চিরতরে খুশকি দূর করার উপায় জেনে নিন

চিরতরে খুশকি দূর করার উপায় সম্পর্কে আপনি যদি জানতে চান, তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। কারন আজকের পোস্টে চিরতরে খুশকি দূর করার যে উপায় গুলো বর্ণনা করেছি সেগুলো সত্যিই কার্যকরী। এছাড়া জানব খুশকি দূর করার শ্যাম্পু সম্পর্কে।

চিরতরে-খুশকি-দূর-করার-উপায়

পোস্ট সূচিপত্রঃচুলে খুশকির সমস্যা নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। মাথার ত্বকের সাধারণ এবং বিরক্তিকর একটি সমস্যা এই খুশকি। যাদের খুশকি রয়েছে একমাত্র তারাই জানেন খুশকি এক বিরক্তিকর যন্ত্রণার নাম। তবে আজকের উপায় গুলি খুশকি তাড়ানোর ক্ষেত্রে শতভাগ কার্যকরী এটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি।

চিরতরে খুশকি দূর করার উপায় জেনে নিন

পোস্টের শুরুতে চিরতরে খুশকি দূর করার কার্যকরী এবং পরীক্ষিত উপায় সম্পর্কে আপনাদের জানাবো। খুশকি এমন একটি জিনিস যা প্রায়ই আমাদের বিব্রতকর এবং অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে ফেলে।

আপনি হয়তো রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন কিন্তু খুশকির কারণে মাথা চুলকাচ্ছেন, আবার অফিসে জরুরি কোন মিটিংয়ে আছেন সেখানেও খুশকির কারণে মাথা চুলকোতে হচ্ছে, এটা খুবই দৃষ্টিকটু একটি ব্যাপার।  এজন্য আমরা মাথা থেকে খুশকি দূর করার উপায় সম্পর্কে জানতে চাই।

এই খুশকি দূর করার জন্য অনেকে হয়তো অনেক ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বিভিন্ন ধরনের শ্যাম্পু থেকে শুরু করে অনেকে ঔষধও গ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু ঘরোয়া কিছু উপায় রয়েছে যেগুলো আপনি হয়তো জানেন কিন্তু অতটা গুরুত্ব দেন না অথবা নিয়ম মেনে ব্যবহার করেন না। এই ঘরোয়া উপায় গুলো নিয়মিত মেনে চললেই আপনি চিরতরে এই খুশকি থেকে ১০০% মুক্তি পেতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ কোন ভিটামিন খেলে ত্বক উজ্জ্বল এবং ফর্সা হয়

তাহলে চলুন দেরি না করে প্রথমে চিরতরে খুশকি দূর করার ঘরোয়া এই উপায়গুলো জেনে নেই। এবং আপনার মাথার ত্বক এবং চুলের জন্য যে উপায়টি উপযোগী মনে হবে সেটি আজকে থেকেই ব্যবহার করা শুরু করুন।

চিরতরে খুশকি দূর করতে ব্যবহার করুন নিম পাতা

নিম পাতা আমাদের সবার পরিচিত গুরুত্বপূর্ণ একটি ভেষজ উপাদান। ত্বকের যে কোন সমস্যা, এলার্জি জনিত সমস্যা দূর করা থেকে শুরু করে আরো অনেক ক্ষেত্রে নিম পাতার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। তেমনি চুল থেকে খুশকি দূর করতেও নিম পাতার রয়েছে অনেক উপকার।

খুশকি দূর করতে নিমপাতার কয়েকটি প্যাক জেনে নিন-

একটি বাটিতে চার চামচ নিম পাতার রস, আধা চামচ মধু, তিন চামচ অলিভ অয়েল, তিন চামচ নারকেলের তেল নিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। তারপর নিয়মিত সপ্তাহে তিন দিন এটি স্ক্যাল্পে মেসেজ করুন। স্ক্যাল্পে চুলের গোড়া পর্যন্ত যেন এই মিশ্রণ উৎসাহে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। এরপর ভালো ভাবে মেসেজ করার পরে এক ঘন্টা অপেক্ষা করুন।

এক ঘন্টা পরে পরিষ্কার পানি দিয়ে শ্যাম্পু করে নিন। চাইলে আপনি কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন শ্যামপু করার পরে। বলা হয়ে থাকে, নিম পাতা চুলের খুশকি দূর করতে খুবই কার্যকরী উপাদান।

এই পদ্ধতি ছাড়াও আরেকটি সহজ পদ্ধতি হতে পারে নিমপাতা বেটে তা চুলে এবং স্ক্যাল্পে ভালোভাবে লাগানো। আবার নিম পাতার তেলও ব্যবহার করা যায়।

পনেরোটির নিমপাতা সংগ্রহ করে তা ব্লেন্ডার মেশিন বা গ্রাইন্ডার এ ভালো করে গুড়ো করে নিতে হবে। একটি বাটিতে ৪ টেবিল চামচ অলিভ অয়েলের সাথে এবার সেই গুড়ো করা নিমপাতা মিশিয়ে নিন। এরপর এটি আপনার স্ক্যাল্পে ও চুলে ভালো করে মালিশ করে নিন। এক ঘন্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।

আবার, পরিমাণ মতো নিম পাতা ভালো করে বেটে নিয়ে চুলের গড়ায় লাগিয়ে রেখে কিছুক্ষণ পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেললেও অনেক কার্যকারিতা দেখা দেবে।

চিরতরে খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায় অ্যালোভেরা

খুশকি দূর করার জন্য আরেকটি বিকল্প উপায় হতে পারে এলোভেরার জেল। এটা হতে পারে বাজার থেকে কেনা ভালো কোন ব্র্যান্ডের এলোভেরা জেল বা গাছের এলোভেরা ব্যবহার করা। তবে গাছের এলোভেরা ব্যবহার করতে আপনাকে একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যেমনঃ এলোভেরা ডালটি কাটার পর ভালোভাবে পানিতে ধুয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট কাটার দিক মুখ করে সোজা করে রাখুন।

এতে এলোভেরা ডাল থেকে হলুদ অংশটি বের হয়ে যাবে, যাকে বলে অ্যালো লেটেক্স। এই হলুদ অংশের কারণেই আমাদের শরীরে এলার্জি সৃষ্টি হয়ে থাকে।

পরিমাণ মতো নিমপাতা ও আমলকি বেটে নিন। তারপর এই দুইটি উপাদানের সাথে পরিমাণ মতো এলোভেরা জেল মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এটিকে আমরা হেয়ার প্যাকও বলতে পারি। এই হেয়ার প্যাকটি চুলে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন।

এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত প্রতি সপ্তাহে একবার করে এই হেয়ার প্যাক লাগান। এছাড়াও এলোভেরা দিয়ে একটি সহজ ও ঘরোয়া পদ্ধতি হতে পারে অ্যালোভেরা ও লবণ দিয়ে তৈরি মিশ্রণ।

চিরতরে খুশকি দূর করবে মেথি

চুলের সমস্যা হয়েছে আর আপনি মেথি ব্যবহার করবেন না, তা কি হয়! কিন্তু কিভাবে? তাহলে জেনে নিন- অন্তত ৮ থেকে ১২ ঘন্টা পরিমাণ মতো মেথি পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। আপনি চাইলে এক্ষেত্রে এক রাত মেথি ভিজে রাখতে পারেন। এরপর সকালে ভিজিয়ে রাখা মেথি বেটে নিন। এই বাটা মেথিতে পরিমান মত লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এরপর এটি হেয়ার প্যাক হিসেবে ব্যবহার করুন।

এছাড়া আপনি মেথির তেল বানিয়ে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে নারকেল তেলের সাথে মেথি ভালো করে ফুটিয়ে নিন। তেলটি নিয়মিত ব্যবহার করুন। মেথি শুধু যে আপনার চুলের খুশকি দূর করবে তা নয়, চুল পড়া বন্ধ করে চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করবে। এ কারণে মেথিকে চুলের যত্নে অপ্রতিদ্বন্দ্বী উপাদান বলা হয়ে থাকে।

চুল থেকে চিরতরে খুশকি দূর করতে ফুলের ব্যবহার

চুলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে প্রাচীনকাল থেকেই ফুল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সেরকম একটি ফুল হলো জবা। চুল থেকে চিরতরে খুশকি দূর করতে জবাফুলও হতে পারে একটি বিকল্প উপায়। আপনি জবা ফুলের তেল বানাতে পারেন। খুশকি দূর করতে এটি বেশ কার্যকরী একটি উপায়।

এক্ষেত্রে বেশি কিছু না শুধু নারকেল তেলের সাথে জবা ফুল ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর ভালো করে চুলে ও স্ক্যাল্পে তেলটি মেসেজ করুন। এতে আস্তে আস্তে আপনার চুলের খুশকি দূর করবে এবং চুল পড়া বন্ধ করে চুল ঘন করে তুলবে।

চিরতরে-খুশকি-দূর-করার-উপায়

এরকম আরেকটি উপকারী ফুল হতে পারে ভৃঙ্গরাজ বা যাকে আমরা কেশ রাজ হিসেবে চিনি। নাম শুনেই বুঝা যাচ্ছে চুলের জন্য এটি কত উপকারী। ভৃঙ্গরাজ আপনার চুলের জন্য ব্যবহার করতে চাইলে এর তেল বানিয়ে চুলে ম্যাসাজ করতে হবে।

চিরতরে খুশকি দূর করতে নারিকেল তেলের ভূমিকা

চুলের সমস্যায় নারকেল তেলের কথা হবে না, তা ভাবাই যায় না। নারকেল তেলও চুল থেকে খুশকি সরাতে পারে বটে তবে এর সঠিক নিয়ম জানতে হবে। হালকা গরম নারকেল তেল দিয়ে আপনার স্কেলপে ভাবে ১৫ মিনিট ম্যাসাজ ও এরপর চুলে লাগিয়ে নিন। তারপর আধা একবার এক ঘণ্টা পরে শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে চুল ধুয়ে ফেলুন।

চুলের যত্নে নারিকেল তেল ও জোজোবা(হোহোবা) তেলের কোন বিকল্প নেই। তাই যদি এই দুটি তেল একসাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয় তাহলে তো এর তুলনাই হয় না। আপনি দুটি তেল একসাথে মিশিয়ে চুল ও স্ক্যাল্পে ভালো ভাবে লাগানোর পর আলতো হাতে কয়েক মিনিট মেসাজ করুন।

একটা গরম তোয়ালে দিয়ে চুল বেঁধে বা মুড়িয়ে রাখুন ৩০ মিনিট। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে চুল ধুয়ে নিন। আরেকটি উপায় জেনে নিন, দুই টেবিল চামচ তেলের মধ্যে এক চা চামচ লেবু মিশিয়ে নিয়ে স্ক্যাল্পে মেসেজ করুন ও চুলে লাগান। আধ ঘন্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। আপনি চাইলে নারিকেল তেলের সাথে রোজমেরি তেল মিশেও ব্যবহার করতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ ত্বক উজ্জ্বল এবং ফর্সা করার সহজ ১০ টি টিপস

এই পদ্ধতিতেও চুলের খুশকি দূর হয়। এজন্য আপনাকে তিন টেবিল চামচ নারিকেল তেলে দুই-চারেক ফোঁটা রোজমেরি এসেনশিয়াল তেল মিশাতে হবে। এরপর আগের পদ্ধতির মতোই ভালো করে স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করে ও চুলে লাগিয়ে এক বা আধ ঘন্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। আবার অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন।

এক্ষেত্রে কিছু না শুধু দুইটি উপাদান মিশিয়ে চুলে কিছুক্ষণ রেখে পানি দিয়ে ভাল করে শ্যাম্পু করে ফেলুন। এটি আপনার চুলের খুশকির সাথে সাথে  ও দূর করতে সাহায্য করবে। আবার নারকেল তেলের সাথে ৮ থেকে ১০ ফোটা টিট্রি অয়েল মিশিয়ে মিশ্রণটি ক্যাল্পে ও চুলে মাসাজ করুন। খুশকি দূর করতে এটিও বেশ কার্যকরী উপায়।

চিরতরে খুশকি দূর করার উপায় পেঁয়াজের রস

চুল থেকে যদি প্রাকৃতিক উপায়ে খুশকি দূর করতে চান তবে বিকল্প একটি উপায় হতে পারে পেঁয়াজের রস ব্যবহার করা। এক্ষেত্রে প্রথমে দুইটি পেঁয়াজ একটি মগে রাখুন। এরপর ভালোভাবে এটিকে গ্রাইন্ডার পেস্ট এর মত করে নিন বা বেটে নিন। এরপর এই বাটা পেঁয়াজের সাথে কিছু পরিমানে পানি মিশান এবং এটি আপনার চুল চুল পরিচর্যার সাথে বানিয়ে নিন।

এক্ষেত্রে পেঁয়াজের রস চুলে ও স্কেলপে মালিশ করার পর কিছুক্ষন রেখে তারপর ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে দুইবার এই পদ্ধতিতে পেঁয়াজের রস চুলে মালিশ করলে আপনার চুল থেকে খুশকি বিদায় নিবে।

চিরতরে খুশকি দূর করার আরেকটি কার্যকরী উপায় লেবু

আপনি যদি চিরতরে খুশি থেকে দূরে থাকতে চান তাহলে অবশ্যই লেবু ব্যবহার করুন। অনেকেই হয়তো ভাবছেন যে চুলে সরাসরি লেবু ব্যবহার করবে্ন। এটি ভুলেও করতে যাবেন না। চুলের পরিচর্যার জন্য পাতি লেবু উপকারী হলেও, তবে সরাসরি দিলেই শুধুমাত্র চুলের ক্ষতি হয়।

কারন লেবুতে রয়েছে এক ধরনের এসিডিক উপাদান, যা আপনার চুলের লাভের বদলে ক্ষতি করবে। লেবু দিয়ে খুশকি দূর করার জন্য আপনাদের দুটি উপায় জানাচ্ছিঃ বিভিন্ন হেয়ার প্যাকে পাতি লেবুর রস দিয়ে ব্যবহার করলে চুল খুশকি মুক্ত হবে। এছাড়া নারিকেল তেলের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এতেও খুশকি দূর হবে।

চিরতরে খুশকি দূর করবে অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার

অনেকেই এখন ভাবতে পারেন, অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার দিয়েও চুলের পরিচর্যা করা সম্ভব? তবে এর উত্তর হিসেবে আমি বলছি হ্যাঁ। আধ কাপ পানির সাথে আধ কাপ অ্যাপল সাইডার ভিড়েগার ভালো করে মিশিয়ে নিন। অন্য সব পদ্ধতির মত এটিতেও স্ক্যাল্পে ও চুলে ভালো করে লাগিয়ে ম্যাসাজ করে ১৫-২০ মিনিট পর চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

তবে এখানে একটা কথা বলে রাখি, অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার চুলে বেশিক্ষণ লাগিয়ে রাখা ক্ষতিকর হতে পারে। এছাড়া সরাসরি চুলে লাগালেও এর ক্ষতি রয়েছে।

আপনি চাইলে অ্যাপেল সাইডের ভিনেগারের সাথে পানি না মিশিয়ে তেলও মিশাতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে শুধুমাত্র পাঁচ মিনিট এ মিশ্রণটি মালিশ করার পর রেখে তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুঁয়ে ফেলতে হবে।

মাথা থেকে খুশকি মুক্ত দূর ব্যবহার করুন টকদই

টক দই খুশকি দূর করতে একটি অন্যতম ভালো উপায় হতে পারে। টক দই এর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে সেই মিশ্রণটি মাথার ত্বকে ভালো করে মালিশ করে দিন এবং চাইলে আপনি চুলে লাগাতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে আমি চুলে লাগানোর পরামর্শ দিব। বিশ মিনিট হয়ে গেলে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। খুশকি দূর করার জন্য সপ্তাহে দুবার এই মিশ্রণটি ব্যবহার করুন।

এ মিশ্রণটির অনেক উপকারিতা আছে। আপনি যদি আপনার চুলের পরিচর্যা করতে চান তাহলে খুশকি না থাকলেও এই মিশ্রণটি ব্যবহার করতে পারেন।

চুল থেকে চিরতরে খুশকি দূর করবে বেকিং সোডা

বেকিং সোডাও আপনার চুলের জন্য প্রাকৃতিক রেমিডি হিসেবে কাজ করতে পারে। বেশি কিছু না শুধু এক টেবিল চামচ বেকিং সোডা আপনার ভেজা চুলে ঘষে ঘষে মালিশ করে নিবেন। এক থেকে দুই মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে আপনার চুল ধুয়ে ফেলুন। ভুলেও এক থেকে দুই মিনিটের বেশি বেকিং সোডা আপনার মাথার ত্বকে রাখতে যাবেন না।

খুশকি কী

চিরতরে খুশকি দূর করার ঘরোয়া কার্যকরী উপায় সম্পর্কে আপনারা জানতে পেরেছেন। এখন আপনাদের জানাবো, খুশকি কি? আমরা পরোক্ষভাবে খুশকি কি তা জানলেও প্রত্যক্ষভাবে এর সম্পর্কে আমাদের ধারণা খুবই কম। আসলে খুশকি হচ্ছে এক ধরনের ডেড সেলস বা বাংলায় যাকে বলে মৃত কোষ বা মরা চামড়া।

ইংরেজীতে খুশকিকে আমরা Dandruff (ড্যান্ডড্রাফ) হিসেবে চিনি। মাথাতেই বেশিরভাগ সময় খুশকি হয়ে থাকে। খুশকি আঁশের মতো করে উঠে উঠে আসে মাথা থেকে। আবার ঝরেও পড়ে।মাথার ত্বকে খুশকি হলে মাথা চুলকানি হতে দেখা যায়।

আরো পড়ুনঃ ত্বক এবং চুলের যত্নে পেয়ারা পাতার কার্যকারিতা

মাথা চুলকানোর ফলে বা অনেক সময় নিজে নিজে খুশকি ঝরে পড়ে আমাদের পিঠ এবং কাঁধের কাপড়ের জমতে দেখা যায়, যা খুব বিরক্তিকর এবং লজ্জার একটি বিষয়। কারণ এর ফলে ব্যক্তিত্বের সৌন্দর্য হানি ঘটে। এছাড়া খুশকি হলে মাথার ত্বক নরম হয়ে চুল ঝরার পরিমাণ বেশি হয়।

এইজন্যই আমরা খুশকি তাড়ানোর জন্য উঠেপড়ে লাগি কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা ব্যর্থ হয়ে আবার কিছুদিন পর পুরোদমে ফিরে আসে।

চুলে খুশকি কেন হয়

চিরতরে খুশকি দূর করার উপায় জানার পর, এখন আপনাদের নিশ্চয়ই জানার আগ্রহ রয়েছে চুলে খুশকি কেন হয় সে ব্যাপারে। আমাদের চুলে বিভিন্ন কারণে খুশি হতে পারে, তবে খুশকি কোনভাবেই রোগ বা রোগের লক্ষণ নয়। অনেক সময় জেনেটিক কারণে মাথার ত্বকে খুশকি হতে পারে। আবার মাথার ত্বকে বেশি তেল নিঃসরণের ফলেও খুশি হতে দেখা যায়।

মাথার ত্বকের ছত্রাক আক্রমণের কারণে খুশকি হওয়ার কারণ। তবে আমাদের মাথার ত্বকে ম্যালেসেজিয়া নামক এক ধরনের ফাঙ্গাস অতিরিক্ত হওয়ার কারণে খুশকি হতে দেখা যায়। আবার আমাদের চুলের গোড়ায় ময়লা জমার কারণেও খুশকির প্রকোপ বাড়তে পারে।

এলার্জি জনিত সমস্যায় যারা ভোগেন বিশেষ করে মেয়েদের চুলে খুশকি হতে বেশি দেখা যায়। এছাড়া শীতের সময় সারা শরীরে ত্বক শুষ্ক হওয়ার সাথে সাথে মাথার ত্বক শুষ্ক হয়েও খুশকি হতে পারে। নিয়মিত শ্যাম্পু না করা, ভালোভাবে চুল নাচড়ানো, সঠিক খাদ্যাভ্যাস অভাব ইত্যাদি কারণে খুশকি হতে দেখা যায়।

খুশকি দূর করার শ্যাম্পু সম্পর্কে জানুন

খুশকি দূর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ঔষধ বা সঠিক ভাষায় শ্যাম্পু রয়েছে। তবে এই ধরনের শ্যাম্পু কোন ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধ করা হয়। কেননা আপনার শরীরের সাথে বা খুশকির সাথে এই শ্যাম্পু ব্যবহার করা ঠিক হবে কিনা তা একমাত্র চিকিৎসকগণ বুঝতে পারবেন।

বিভিন্ন চর্মরোগ রয়েছে যা সাধারণভাবে দেখতে খুশকি মনে হয়। তাই এই শ্যাম্পু গুলো ব্যবহার করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে বলা হয়েছে। নিচে এমনই কিছু শ্যাম্পুর নাম দেওয়া হল যা খুশকি দূর করতে সহায়তা করে।

সিলেক্ট প্লাস শ্যাম্পু

খুশকি দূর করতে সাথে চর্ম রোগের সমস্যা থাকলে চিকিৎসকগন যে শ্যাম্পু টি সবচেয়ে বেশি সাজেস্ট করেন তা হল সিলেক্ট প্লাস শ্যাম্পু। সত্যিই এটি খুশকি দূর করার জন্য খুব উপকারী। এছাড়া মাথার ত্বকে শুষ্ক বা তৈলাক্তভাব এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে বাদামি অথবা সাদা ছাপ দূর করতে সাহায্য করে।

১২ বছর বা তার উপরের অ্যালার্জি রয়েছে এমন বাচ্চারা এটি কোনো বাঁধা ছাড়াই ব্যবহার করতে পারবে।
চিরতরে-খুশকি-দূর-করার-উপায়

এই শ্যাম্পুতে থাকা কেটোকোনাজোল নামক এন্টি ফাঙ্গাল উপাদান মাথার খুশকির জন্য দায়ী ছত্রাকের বিরুদ্ধে লড়াই করে। তাই নিয়মিত ব্যবহারে খুশকি সহ চুলকানি দূর হয়। এছাড়া এই শ্যাম্পুতে কন্ডিশনিক এফেক্ট থাকায় চুলকে স্বাস্থ্যউজ্জ্বল করতেও দারুণ ভূমিকা পালন করে। মাথার ত্বকে শ্যাম্পুটি ৩ থেকে ৫ মিনিট রাখার পর ধুয়ে ফেলতে হবে।

বর্তমানে বাংলাদেশে এই শ্যাম্পুর দাম ৩৬৫ টাকা। তবে স্থান ভেদে হয়তো একটু দামের পরিবর্তন হতে পারে।

সেলসান ব্লু শ্যাম্পু

খুশকি দূর করার জন্য আরেকটি ভালো অপশন হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন সেলসান ব্লু শ্যাম্পু। এই শ্যাম্পু টি 2 ইন 1 অর্থাৎ সর্বাধিক শক্তি সম্পন্ন এন্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু প্লাস কন্ডিশনার যুক্ত। এটি মাথার ত্বকের খুশকি দূর করার সাথে সাথে ত্বকের চুলকানি প্রতিরোধেও সহায়তা করে।

শুধু তাই নয় এই শ্যাম্পু টি আপনার ড্যামেজ চুল কে প্রাণবন্ত এবং ঝলমলে করতেও দারুণ কার্যকরী। এই শ্যাম্পু টি চুলের গোড়া মজবুত করতেও সহায়তা করে। কারণ কন্ডিশনার ছাড়াও এই শ্যাম্পুতে রয়েছে ভিটামিন ই, ভিটামিন বি৫ এবং বোটানিকালস উপাদান।

বর্তমানে বাংলাদেশে এই শ্যামপুর দাম ১৯০০ টাকা।

চিরতরে খুশকি দূর করার উপায় সম্পর্কিত প্রশ্ন এবং উত্তর

প্রশ্নঃ খুশকির কারণে চুল পড়ে কেন?

উত্তরঃ সাধারণত চুল পড়ার সাথে খুশকির সরাসরি কোন সম্পর্ক নেই। তবে খুশকি হলে মাথার ত্বক বারে বারে চুলকানোর ফলে চুলের ফলিকল গুলি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এর ফলে চুলের গোড়া নরম হয়ে চুল ঝরে যেতে পারে। এছাড়া মাথার ত্বকে লাল দাগ হতে পারে যা চুলের বৃদ্ধি কমাতে পারে।

প্রশ্নঃ কিভাবে মাথা থেকে খুশকি দূর করা যায়?

উত্তরঃ মাথার ত্বক থেকে খুশকি দূর করতে বিভিন্ন ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করা যেতে পারে। নারিকেল তেলের সাথে এক টুকরো লেবুর রস মিক্সড করে মাথার তালুতে লাগিয়ে হালকা ম্যাসাজ করুন। ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর নরমাল পানি দিয়ে চুল শ্যাম্পু করে ফেলুন। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার এই রেমেডি ব্যবহারে চুল খুশকি মুক্ত থাকবে।

প্রশ্নঃ মাথার খুশকি দূর করতে কি শ্যাম্পু ব্যবহার করা যায়?

উত্তরঃ মাথা থেকে খুশকি দূর করতে সিলেট প্লাস শ্যাম্পু সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহারে দারুন উপকার পাবেন। নিয়মিত এই শ্যাম্পু এক মাস ব্যবহারে চুল অনেকটাই খুশকি মুক্ত হবে। এছাড়া এক মাস পর থেকে পুনরায় ফিরে আসা বাধা দিতে সপ্তাহে একবার করে এই শ্যাম্পু টি ব্যবহার করুন।

প্রশ্নঃ ভিটামিন ই খেলে কি খুশকি কমে?

উত্তরঃ ব্যক্তি বিশেষে ভিটামিন ই বা ভিটামিন ই যুক্ত তেল খুশকি দূর করতে কার্যকরী হতে পারে। ভিটামিন ই মাথার ত্বকের তেল কমাতে সহায়তা করে ফলে খুশকি তৈরি হতে বাধা দেয়। এছাড়া মাথার চুলকানি দূর করতেও এই তেল বিশেষ কার্যকরী।

প্রশ্নঃ খুশকি দূর করার ভিটামিন কি?

উত্তরঃ ভিটামিন বি এবং জিংক শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে মাথাকে খুশকি প্রতিরোধেও দারুন কার্যকরী হিসেবে বিবেচিত হয়।

প্রশ্নঃ খুশকি দূর করার খাবার কি?

উত্তরঃ প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় জিংক সমৃদ্ধ খাবার চুলের খুশকি দূর করতে সহায়তা করবে। যেমনঃ গোটা শস্য, লেবু, অ্যাভোকাডো, বাদাম জাতীয় খাবার ইত্যাদি। এছাড়া ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ তৈলাক্ত মাছ খাদ্য তালিকায় রাখা ভালো সিদ্ধান্ত হবে।

পরিশেষে

আজকের পোস্টে চিরতরে খুশকি দূর করার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করেছি, যে উপায় গুলো ঘরোয়া এবং প্রাকৃতিক। এই ঘরোয়া উপায় গুলিতে খুশকি দূর করার প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করার জন্য খুশকি দূর করার সাথে সাথে চুলকে শক্ত, মজবুত করতে এবং চুলের বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী যে কোনো একটি উপায় আপনি নিশ্চিন্তে বেছে নিতে পারেন।

এছাড়া খুশকি দূর করার জনপ্রিয় দুটি শ্যাম্পু নিয়েও আলোচনা করেছি। এই শ্যাম্পু দুটির খুশকি দূর করতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। চিকিৎসকগন খুশকি দূর করতে এইগুলি সাজেস্ট করে থাকেন। তাই আপনিও খুশকি থেকে মুক্তি পেতে প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ঘরোয়া উপায় গুলি ব্যবহার করতে পারেন অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ মত শ্যাম্পু দুটির যেকোনো একটি ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

passiondrivefiona র নীতিমালা মেনে comment করুন। প্রতিটি comment রিভিউ করা হয়;

comment url