবেন। এছাড়া থানকুনি পাতাতে থাকা এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রেখে খুশকি দূর করতেও দারুণ কার্যকরী।

এজন্য বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের চুল পড়া বন্ধের বিভিন্ন তেল এবং আয়ুর্বেদিক তেলে থানকুনি পাতা ব্যবহার হয়ে থাকে।

এই পর্যায়ে নিচে থানকুনি পাতার অপকারিতা সম্পর্কে তুলে ধরা হলোঃ

  • আপনাদের যাদের যেকোনো ভেষজ উদ্ভিদ এবং পাতায় এলার্জি রয়েছে তাদের থানকুনি পাতা খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। এতে মুখ ফুলে যেতে পারে,র‍্যাশ হতে পারে, চুলকানি হতে পারে।

  • পেটের বিভিন্ন সমস্যায় থানকুনি পাতা ব্যবহারে উপকার মিললেও, কোনভাবেই তা অতিরিক্ত খাওয়া যাবেনা। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। পেটের যে কোন সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।

  • যারা লিভারের সমস্যায় ভুগছেন তাদের কোনভাবেই থানকুনি পাতা খাওয়া যাবে না। অবশ্যই এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।

  • শীঘ্রই যারা অপারেশন করেছেন তাদেরও থানকুনি পাতা খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে।

  • অতিরিক্ত থানকুনি পাতা খাওয়ার ফলে বমি বমি ভাব সহ মাথা ঘুরানো সমস্যা হতে পারে।

থানকুনি পাতা কি জাতীয় উদ্ভিদ

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানার পর এখন আপনাদের জানাবো, থানকুনি পাতা কি জাতীয় উদ্ভিদ সে সম্পর্কে মূলতঃ থানকুনি পাতা ছোট বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ, যার পাতা গোলাকার এবংপাতার শেষ প্রান্তে কিছুটা খাজ কাটা থাকে। এই উদ্ভিদের একটি বিশেষত্ব হলো - বিভিন্ন রোগ সারিয়ে তুলতে উদ্ভিদের প্রতিটি অংশই ব্যবহার করা যায়।

আরো পড়ুনঃ ভেষজ উদ্ভিদ তেলাকুচার ১৫টি উপকারিতা

থানকুনি পাতার প্রচলিত নাম টাকা পাতা, ঢোলা মানকিন ইত্যাদি। থানকুনি পাতার বৈজ্ঞানিক নাম-Centella asiatica এবং এর ইংরেজি নাম Indian Pennywort. থানকুনি পাতা Apiaceae পরিবারের সদস্য।

থানকুনি পাতা খেলে কি হয়

থানকুনি পাতা খেলে কি হয় এই সম্পর্কে জানার জন্য আপনারা অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেন। আমাদের চারপাশে অনেক প্রকৃতির অমূল্য উপাদান রয়েছে, যা আমরা সহজে আমাদের জীবনে ব্যবহার করে সুস্থ এবং রোগ মুক্ত থাকতে পারি। সাথে আমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও এসব উপাদান দারুন উপকারি।

এরকম একটি উপাদান হল থানকুনি পাতা। বিভিন্ন রোগ ব্যাধি হতে দূরে থাকতে এবং শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে উপকার পাবেন।

থানকুনি পাতা খেলে কি হয় নিচের ১০টি পয়েন্টে জেনে নিনঃ

  • নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • পেটের যেকোন সমস্যা ভালো করতে থানকুনি পাতার উপর নির্ভর করতে পারেন।
  • পুরাতন আমাশয় রোগ ভালো করতে থানকুনি পাতা খেতে পারেন।
  • থানকুনি পাতা নিদ্রাহীনতা দূর করে মানসিক অবসাদ থেকে দূরে রাখে।
  • নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে শরীরে যে কোন ঘা সহজেই ভালো হয়।
  • নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়ার ফলে বাতের ব্যথা সহ যে কোনো ব্যথা ভালো করা সম্ভব।
  • নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়ার ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • সরিজনিত কাশি ভালো করতে থানকুনি পাতা নিয়মিত খেতে পারেন।
  • গলা ব্যথা ভালো করতেও থানকুনি পাতা ব্যবহার করা হয়।
  • ত্বকের ব্রণ সহ যে কোন সমস্যা দূর করে ত্বকে সতেজ এবং সজীব রাখে থানকুনি পাতা

থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানুন

থানকুনি পাতা খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে ব্লগ পোস্টের এই পর্যায়ে জানতে পারবেন। উপরে আপনারা জেনেছেন, থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত। থানকুনি পাতার উপকারিতা আপনি তখনই পাবেন যখন আপনি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে ভালোভাবে জানবেন। 

তাই থানকুনি পাতার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানার জন্য পোস্টটি পড়তে থাকুন। থানকুনি পাতা থেকে উপকার পেতে বিভিন্নভাবে আপনি থানকুনি পাতা খেতে পারেন।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে থানকুনি পাতার রস খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। অনেকে আবার থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেতেও পছন্দ করেন। এক্ষেত্রে আপনি থানকুনি পাতার রসের সাথে মধু বা চিনি মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে আপনি যদি ডায়াবেটিসের রোগী হয়ে থাকেন তাহলে কোনভাবেই চিনি মেশানো যাবেনা।

এছাড়া ত্বকে যে কোন ক্ষত বা মুখের ত্বকে ব্যবহারের জন্য থানকুনি পাতার পেস্ট ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অনেকে আবার থানকুনি পাতা পানির সাথে সিদ্ধ করে মধু বা একটু চিনি মিশিয়ে খেতে পছন্দ করেন।

যেকোনো চিকিৎসা হিসেবে থানকুনি পাতা, থানকুনি পাতার রস, বা থানকুনি পাতার সিদ্ধ পানি সাধারণত সকালে এবং প্রয়োজনে বিকেলে খাওয়ার কথা বলা হয়ে থাকে। আপনি যখন সঠিক নিয়মে থানকুনি পাতা খাবেন, এর উপকার আপনি হাতেনাতে পাবেন।

আমাদের দেশে থানকুনি পাতা আরো বিভিন্নভাবে খাওয়া হয়ে থাকে। যেমনঃ থানকুনি পাতা দিয়ে বড়া তৈরি করে খাওয়া যায়। এটি খেতে যেমন সুস্বাদু হয় তেমনি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। অনেকে আবার থানকুনি পাতার ভর্তা খেয়ে থাকেন। আবার শাক হিসেবেও থানকুনি পাতার ব্যবহার প্রচলিত রয়েছে।

থানকুনি-পাতার-উপকারিতা-অপকারিতা

যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি পাতার উপকারিতা

যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি পাতার রয়েছে বিশেষ উপকারিতা। নিয়মিত থানকুনি পাতার রস খেলে চেহারা তারুণ্য বজায়, থাকে ত্বক থাকে টান টান। প্রকৃতির নিয়মে আমাদের বয়স বাড়বেই, কিন্তু হাতের কাছে থাকা কিছু ভেষজ উপাদান দিয়ে আমরা এই প্রক্রিয়াকে ধীর করতে পারি।

এরকম একটি ভেষজ উপাদান হলো থানকুনি পাতা। আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা, এই থানকুনি পাতার রস নিয়মিত দুধের সাথে পান করলে আমাদের বয়স বাড়লেও চেহারা থাকবে যৌবনের মত। এজন্য আপনার দৈনিক ডায়েটে সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন সকালে এক গ্লাস দুধের সাথে ৬ থেকে ৭টি বা এক মুঠো পরিমান থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে পান করতে হবে।

এছাড়া চেহারায় ব্রণ এবং ব্রনের দাগ দূর করে দাগ মুক্ত করতে এবং ত্বকের সতেজতা বজায় রাখতে নিয়মিত থানকুনি পাতার রস মুখে লাগালে উপকার পাবেন। কারণ থানকুনি পাতাতে রয়েছে আমাদের ত্বকের জন্য উপকারী অ্যান্টিঅক্সিডেনট, এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদন এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়াল সহ অনেক উপাদান।

থানকুনি পাতা শুধু চেহারার লাবণ্যতা ধরে রেখে তারল্য বজায় রাখে তা নয়, নিয়মিত এভাবে থানকুনি পাতার রস খেলে বয়স যত বাড়ুক না কেন আপনার যৌন জীবনও থাকবে তারুণ্যের মত।

গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতা খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে যদি আপনি জানতে চান, তাহলে আর্টিকেলের এই অংশটি পড়ুন। থানকুনি পাতার ভেষজ উপাদান গুলো গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের অনেক ক্ষেত্রেই অনেক উপকার হতে পারে।

নিচে গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতার উপকারিতা গুলো জেনে নিনঃ

  • গর্ভাবস্থায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থানকুনি পাতা। কারণ থানকুনি পাতাতে রয়েছে ভিটামিন সি যা গর্ভবতী মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • থানকুনি পাতায় থাকা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান গর্ভাবস্থার সময় যেকোনো ধরনের ব্যথা যেমনঃ বাতের ব্যথা, পিঠের ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে।
  • থানকুনি পাতায় থাকা অ্যামিনো এসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সহ অন্যান্য উপাদান স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
  • গর্ভাবস্থায় সাধারণ একটি সমস্যা হলো কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা। এই সময় নিয়মিত থানকুনি পাতার রস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়। কারণ থানকুনি পাতার রস হজমে সহায়তা করে।
  • গর্ভাবস্থায় অনেক মায়েরাই নিদ্রাহীনতায় ভুগেন। এই সময় নিয়মিত থানকুনি পাতার রস খেলে নিদ্রাহীনতা দূর হবে।

উপরে গর্ভাবস্থায় থানকুনি পাতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। কিন্তু গর্ব অবস্থায় থানকুনি পাতা কোনভাবেই বেশি খাওয়া যাবেনা। এছাড়া গর্ব অবস্থায় সময় যে কোন খাবার খাদ্য তালিকায় রাখার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

থানকুনি পাতা কি ফর্সা করে

থানকুনি পাতা কি ফর্সা করে এই সম্পর্কে এখন আপনারা জানতে পারবেন। ত্বকের রং উজ্জ্বল এবং ফর্সা করতে যদিও আমরা কেমিক্যাল যুক্ত ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করি, তবে হাতের নাগালে থাকা কিছু প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান নিয়মিত ব্যবহার করেও ত্বক উজ্জ্বল এবং ফর্সা করা যায়।

থানকুনি পাতার রস নিয়মিত পান করলে এবং থানকুনি পাতা দিয়ে ফেসপ্যাক ব্যবহার করলে ত্বকের রং অনেকটাই উজ্জ্বল এবং ফর্সা হবে। কারণ থানকুনি পাতাতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইটো কেমিক্যাল, বিটা করোটিন, অ্যামিনো অ্যাসিড নামক ত্বকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

এই সকল উপাদান ত্বককে ভেতর থেকে পুষ্টি যুগিয়ে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিসহ ত্বকের যেকোনো ধরনের দাগ দূর করে, ত্বকের অকাল বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই ত্বকের রং উজ্জ্বল এবং ফর্সা দেখতে হয়।

থানকুনি পাতার ভেষজ উপাদান গুলো জেনে নিন

থানকুনি পাতা থেকে আমরা যে উপকার গুলো পাই সেগুলো মূলতঃ এই পাতায় বিদ্যমান ভেষজ উপাদানের জন্য। থানকুনি পাতায় থাকা রোগ সারানোর এই বিশেষ উপাদানের জন্যই আয়ুর্বেদিক এবং কবিরাজি চিকিৎসকগণ এই পাতার উপর নির্ভর করে থাকেন। এছাড়া আমাদের ত্বকের যত্নে উপকারী বৈশিষ্ট্যের জন্য বিভিন্ন রূপচর্চার পণ্য তৈরিতে এই থানকুনি পাতা ব্যবহার করা হয়।

আরো পড়ুনঃ পেয়ারা পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা

থানকুনি পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, আয়রন, মিনারেলস, অ্যামিনো এসিড, ফাটি এসিড, ফাইটো কেমিক্যাল, বিটা কারোটিন, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান। এছাড়া রয়েছে ফ্ল্যাবোনয়েড এবং ম্যাডেকাসসাইড নামক উপাদান যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর ভরপুর ভান্ডার।

পরিশেষে

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আজকের ব্লগ পোস্টে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। ভেষজ উদ্ভিদ থানকুনি পাতায় থাকা বিশেষ উপাদানের জন্য বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় বহুল প্রচলিত একটি উদ্ভিদ। আমাদের দেশের যেকোনো জায়গায় সব সময় দেখতে পাওয়া যায় উপকারী এই উদ্ভিদটি। তাই বিভিন্ন রোগ সারিয়ে তুলতে সহজলভ্য এই উদ্ভিদটি ব্যবহার করতে পারেন।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপকারিতা থাকলেও এই উদ্ভিদের উপকারী দিক ই বেশি। তাই বলা যায় সচেতন ভাবে যদি আপনি এই উদ্ভিদকে বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারেন তাহলে আপনার জন্য সুফলই বয়ে আনবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

passiondrivefiona র নীতিমালা মেনে comment করুন। প্রতিটি comment রিভিউ করা হয়;

comment url