রাতে কি খেলে ওজন কমে বিস্তারিত জেনে নিন

রাতে কি খেলে ওজন কমে এ সম্পর্কে আপনি যদি জানতে চান তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য। কারণ আজকের এই পোস্টে এমন কিছু খাবারের কথা বলা হয়েছে যেগুলো রাতে খেলে ওজন কমাতে সহায়ক হবে। এছাড়া জানতে পারবেন কি খেলে দ্রুত ওজন কমে এই বিষয়ে।

রাতে-কি-খেলে-ওজন-কমে

পোস্ট সূচীপত্রঃ  ওজন কমানোর সময় আমরা সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি নিয়ে চিন্তায় থাকি তা হলো রাতের খাবার। অর্থাৎ যারা অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান তারা রাতে কি খাবেন আর কি খাবেন না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। আমরা মনে করি, ওজন কমানোর জন্য রাতে না খাওয়াই ভালো হবে কিন্তু এ ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। কারণ এতে তো আপনার ওজন কমবেই না বরং শরীরের ক্ষতি হতে পারে।

রাতে কি খেলে ওজন কমে

পোষ্টের শুরুতে রাতে কি খেলে ওজন কমে এই সম্পর্কে আপনাদের জানাবো। দেখুন, আপনি যদি ওজন কমাতে চান তাহলে আপনার রাতের খাবার সন্ধ্যা ৭টার মধ্যেই সেরে নেওয়া ভালো। আপনি যখন সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে রাতের খাবার খাবেন তখন অনেক সময় দেখা যায় ঘুমানোর আগে ক্ষুধার্ত অনুভব করেন।

সেই ক্ষুধা মেটানোর জন্য অনেকে রাতে খায় কেক, চিপস, চকলেট সহ আরও অনেক কিছু। আবার অনেকে ওজন বাড়ার ভয় কিছু না খেয়েই শুয়ে পড়ে। দুটিতেই আছে ক্ষতিকর প্রভাব। মূলতঃ এখানে রাতের খাবারের এক বা দুই ঘন্টা পর পেটে ক্ষুধা অনুভব হলে কি খেলে ওজন কমাতে সহায়ক হবে তা বুঝানো হয়েছে।

আবার একটি গবেষনা থেকে জানা গেছে যে, এটি মনের ক্ষুধা। তাই বলে ক্ষুধা দমিয়ে রাখা যাবে তাও নয়। বুদ্ধিমানরাই খুঁজবে রাতে ঘুমানোর আগে এমন কিছু খাবার, যা খেলে ওজন বাড়ে না উল্টো আরও ওজন কমে। এমন সব খাবার নিয়েই আজকের পোস্ট, যে খাবারগুলো রাতে খেলে ওজন কমাতে সহায়তা করবে।

 তাহলে নিচে জেনে নিন রাতে কি খেলে ওজন কমে সে সম্পর্কে বিস্তারিত-

কলা

কলা, বাংলাদেশে সবাই এই ফলের সাথে পরিচিত। শুধু এই ফল না বরং এর বিভিন্ন পুষ্টিগুণের সাথেও পরিচিত। কলা খুব সস্তা আর সহজলভ্য বারোমাসি ফল। যদি আপনার ধারণা হয়ে থাকে যে, কলা খেলে ওজন বাড়ে তাহলে এই চিন্তাধারা বাদ দিন। কেননা কলা খেলে মোটেই ওজন বাড়ে না উল্টো আরও ওজন কমে।

এই ফল খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। কেননা কলাতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার, যা পেট অনেক্ষণ ভরা রাখে। ফলে ক্ষুধাও আসে না আবার অন্য খাবার খাওয়ার ইচ্ছেও থাকে না। যা ওজন বৃদ্ধি থেকে রক্ষা করে।

পিনাট বাটার

পিনাট বাটারও খাওয়া যায় রাতের ক্ষুধা মেটানোর জন্য। বিশ্বাস না হলেও এটাই সত্যি। পিনাট বাটারে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি ও উপকার। এতে রয়েছে প্রোটিন ও ট্রিপটোফান। দুটিই শরীরের জন্য খুব উপকারি উপাদান। চিনাবাদামে থাকা প্রোটিন যা পেশি তৈরি করতে সহায়তা করে। আবার ট্রিপটোফান ঘুমের মধ্যেই ক্যালরির ধ্বংস করে। তাই ওজন কমাতে ও ক্ষুধা মেটাতে পিনাট বাটার খাওয়া খুব উপকারি।

কলার সাথে পিনাট বাটার খাওয়ার কোনো বিকল্প নাই। এর সাথে যদি কলা খাওয়া হয় তাহলে আরও বেশি উপকার হয়। কলায় থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম যা ট্রিপটোফান এর সাথে মিশে ওজন আরও দ্রুত কমায়। 

দই

ঘুমের মধ্যে পেশি গঠন করার জন্য দই এর বিকল্প নেই। রাতে এক বাটি দই খেয়ে ঘুমালে ওজন কমাতে সাহায্য করবে। তবে এখানে অবশ্যই মিষ্টি দই এর কথা বলা হচ্ছে না, টক দই এর কথা বলা হচ্ছে। টক দইয়ের বদলে গ্রিক ইয়োগার্ট খেলেও কোনো সমস্যা হবে না। টক দইয়ের মধ্যে থাকা মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ওজন কমাতে সাহায্য করে। 

আরো পড়ুনঃ টক দই খাওয়ার উপকারিতা - সকালে টক দই খাওয়ার উপকারিতা

ছানা

ঘুমানোর আগে ছানাও খাওয়া যেতে পারে। এতে ওজন বাড়ার বা পেট খারাপ করার কোনো ভয় থাকে না। ছানার বিভিন্ন পুষ্টিগুণের মধ্যে প্রোটিন রয়েছে। প্রোটিন মানুষের দেহের পেশি সুগঠিত করে। এছাড়া ছানা হজমে সহায়তা করতে এবং সাথে দ্রুত ওজন কমাতেও দারুন কার্যকরী।

 আমন্ড

রাতে ক্ষুধা মেটানোর জন্য আমন্ড খাওয়া যেতে পারে। আমন্ডে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে, যার ফলে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা কম থাকে। আবার আমন্ডে রয়েছে প্রোটিন ও ফাইবার। দুটি উপাদানই ওজন কমাতে সাহায্য করে। আমন্ডে রয়েছে অ্যান্টি অক্সাইড, যা ওজন কমানোর সাথে সাথে আপনার ত্বক এবং চুলের  জন্য দারুন উপকারি হবে।

ওজন কমাতে রাতের খাবারের আরো কিছু বিবেচ্য বিষয়

রাতে কি খেলে ওজন কমে জানানোর পর এখন আপনাদের জানার সুবিধার্থে আলোচনা করব, রাতের খাবারের আরো কিছু বিবেচ্য বিষয় যেগুলো ওজন কমাতে সহায়তা করবে। ওজন কমানোর জন্য রাতে শুধু খাবারের দিকে মনোযোগ না দিয়ে আরো কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে। তাহলে আপনার কাঙ্খিত ওজন কমানোর লক্ষ্য পূরণ হবে।

এখন জেনে নিন, ওজন কমাতে রাতের খাবারের যে বিষয়গুলো আপনাকে মেনে চলতে হবে-
  • রাতে ঘুমানোর দুই থেকে তিন ঘন্টা আগে রাতে খাবার খাওয়ার সঠিক সময়। এক্ষেত্রে আপনার রাতে ঘুমানোর সময় অনুযায়ী আপনার খাওয়ার সময় নির্ধারণ করতে হবে। তবে গবেষণায় বলা হয়েছে, সন্ধ্যা ছয়টা থেকে সাতটার মধ্যে রাতে খাবার আপনাকে ওজন কমানোর সাথে সাথে অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা থেকেও দূরে রাখবে।
  • দুপুর এবং রাতের খাবারের মাঝামাঝি হালকা নাস্তা জাতীয় খাবারের কথা বলা হয়ে থাকে। এই নাস্তা হতে পারে এক মুঠো বাদামের সাথে গ্রিন টি, যা আপনাকে রাতে অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত রাখবে।
  • রাতের খাবার হিসেবে পূর্ণ শস্যযুক্ত খাবার যেমনঃ লাল আটার রুটি, লাল চালের ভাত, ওটস গ্রহণ করার ফলে আপনার ওজন কমাতে সহায়তা করবে। তবে ওজন কমাতে কোন খাবার কতটুকু গ্রহণ স্বাস্থ্যসম্মত হবে সে বিষয়ে অবশ্যই ডায়েটেশিয়ান এর পরামর্শ নিতে হবে।
  • রাতের খাবার খাওয়ার সময় অবশ্যই খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আবার অনেকেই মোবাইল বা টিভি দেখার সাথে সাথে খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। এই অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে কারণ এতে নিজের অজান্তেই বেশি খাওয়া হতে পারে।
  • রাতের খাবারে আপনাকে অবশ্যই ক্যালরির দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। এই সময় ক্যালরিযুক্ত খাবার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো সিদ্ধান্ত।

রাতে না খেলে কি ওজন কমে

উপরে আপনারা জেনেছেন রাতে কি খেলে ওজন কমে সে সম্পর্কে, এখন জানতে পারবেন রাতে না খেলে ওজন কমে কিনা সে সম্পর্কে। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ওজন কমানোর জন্য রাতে না খেয়ে থাকি।

এটা ঠিক, রাতে না খেলে ওজন কমানোর দৌড়ে আপনি কিছুটা এগিয়ে যাবেন ঠিকই, কারণ রাতে না খাওয়ার ফলে শরীরের বিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধি পায়, ফলে কিছুটা হলেও ওজন কমাতে সহায়ক হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন রাতে না খাওয়ার ফলে আপনার স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে।

তাই ওজন কমানোর জন্য রাতে দীর্ঘমেয়াদি না খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই পুষ্টিবিদের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। ওজন কমাতে রাতের খাবার একেবারে বাদ না দিয়ে দিনের খাবারকে কয়েকটি অংশে ভাগ করে নিলে, পরিমার মত খাবার গ্রহণ এবং কম ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করা ভালো সিদ্ধান্ত হবে।

  রাতে দীর্ঘদিন না খাওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে। যেমন:
  • রাতে না খাওয়ার ফলে ঘুমের সমস্যা হতে পারে
  • আপনার শরীর দুর্বল হয়ে পড়তে পারে
  • এসিডিটি সমস্যা তৈরি হতে পারে
  • মেজাজ খিটখিটে হতে পারে
  • ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে
  • শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তির অভাবে অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কি খেলে দ্রুত ওজন কমে জেনে নিন

রাতে কি খেলে ওজন কমে জানার পর পোষ্টের এই অংশে জানতে পারবেন, কি খেলে দ্রুত ওজন কমে সে সম্পর্কে। অনেকেই শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য এমন কিছু খাবার খুঁজেন, যা খেলে দ্রুত ওজন কমবে। এমন খাবার কি সত্যিই আছে, যা খেলে ওজন দ্রুত কমবে?

এমন কোন খাবার নেই যা আপনার অতিরিক্ত ওজন দ্রুত কমাবে, তবে কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলো নিয়মিত খেলে আপনার অতিরিক্ত ওজন দ্রুত কমাতে দারুন সহায়তা করবে। এই পর্যায়ে আপনাদের সেই খাবারগুলো সম্পর্কে বলবো।

তাহলে নিচে এক নজরে দেখে নিন যে খাবার গুলো আপনার ওজন দ্রুত কমাতে সহায়তা করবে-

সবুজ শাকসবজি

ব্রোকলিঃ সবুজ শাক সবজির কথা আসবে আর সেখানে ব্রোকলির নাম আসবে না তা অবিশ্বাস্য।ব্রোকলিতে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। যার মধ্যে প্রোটিন, ফাইবার, মিনারেল এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন অন্যতম পুষ্টিগুণ হিসেবে বিবেচিত। এতে ক্যালরি কম পরিমাণে রয়েছে। তাই বলাই যেতে পারে যে এটি দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে।

আবার ব্রোকলি খেলে অনেক্ষণ তা পেটে থাকে ফলে তাড়াতাড়ি ক্ষুধা লাগেনা। তাই আপনি চাইলে আপনার খাবারের তালিকায় ব্রোকলি রাখতে পারেন।

সবুজ শাকঃ সবুজ শাক সবজির মধ্যে সবুজ শাকও অন্যতম একটি ওজন কমানোর খাবার হিসেবে বিবেচিত। পাতাযুক্ত সবুজ শাক (কেল, কলার্ড মিলস, পালং শাক ইত্যাদি) মধ্যে রয়েছে ফাইবার, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাংগানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, থাইলাকয়েড, উদ্ভিদ যৌগ, প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং আরও অনেক কিছু।

এগুলোর পুষ্টির কারণে আপনি হাইড্রেটেড থাকতে পারেন। এছাড়াও ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এই সবুজ শাক। 
রাতে-কি-খেলে-ওজন-কমে

মাটির উপর যেসব সবজি জন্মায়ঃ মাটির উপর যেসব সবজি জন্মায় এবং যেসব সবজির ভেতরের অংশ সাদা সেসব সবজির উপকার বেশি হয়ে থাকে। বলা হয় মাটির নিচে যেসব সবজি জন্মায় (গাজর, আলু, মুলা ইত্যাদি) সেসব সবজি খেলে দ্রুত ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ওজন কমানোর সময় এই সকল খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। 

সালাদঃ সবারই জানা যে সালাদ অত্যন্ত পুষ্টিকর ও ওজন কমানোর সবচেয়ে ভালো উপায়। তবে সালাদ তৈরির সময় কিছু বিশেষ জিনিস খেয়াল রাখতে হবে। সালাদে অবশ্যই সবুজ শাক সবজি ছাড়া অন্য কিছু যেমন- মেয়নিজ, মাংস, বিভিন্ন সস ইত্যাদি দেওয়া যাবে না।

তা না হলে ওজন কমার বদলে উল্টো আরও বাড়বে। তবে যদি আপনি চান তাহলে সালাদে মাশরুম ব্যবহার করতে পারেন। এতে ওজন বাড়বে না। মাশরুম ওজন কমাতে সাহায্য করে।

লেটুস পাতাঃ লেটুস পাতায় অত্যন্ত কম পরিমাণে ক্যালরি রয়েছে। সুতরাং এটিকে আপনার খাবারের তালিকায় অন্তর্ভক্ত করা হবে আপনার জন্যই খুব উপকার। এমনিতেও এটি ডায়েট এ অন্তর্ভুক্ত খাবার হিসেবে খুব পরিচিত একটি সবজি। বলা হয়েছে, এক পাউন্ড লেটুস পাতায় ৬০-৭০% পরিমাণ কিলো ক্যালরি থাকে।

কাঁচকলাঃ আপনি যদি দ্রুত আপনার অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান তাহলে খাদ্য তালিকায় যে সবজিটি রাখতে হবে তা হল কাঁচকলা। ওজন কমাতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে কাজ কলার ভূমিকা জুড়ি মেলা ভার। কাঁচকলা কিভাবে দ্রুত ওজন কমাতে সহায়তা করে এটা নিয়ে আমার একটি পোস্ট রয়েছে, আপনি পোস্টটি দেখে আসতে পারেন।

কাঁচকলার এই পোষ্টটি আশা করি আপনার ওজন কমানোর জার্নিতে দারুন উপকারে আসবে।

উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার

ডিমঃ ডিমের উপকারিতার শেষ নেই। এই ডিম ওজন কমাতেও অনেক সাহায্য করে। অবাক করার বিষয় এটি! ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। এছাড়াও আরও অনেক পুষ্টি উপাদানও রয়েছে, তবে এই প্রোটিনই মূলতঃ পেটকে বেশিক্ষণ ভরে রাখতে সাহায্য করে। অর্থাৎ ডিম খেলে পেট বেশিক্ষণ ভরা থাকে। যার ফলে ক্ষুধা ভাবও হয় না; বেশিক্ষণ না খেয়ে থাকা যায়।

ওজন কমানোর সময় অবশ্যই আপনার খাদ্য তালিকায় ডিম রাখতে হবে। কারণ ওজন কমানোর সময় আমরা বিভিন্ন খাবার আমাদের খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিয়ে থাকি, যা প্রতিদিন ডিম খাওয়ার মাধ্যমে সেই সব ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। এছাড়া এতে কম পরিমাণে ক্যালরি রয়েছে। যার ফলে ওজন বাড়ার সম্ভবনাও খুব কম হয়।

মাংসঃ অনেকেই বলে থাকে, যে মাংস খেলেই ওজন বেড়ে যাবে। তাই ডায়েট বা ওজন কমাতে হলে অবশ্যই মাংস খাওয়া ছাড়তে হবে। তবে এই ধারণা সম্পুর্ণ সঠিকও নয়। ওজন বাড়ে চর্বি খেলে। তাই আপনারা চাইলেই চর্বিহীন মাংস খেয়েই মাংস খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা দূর করতে পারেন। পুরোপুরি আমিষ বাদ দিলে দেহ অনেক পুষ্টি থেকেই দূরে সরে যায়। তাই আমিষ একেবারে বাদ না দিয়ে চর্বিহীন মাংস খেলে বেশি উপকার হয়।

মটরশুটিঃ মটরশুটি খেলেও কমে যেতে পারে আপনার ওজন। হয়তো বিশ্বাস হবে না আপনার কিন্তু এটাই সত্যি। মটরশুটি খেলে পেট অনেক্ষণ ভরা থাকে এবং ক্ষুধা ভাব আসে না। তাই বেশি কিছু খেতেও হয় না। তাই বলা হয়েছে মটরশুটিও আপনার ওজন কমাতে সহায়তা করে থাকে। মটরশুটিতে রয়েছে ফাইবার ও প্রোটিন; দুটি পুষ্টি উপাদানই ওজন কমাতে অনেক উপকারই।

বাদামঃ ওজন কমাতে দ্রুত সহায়তা করবে বিভিন্ন ধরনের বাদাম। এটা হতে পারে চীনা বাদাম, পেস্তা বাদাম, আখরোট, কাঠবাদাম ইত্যাদি। বিকেলের নাস্তার অংশ হিসেবে এক মুঠো চিনেবাদাম খেয়ে নিতে পারেন। এতেও আপনার ওজন কমাতে দারুন সহায়তা করবে।

টক জাতীয় ফল

আঙ্গুরঃ হ্যাঁ, আঙ্গুরও ওজন কমাতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ফলিক এসিড, ফাইবার, পটাশিয়াম এবং আরও অনেক কিছু। তবে উল্লেখিত পুষ্টিগুণ মূলতঃ ওজন কমাতে বেশি ভূমিকা পালন করে। শুধু ওজন কমানোর জন্য নয় বিভিন্ন সুবিধা যেমন- হৃৎপিন্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

জাম্বুরাঃ জাম্বুরা যে ওজন কমায়, এটি অনেকেরই অজানা। জাম্বুরাতে অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যেগুল অনেক উপকারি। যার মধ্যে ফাইটোকেমিকালস্ ইনসুলিন (phytochemicals insulin) ওজন কমাতে উপকারি, যা লেভেল কমায়। এছাড়াও এর একটি বিশেষ গুণ হচ্ছে শরীরে যে ক্যালরি থাকে সেগুলকে এটি চর্বিতে রুমান্তর করতে দেয় না, বরং এনার্জিতে রুপান্তরিত করে।

এর জন্যই হয়ত জ্বর হলে আমরা জাম্বুরা খেয়ে থাকি। বলা হয়েছে, গবেষনা থেকে উঠে এসেছে যে, প্রতিদিন সকাল, দুপুর, রাত অর্থাৎ প্রতিদিন তিন বার খাওয়ার আগে অর্ধেক জাম্বুরা খেয়ে নিলে বা জাম্বুরা জুস পান করলে হবে অনেক উপকার। এভাবে অনেক ওজন কমানো সম্ভব!

এছাড়া বিভিন্ন ধরনের দেশি টক ফল যেমনঃ জলপাই, বরই, আমড়া ইত্যাদি দ্রুত ওজন কমাতে সহায়তা করবে।

পূর্ণ শস্য যুক্ত খাবার

দ্রুত ওজন কমানোর অনেক পদ্ধতি রয়েছে। এর মধ্যে আমরা বেশিরভাগটাই জেনে নিয়েছি। তবে দ্রুত ওজন কমানোর সবচেয়ে কার্যকারী উপায় হলো খাদ্যতালিকায় পুর্ণ শস্য যুক্ত খাবার রাখা। কিন্তু কেন? নিশ্চই আপনাদের জানতে ইচ্ছে করছে। সকালের নাস্তা থেকে রাতের খাবার পর্যন্ত আমাদের প্রধান খাদ্য হিসেবে থাকে ভাত ও রুটি। দুটিই শস্য জাতীয় খাবার।

তবে এটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয় না, আসল বিষয় হচ্ছে আপনি এই ভাত আর রুটি কোন ধরনের উপাদান দিয়ে তৈরি করছেন। খাবারগুল সাদা আটা বা সাদা চাল দিয়ে তৈরী করলে দেহে ক্যালরি বাড়বে। এগুল শস্য যুক্ত খাবার।

কিন্তু খাবার গুলো যদি লাল আটা বা লাল চাল দিয়ে তৈরী করেন তাহলে আপনার দেহে ক্যালরি খুব বাড়বে না। এগুল পুর্ণ শস্য যুক্ত খাবার। ওটসও একধরনের পুর্ণ শস্য যুক্ত খাবার যা আপনি এমনি ক্ষুধা মেটানো বা সকালের নাস্তা হিসেবে বিভিন্ন ফলের সাথে বা টক দইয়ের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।অথবা দুপুর বা রাতের খাবার হিসেবে বিভিন্ন সবজি দিয়ে ওটস এর তৈরী খিচুরিও খেতে পারেন।

অন্যান্য আরও উপায়

গ্রিন টিঃ এটি অবশ্যই নিঃসন্দেহে বলা যায় যে গ্রিন টি-ও ওজন কমাতে সাহায্য করে। শরীরে এক ধরনের উপাদান আছে যার নাম হলো LDL cholestorol, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়াও এক কাপ গ্রিন টি এর মাধ্যমে ৭০ ক্যালরি পর্যন্ত ফ্যাট বার্ণ করা যায়। অর্থাৎ আপনি চাইলে ৫ পাউন্ডের বেশি ক্যালরি বার্ণ করতে পারবেন শুধু মাত্র নিয়মিত গ্রিন টি খেয়ে!

গ্রিন টি তে ক্যাটেচিন (catechin) নামক এক ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্যাট বার্ণ করতে সক্ষম। শুধু ওজন কমাতেই গ্রিন টি সহায়তা করে না, বরং শরীরের আরও অন্যান্য উপকারও করে।
রাতে-কি-খেলে-ওজন-কমে

বিভিন্ন ধরনের স্যুপঃ ওজন কমানোর সময় নিয়মিত খেতে পারেন বিভিন্ন সবজি দিয়ে তৈরি সুপ। এই সময় কর্নফ্লাওয়ার দিয়ে তৈরি মজাদার ভারী স্যুপ এড়িয়ে ক্লিয়ার স্যুপ খেলে উপকার পাবেন। এ ছাড়া মুরগির মাংস বা হাড় দিয়ে তৈরি স্যুপও নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। সন্ধ্যায় যেকোনো ভারী খাবারের পরিবর্তে সবজি এবং মুরগির মাংস দিয়ে তৈরি এক বাটি স্বাস্থ্যকর সঙ্গী করে নিন।

অলিভ ওয়েলঃ অলিভ ওয়েল শরীরের জন্য খুবই উপকারী, এটি সবারই জানা। তবে এক্সট্রা ভারজিন অলিভ ওয়েল খেলে শরীরের উপকার হয়। এটিতে থাকা মনস্যাচুরেটেড ফ্যাট (monounsaturated fat) ক্যালরি বার্ণ করে। আপনি চাইলে বিভিন্ন খাবারে আপনি জেতেল ব্যবহার করেন তার বিকল্প হিসেবে এক্সট্রা ভারজিন ওলিভ ওয়েল ব্যবহার করতে পারেন।

খাবারটি হতে পারে সালাদ বা দৈনন্দিন বিভিন্ন তেল দিয়ে রান্না খাবার ইত্যাদি। তবে ওজন কমাতে চাইলে অবশ্যই ভাজা পোড়া, জাঙ্ক ফুড, ফাস্টফুড বাদ দিয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াই অন্যতম হবে।

মাশরুমঃ মাশরুম খাওয়ার মাধ্যমেও সম্ভব ওজন কমানো। চর্বিযুক্ত আমিষ জাতীয় খাবারের বদলে মাশরুম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে খুব দ্রুতই ওজন কমানো সম্ভব। মাশরুম শরীরের জন্য খুব স্বাস্থ্যকর, এটিতে খুব কম পরিমাণে ক্যালরি রয়েছে। এক কাপ মাশরুমে মাত্র ৪৪ ক্যালরি রয়েছে, এটি বিশ্বাস না হলেও সত্যি!  

টক দইঃ ওজন কমাতে টক দইয়ের ভুমিকা আমরা কম-বেশি সবাই জানি। ওজন কমানোর একটি বিকল্প উপায় হলো এমন কোনো খাবার খাওয়া যাতে পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে। টক দই এই নিয়ম অনুসারে চলে। টক দইয়ে রয়েছে ভিটামিন ও প্রোটিন যা মূলতঃ পেট ভরা ভরা ভাব রাখতে সাহায্য করে। টক দই বিভিন্ন খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। খাবারটি হতে পারে সালাদ, শসা ইত্যাদি। 

পানিঃ পানি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। পানি দ্রুত ওজন কমাতেও সহায়তা করে। বলা হয়ে থাকে, যে কোন খাবারের ৩০ মিনিট আগে এক গ্লাস পানি পান আপনাকে বাড়তি খাওয়া থেকে দূরে রাখবে।

এছাড়া দিনে কয়েকবার কুসুম গরম পানি পান করার ফলে আপনার শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধিতে সহায়তা করার সাথে সাথে অতিরিক্ত চর্বি কাটাতেও সহায়তা করবে।

পরিশেষে

আজকের পোস্টে রাতে কি খেলে ওজন কমে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।ওজন কমানোর জন্য আমাদের চেষ্টার শেষ নেই। বিভিন্ন উপায়ে আমরা অতিরিক্ত ওজন কমানোর চেষ্টা করে থাকি কিন্তু অনেক সময় তা ব্যর্থ হয়। আজকের পোস্টে রাতে কোন কোন খাবার ওজন কমাতে সহায়তা করে সে সম্পর্কে আশা করি আপনারা জানতে পেরেছেন।

এই খাবারগুলো রাতে খাওয়ার ফলে আপনার ওজন কমানোর জার্নিকে সহজ করে দিবে। এছাড়া আমরা আরেকটি যে বিষয় নিয়ে সবসময় গুগলে সার্চ দিয়ে থাকি তা হল, কি খেলে দ্রুত ওজন কমবে! আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা জানতে পেরেছেন কোন কোন খাবার দ্রুত ওজন কমাতে সহায়তা করবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

passiondrivefiona র নীতিমালা মেনে comment করুন। প্রতিটি comment রিভিউ করা হয়;

comment url