শরীর অতিরিক্ত দুর্বল লাগার কারণ এবং দুর্বলতা দূর করার উপায়

হঠাৎ শরীর অতিরিক্ত দুর্বল লাগছে কিন্তু শরীর দুর্বল লাগার কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। হয়তো শারীরিক এই দুর্বলতা কে খুব একটা গুরুত্বও দিচ্ছেন না। আজকের এই পোস্ট থেকে শরীর অতিরিক্ত দুর্বল লাগার কারণ এবং কি করলে এই দুর্বলতা দূর করা যাবে তা বিস্তারিত জানতে পারবেন।

ইমেজ

পোস্ট সূচিপত্রঃমনে করি, সবকিছু ঠিকঠাক কোন কারণে হয়তো শরীর দুর্বল লাগছে আবার পরে ঠিক হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে সাধারণ কোন কারণে শরীর দুর্বল হলে দৈনন্দিন কিছু অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমেই দূর করা সম্ভব। কিন্তু যদি আপনি সবসময়ই শরীর দুর্বল অনুভব করেন তাহলে অবশ্যই সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

শরীর দুর্বল লাগার কারণ

যান্ত্রিক এই জীবনে বিভিন্ন কারণে আমরা অনেক সময় শারীরিকভাবে দুর্বলতা বোধ করি। অনেক সময় পরিমিত ঘুমের অভাব, শরীরে প্রয়োজন অনুযায়ী পুষ্টি যুক্ত খাবার না খাওয়া, নিয়মিত শরীর চর্চার অভাব ইত্যাদি কারণে শরীর দুর্বল লাগতে পারে। এক্ষেত্রে পরিমিত ঘুম, সময় মত খাবার গ্রহণ, নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন ইত্যাদির মাধ্যমে এই দুর্বলতা দূর করা সম্ভব।

আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস নির্মলের মহা ঔষধ সজনে পাতার গুড়ো খাওয়ার নিয়ম

কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আবার কিছু কিছু দুর্বলতা শরীরে বড় কোন রোগের ইঙ্গিত দিতে পারে। শরীরে কোন দীর্ঘমেয়াদি রোগ বাসা বাঁধলে আমরা শারীরিকভাবে দুর্বল বোধ করি। সাময়িকভাবে হয়তো আমরা এই দুর্বলতাকে খুব একটা গুরুত্ব দেই না কিন্তু যদি আপনার সব সময় অবসাদ, ক্লান্তি এবং শরীর দুর্বল লাগে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

তাই শরীর অতিরিক্ত দুর্বল লাগার কারণ গুলো সম্পর্কে আপনাদের ভালোভাবে জানা থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া খুব সহজ হবে।

শরীরে অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতার কারণে দুর্বলতা

আমাদের শরীরে যখন আয়রনের ঘাটতি দেখা যায় তখন এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা তৈরি হয়। রক্ত স্বল্পতার জন্য অনেক সময় শরীর দুর্বল লাগতে পারে। বিভিন্ন কারণে শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে তা পূরণের চেষ্টা করতে হবে। আয়রন যুক্ত খাবার প্রতিদিনে খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।

অনেক সময় মেয়েদের মাসিকের সময়ও মেয়েরা শারীরিকভাবে দুর্বল বোধ করতে পারে। এই সময় মেয়েদের দৈনিক খাদ্য তালিকার দিকে বিশেষভাবে নজর দেয়া জরুরী। এছাড়া গর্ভাবস্থার সময় একজন মহিলা রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতির কারণে শারীরিকভাবে দুর্বল বোধ করতে পারেন। তাই এ সময় গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় যথাযথ ভিটামিন এবং আয়রন জাতীয় খাবার বেশি রাখতে হবে।

শরীরে ডায়াবেটিস বাসা বাঁধলে দুর্বল লাগতে পারে

শরীরে যখন ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘমেয়াদী রোগ বাসা বাঁধে তখন শরীরে দুর্বলতা বোধ হয়। শরীরে ডায়াবেটিস দেখা দেওয়ার আগে এবং ডায়াবেটিস হওয়ার পর থেকে শরীর দুর্বল হতে থাকে। শরীরে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ হঠাৎ করে কমে গেলে বা বেড়ে যাওয়ার কারণে দুর্বল লাগতে পারে।

আমরা হয়তো এটাকে গুরুত্ব দেই না। কিন্তু ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা অন্যান্য অনেক রোগের কারন। তাই ডায়াবেটিস দেখা দিলে সচেতন ভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ মত তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে হবে।

হার্টের কোন সমস্যার কারণে দুর্বল লাগতে পারে

অনেক সময় হার্টের কোন সমস্যা থাকলেও আমরা অল্পতেই ক্লান্ত অনুভব করি। শারীরিক পরিশ্রমের কাজ, সিঁড়ি বেয়ে ওঠা বা দৌড়ানোর ফলে অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠা এবং নিঃশ্বাস ঘন ঘন হওয়া, হার্টবিট বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।

তাই হার্টের কোন সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ মত নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। এবং হার্টের সুস্থতা বজায় রাখবে এরকম খাবার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।

থাইরয়েডের কোন সমস্যার কারণে দুর্বল লাগা

অনেক সময় থাইরয়েডের কোন সমস্যা থেকেও শরীর দুর্বল লাগতে পারে। থাইরয়েডের সমস্যার কারণে হঠাৎ করে ওজন বেড়ে যেতে পারে আবার অনেক ক্ষেত্রে কমে যেতে পারে, অল্পতে ক্লান্তি ভাব, অনেক সময় মাথা ঘুরানো ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। তাই থাইরয়েডের কোন সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মত তা নিরাময়ের চেষ্টা করতে হবে।

বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসজনিত রোগের কারণে

বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসজনিত রোগে যখন আমরা ভুগি তখন আমাদের শরীর অল্পতেই দুর্বল হয়ে যায়। এবং অল্পতেই আমরা ক্লান্ত বোধ করি। এই ধরনের ভাইরাস জনিত রোগের মধ্যে রয়েছে - করোনা,ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জ সহ আরো কিছু রোগ। এই ধরনের রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের যথাযথ পরামর্শ মত চলতে হবে।

বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং পুষ্টি উপাদান সম্পন্ন শাকসবজি ফলমূল প্রতিদিনের ডায়েটে প্রচুর পরিমাণে রাখতে হবে।

মানসিক চাপ উদ্বেগ হতে পারে দুর্বল লাগার কারণ

মানসিক চাপ বা উদ্বেগ এমন একটি ভয়াবহ সমস্যা যেখানে একজন সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। আমাদের জীবনে মানসিক চাপ থাকবেই কিন্তু এটাকে খুব বাড়তে দেওয়া যাবে না। অনেক সময় এই অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণেও শরীর দুর্বল লাগতে পারে। আবার আমরা যদি সবসময় মানসিক চাপ, উদ্বেগ, অবসাদ, বিষন্নতায় ভুগি তাহলেও শরীর দুর্বল লাগতে পারে।

তাই যথা সম্ভব মানসিক চাপ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে। মানসিক চাপ এড়ানোর জন্য শরীরচর্চা, পরিমিত ঘুম এবং সঠিক খাদ্য অভ্যাস তৈরি করতে হবে।

পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব দুর্বল লাগার কারণ

পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম আমাদের শরীরের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। শুধু শরীর নয় মানসিক সুস্থতার জন্যও ঘুম গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন ঘুম না হলে আমরা শারীরিক এবং মানসিকভাবে দুর্বল বোধ করি এবং অনেক সময় অসুস্থ হয়ে যেতে পারি। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন রয়েছে। এবং এই ঘুমটি হতে হবে অবশ্যই নিরবিচ্ছন্ন।

আরো পড়ুনঃ যেসব খাবার খেলে ডায়াবেটিস থাকবে নিয়ন্ত্রণে

কারণ অনেক সময় আমরা মনে করি আমাদের তো রাতে ঠিকমত ঘুম হয়েছে, তাহলে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কেন ক্লান্তি বোধ হয় বা সারাদিন কেন কাজে শক্তি পাই না এবং কাজে মন বসাতে পারি না। এটা আসলে হয় পরিমিত ঘুমের অভাবে। আমরা রাত ঘুমালেও হয়তো আমাদের ঘুমটা একটানা নিরবিচ্ছিন্ন হয় না এজন্যই আমরা এই ধরনের সমস্যা অনুভব করি।

শরীরে পুষ্টি জনিত অভাবের কারণে দুর্বল লাগা

শরীর সুস্থ এবং সবল রাখার জন্য দৈনিক প্রয়োজনীয় পুষ্টি সম্পন্ন খাবারের গুরুত্ব অনেক। অনেক সময় শরীরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টির অভাবের জন্য আমরা শারীরিকভাবে দুর্বলতা অনুভব করি। এবং অল্পতেই আমরা ক্লান্ত হয়ে যাই, কাজ করার কোন রকম মনে হয় শক্তি পাইনা। 

ইমেজ

আমরা অনেক সময় সময়ের অভাবে হয়তো সকালের নাস্তাটা ঠিকমতো করতে পারিনা, বাইরের খোলা খাবার বা জাঙ্কফুট খেয়ে পেট ভরাই ঠিকই কিন্তু শরীরে যে পুষ্টির প্রয়োজন তা পূরণ হয় না। আবার অনেক সময় কোন বেলায় খাওয়া হয়তো বাদ পড়ে যায়। আর এ কারণেই আমাদের শরীর দুর্বল লাগে কিন্তু আমরা হয়তো তা খুব একটা গুরুত্ব দেই না।

বিশেষ করে শরীরে ভিটামিন বি১২ এবং ভিটামিন ডি এর অভাবের কারণে শরীর অল্পতেই ক্লান্ত এবং দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। দুধ, দই, পনির, বিভিন্ন দুগ্ধ জাতপণ্য, ডিম, গরু ও খাসির কলিজা, ডাল, মাসরুম, বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ, গোটা শস্য, সয়া মিল্ক, মাছের তেল ইত্যাদি থেকে আমরা ভিটামিন বি১২ এবং ভিটামিন ডি পেয়ে  থাকি। 

তাই নিয়মিত ডায়েটে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি, ফলমূল, মাছ-মাংস, দুধ, ডিম, ডাল সহ বিভিন্ন ভিটামিন এবং মিনারেল যুক্ত খাবার রাখতে হবে। এছাড়া শরীর যেন প্রয়োজনীয় পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ করতে পারে সে দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।

অনিয়ন্ত্রিত এবং অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন

বর্তমানে জীবনযাত্রা খুবই ফাস্ট এবং আমাদের মধ্যে অনেকেরই প্রবণতা রয়েছে অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের। রাতে ঘুমের সময় অনেক সময় মোবাইল বা কোন ধরনের ডিভাইস দেখার ফলে আমাদের ঘুমটা হয়তো কম হয়ে থাকে। এছাড়া পরিমিত বিশ্রামের অভাব, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার না খেয়ে বাইরের খাবার খাওয়া ইত্যাদি কারণে আমাদের শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।

তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের অ্যালকোহল গ্রহণ, ধূমপান করার অভ্যাস ইত্যাদি কারণেও ঘুম না হওয়ার কারণে শরীর দুর্বল লাগতে পারে।

আমরা হয়তো প্রথম দিকে এটা খুব একটা গুরুত্ব দেই না কিন্তু হঠাৎ করেই এই সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। তাই শরীরকে সুস্থ রাখা, শরীরকে কর্মক্ষম রাখার জন্য সুস্থ এবং নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের কোন বিকল্প নেই।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাবে দুর্বল লাগা

আমাদের শরীরে যখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় তখন শরীর দুর্বল লাগা সহ আরো অন্যান্য অনেক রোগ সহজে বাসা বাঁধতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে জ্বর, সর্দির মতো রোগ যেন পিছু ছাড়তে চায় না।

তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ এবং বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান যুক্ত খাবার প্রতিদিনে খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। এই সকল খাবার আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তি যুগিয়ে আপনাকে রাখবে সুস্থ এবং কর্মক্ষম।

শরীরে পানির ঘাটতি হলে দুর্বল লাগতে পারে

শরীরে অনেক সময় প্রয়োজনীয় পানি পানির অভাবেও দুর্বল লাগতে পারে। আমাদের শরীরে চাহিদা অনুযায়ী যদি আমরা পানি পান না করি তাহলে শরীর দুর্বলতার সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করার অভ্যাস তৈরি করা ভালো। এই অভ্যাস আপনাকে দুর্বলতা দূর করার সাথে সাথে আপনাকে সারাদিন চাঙ্গা রাখবে।

অতিরিক্ত শরীরচর্চার কারণে দুর্বল লাগা

অনেক সময় অতিরিক্ত শরীর চর্চা বা ব্যায়ামের কারণেও দুর্বল লাগতে পারে। শরীর চর্চা অবশ্যই আমাদের সুস্থ থাকার জন্য অপরিহার্য কিন্তু অতিরিক্ত শরীর চর্চা অনেক সময় ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই প্রতিদিন পরিমিত বা শরীরের চাহিদা অনুযায়ী শরীর চর্চার অভ্যাস করা গুরুত্বপূর্ণ।

একেবারে শরীরচর্চা না করার কারণে দুর্বল লাগা

আমরা আবার অনেকেই আছি যারা একদমই শরীরচর্চা করি না। আবার অনেক সময় সারাদিন শুয়ে বসে থাকার কারণেও শরীর দুর্বল লাগতে পারে। প্রতিদিন নিয়ম করে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট হাটা বা ৩০ মিনিটের হালকা ব্যায়াম শারীরিকভাবে আপনাকে শক্তিশালী করে তুলতে পারে। এটি আপনাকে দুর্বলতা দূর করবে সাথে আপনাকে সারাদিন কাজ করার শক্তি যোগাবে।

তাই প্রতিদিন নিয়ম করে ৩০ মিনিট হাটা এবং কিছু হালকা ব্যায়াম করার অভ্যাস তৈরি করুন। ব্যায়াম আমাদের শরীরকে ঝরঝরে রাখার সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকেও দূরে রাখবে।

অতিরিক্ত গরমের কারণে দুর্বল লাগা

অনেক সময় অতিরিক্ত গরমে বাইরে থাকলে শরীর থেকে ঘাম বের হয়ে যাওয়ার কারণেও শরীর দুর্বল লাগতে পারে। এছাড়া যারা অধিকাংশ সময় উষ্ণ পরিবেশে থাকেন তাদেরও শরীর দুর্বল হতে পারে। তাই গরমে রোদে বাইরে কাজ করার সময় অবশ্যই মাঝে মাঝে ছায়াযুক্ত স্থানে বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

আরো পড়ুনঃ গরমে অতিরিক্ত ঘাম থেকে তৈরি হওয়া দুর্গন্ধ দূর করার দশটি ঘরোয়া উপায়

একেবারে কাজ না করে ধীরে ধীরে কাজ করার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। এবং এই সময় পরিমাণ মতো পানি পান করার চেষ্টা করতে হবে। কাজের মাঝখানে প্রয়োজনে স্যালাইন, ডাবের পানি ইত্যাদি পান করলে শরীর শক্তি ফিরে পাবে।

হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে দুর্বল লাগা

অনেক সময় শরীরে হরমনের ইমব্যালেন্স বা ভারসাম্যহীনতা তৈরি হলে দুর্বল লাগতে পারে। বিভিন্ন কারণে আমাদের শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে। এইরকম অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াটা জরুরী। হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দূর হলে শারীরিক দুর্বলতা অনেক সময় সহজে কেটে যায়।

শারীরিক দুর্বলতার কারণে কি কি সমস্যা হতে পারে

বিভিন্ন কারণে আমাদের শরীর দুর্বল হতে পারে বা শারীরিকভাবে আমরা কর্মক্ষম থাকতে পারিনা। শরীর দুর্বল লাগা বা দুর্বল হয়ে যাওয়ার যেহেতু অনেক কারণ রয়েছে তাই একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

শরীর দুর্বল হলে সাধারণ যে সকল সমস্যা দেখা দেয় তা হল-

  • আমরা আমাদের মেজাজ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারি। অনেক সময়ই শরীর দুর্বল লাগার কারণে আমাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, অল্পতেই রেগে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
  • শরীর অতিরিক্ত দুর্বল লাগার কারণে আমরা কোন কাজ করার আগ্রহ বোধ করি না। যে কোন কাজ করার প্রতি আমাদের নিষ্ক্রিয় ভাব দেখা যায়।
  • শরীর দুর্বল অনুভব করলে অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • শরীর অতিরিক্ত দুর্বলতার কারণে মাথা ঝিমঝিম সহ মাথা ঘুরানো সমস্যা হতে পারে।
  • সারাদিন নিজের মধ্যে ক্লান্তি ভাব বিরাজ করে।
  • শরীর দুর্বলতার কারণে ওজন হঠাৎ করে কমে যেতে পারে।
  • অতিরিক্ত দুর্বল লাগার কারণে অনেক সময় রাতে ঘুম কম হওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • অনেক সময় খাবার রুচি কমে যেতে পারে।
  • হঠাৎ করেই কোন কারণ ছাড়া অতিরিক্ত গরম লাগতে পারে আবার অনেক সময় অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগতে পারে।
ইমেজ
  • শরীর দুর্বলতার কারণে ঘনঘন ব্লাড প্রেসার উঠানামা করতে পারে।
  • শারীরিক দুর্বলতা অনেক সময় হজম শক্তি কমিয়ে দিতে পারে।
  • শরীর দুর্বল লাগার কারণে অনেক সময় অতিরিক্ত পানি পিপাসা পেতে পারে এবং এর ফলে ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা দেখা যায়।
  • শারীরিক দুর্বলতার কারণে অনেক সময় চুল বেশি উঠতে দেখা যায়।
  • এই কারণে অনেক সময় মুখে ব্রণ সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হতে দেখা যায়।
  • শরীর অতিরিক্ত দুর্বল লাগার কারণে কর্ম ক্ষমতা কমে যাওয়ার সাথে সাথে মনোযোগ হারিয়ে ফেলার সমস্যাও তৈরি হতে দেখা যায়।

শারীরিক দুর্বলতা দূর করার উপায়

বিভিন্ন কারণে আমরা যখন শারীরিকভাবে দুর্বল অনুভব করি তখন ভেবেই নেই যে, কোন কঠিন এবং দীর্ঘমেয়াদি অসুখ হয়তো আমাদের শরীরে বাসা বেধেছে। শরীর দুর্বল লাগলেই যে শরীরে কোন রোগ বাসা বেধেছে এমনটা নাও হতে পারে।

অনেকে আবার এই ধরনের শারীরিক দুর্বলতাকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না। কিন্তু যে কারণে শরীর দুর্বল অনুভব হোক না কেন এ ব্যাপারে সচেতন হওয়াটা জরুরি। শরীরের যেকোনো সমস্যা সমাধানের চেষ্টা না করে তা অবহেলা করলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।

অনেকে আছেন যারা শারীরিক দুর্বলতায় নিজেই হয়তো কিছু ওষুধ কিনে খান। ভাবেন ওষুধ খেলে হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যে কোন ধরনের ওষুধ গ্রহণ করা হিতে বিপরীত হতে পারে। কোন ওষুধ আপনার হয়তো প্রয়োজন নেই কিন্তু আপনি তা গ্রহণ করছেন, আবার কিছু কিছু ঔষধ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি গ্রহণ করছেন।

এই অভ্যাস আপনার শরীর সুস্থ করে তোলার বদলে আরো খারাপ কিছু বয়ে আনতে পারে। তাই শরীর দুর্বল লাগা যে কোনো কারণেই হোক না কেন, চিকিৎসকের পরামর্শ মত যথাযথ ঔষধ এবং খাবার গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

তবে কিছু কিছু ব্যাপারে আপনি নিজে থেকেই সচেতন হলে সাধারণ শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারবেন। যেমনঃ
  • প্রতিদিনে খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, মিনারেলস এবং পুষ্টি উপাদান যুক্ত খাবার রাখা।
  • ভিটামিন বি১২ রয়েছে এমন খাবার খাদ্য তালিকায় রাখা।
  • দৈনিক আয়রন এবং ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার গ্রহণ করা।
  • শরীরের ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণের দিকে লক্ষ্য রাখা।
  • প্রতিদিন পরিমিত ঘুম আপনাকে সতেজ এবং কর্মক্ষম রাখবে।
  • প্রতিদিন শরীর অনুযায়ী অবশ্যই পানি পান করার চেষ্টা করতে হবে।
  • চেষ্টা করতে হবে যে কোন ধরনের মানসিক চাপমুক্ত থাকা।
  • প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম বা ৩০ মিনিটের হাটা আপনাকে কর্মক্ষম রাখতে সহায়তা করবে।
  • সব সময় হাসিখুশি থাকা আপনাকে মানসিক চাপমুক্ত রাখবে।
  • শরীরে দুর্বলতা দূর করতে নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন এবং খাদ্যাভ্যাস জরুরী।
  • অ্যালকোহল এবং ধূমপান পরিহার করতে হবে।

পরিশেষে

শরীর কোন কারণে অতিরিক্ত দুর্বল লাগলে আমরা একটু সচেতন হলেই তা কাটিয়ে উঠতে পারি। অনেক সময় হয়তো দৈনন্দিন কিছু অভ্যাস পরিবর্তন এর মাধ্যমেই শারীরিক দুর্বলতা দূর করা সম্ভব হয়। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক দুর্বলতা কোন কঠিন রোগের আভাস হতে পারে।

তাই আপনি যদি প্রায়ই দুর্বল বোধ করেন তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ মত ব্যবস্থা নিলে অনেক সময় অনেক রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয় বা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

passiondrivefiona র নীতিমালা মেনে comment করুন। প্রতিটি comment রিভিউ করা হয়;

comment url