আলকুশি পাউডার এর ১০টি উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
আলকুশি পাউডার এর উপকারিতা সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করতে চলেছি। আপনি যদি আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে আজকের আর্টিকেলে জানতে পারবেন।। সাথে জানবেন আলকুশি পাউডার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
পোস্ট সূচীপত্রঃআলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রচুর এবং খাওয়ার নিয়মও অনেক সহজ, এজন্য বর্তমানে অনেকেই আলকুশি বীজের পাউডার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী হচ্ছেন। আজকের আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে আপনারা আলকুশি বীজের পাউডার সম্পর্কিত যাবতীয় সঠিক তথ্য পেয়ে যাবেন আশা করি।
ভূমিকাঃ আলকুশি পাউডার এর উপকারিতা
আলকুশি বীজকে গুড়ো করে বা চূর্ণ করে যে পাউডারের মতো মিহি দানা তৈরি করা হয় সেটাই আলকুশি বীজের পাউডার। আলকুশি বীজ বা আলকুশি বীজের পাউডার দুইটাই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বর্তমান যুগে মানুষ রোগব্যাধি সারাতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদানের উপর জোর দিচ্ছে বেশি।
প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ এরকম একটি খাবার আলকুশি পাউডার। আদিকাল থেকে আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার প্রচলন থাকলেও বর্তমানে বিভিন্ন রোগ সারাতে এবং স্বাস্থ্যের উপর এর উপকারী প্রভাব বিবেচনা করে দিন দিন অসংখ্য মানুষ আলকুশি বীজের পাউডার প্রতিদিনের ডায়েটে যোগ করছেন।
আরো পড়ুনঃ কোলেস্টেরল কমাতে খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে যেসব খাবার
এরই ধারাবাহিকতায় অনেকেই এখন আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার উপকারিতা এবং নিয়ম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হচ্ছেন, যা আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করতে চলেছি।
আজকের আর্টিকেলে আলকুশি পাউডার এর উপকারিতা, আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার নিয়ম, আলকুশি বীজের পাউডার কোথায় পাওয়া যায়, আলকুশি বীজের পাউডারের দাম কত, আলকুশি বীজের পাউডার বানানোর নিয়ম এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
আলকুশি পাউডার এর ১০টি উপকারিতা
আর্টিকেলের শুরুতে আলকুশি পাউডার এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন। অনেকে আলকুশি বীজ খাওয়ার পরিবর্তে এই বীজের পাউডার খেতে বেশি পছন্দ করেন। মূলতঃ পাউডার রূপে খাওয়ার সুবিধার জন্যই সবাই আলকুশি বীজের পাউডার ডায়েটে রাখেন, তবে এতে পুষ্টিগুণের কোনো হেরফের হয় না।
নিচে আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
পুরুষের শক্তি বৃদ্ধিতে আলকুশি পাউডার এর উপকারিতা
পুরুষের শক্তি বৃদ্ধিতে আলকুশি পাউডার খাওয়ার রয়েছে বিশেষ উপকারিতা। এই পাউডারে পুরুষের যৌন ক্ষমতা ও উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ উপাদান বিদ্যমান। পুরুষের যৌন জীবন শক্তিশালী করতে এবং প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে আলকুশি বীজের পাউডার বহুকাল আগে থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে।
বর্তমানেও দুর্বল শক্তির পুরুষদের এই বীজের পাউডার নিয়মিত খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
আলকুশি বীজের পাউডারে রয়েছে অ্যাফ্রোডিসিয়াক বৈশিষ্ট্য। এছাড়াও, ডোপামিন এবং অন্যান্য পুষ্টিগুণের কারণে পুরুষের উর্বরতার হার বৃদ্ধি হয়ে থাকে। এজন্য আলকুশি বীজের পাউডার নিয়মিত খেলে শুক্রানু বৃদ্ধি হয় যার মাধ্যমে প্রজনন ক্ষমতার উন্নতি ঘটে।
আলকুশির পাউডার টেস্টেরনের মাত্রা ঠিক রেখে যৌবন শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই এই পাউডার নিয়মিত খেলে বীর্য ঘন হয় এবং টেস্টোস্টেরনের শক্রানুর সংখ্যা ও গতি বৃদ্ধি পায়।
নিচে আলকুশি পাউডার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিনঃ
গরম দুধের সাথে আলকুশি বীজের পাউডার মিশিয়ে বা আলকুশি পাতার রস খেতে বলা হয়ে থাকে। যদি একটু আরো ভালো ও দ্রুত ফলাফল পেতে চান হলে আলকুশি বীজের পাউডারের (আধা চা চামচ) সাথে অশ্বগন্ধা (এক চা চামচ) দুধের (এক গ্লাস) সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। এর সাথে মধুও যোগ করতে পারেন।
বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণে আলকুশি পাউডারের উপকারিতা
বন্ধ্যাত্ব দূর করে প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষ উপকার রয়েছে আলকুশি পাউডারের। বন্ধ্যাত্বের জন্য দায়ী ফলিকল স্টিমোলেটিং হরমোন এবং প্রলেক্টিন এর মাত্রা কমিয়ে টেস্টটেরিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে বন্ধ্যাত্ব দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আলকুশি বীজের পাউডার।
তাই বন্ধ্যাত্ব থেকে রেহাই পেতে নিয়মিত আলকুশি বীজের পাউডার খেতে পারেন।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে আলকুশি পাউডারের উপকারিতা
আপনি যদি ডায়াবেটিস এর রোগী হয়ে থাকেন তাহলে আলকুশি পাউডার খাওয়ার মাধ্যমে তা সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। কারণ আলকুশি বীজের পাউডারে রয়েছে ডি চিরো ইনসিডল নামক উপাদান যার কাজ রক্তে সুগার কমিয়ে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা। এটা অনেকটা ইন্সুলিনের মতোই কাজ করে।
আরো পড়ুনঃ যেসব খাবার খেলে ডায়াবেটিস থাকবে নিয়ন্ত্রণে
অনেকের ডায়াবেটিস আসে জেনেটিক্স এর মাধ্যমে। ডায়াবেটিস হওয়ার আগে সঠিক নিয়মে জীবন যাপন করলে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। আবার অনেকে বেশি বেশি চিনি খেতে পছন্দ করেন। ডায়াবেটিসের ভয় থাকে তারপরেও খাওয়া ছাড়তে পারেন না। তাদের জন্য ডায়াবেটিস প্রতিরোধের একটি অন্যতম খাবার হলো আলকুশি বীজের পাউডার।
ক্যান্সার প্রতিরোধে আলকুশি পাউডারের উপকারিতা
আলকুশি পাউডার ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেখুন, আমাদের কারোরই ভবিষ্যতের কথা জানা নেই। আমাদের কল্পনার বাইরে হয়ে থাকে অনেক কিছুই। একজন সুস্থ সবল মানুষও ক্যান্সারের সম্মুখীন হতে পারে। তবে এই ব্যাপারে সচেতনতার অংশ হিসেবে আমরা ভালো মানের আলকুশি বীজের পাউডার খেয়ে খুব সহজেই ক্যান্সারের প্রতিরোধ করতে পারি।
আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে ক্যাটালজ ও গ্লুটাথিওন এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে। যার ফলে ফ্রি রেডিক্যাল আমাদের কোষের ক্ষতি করার সুযোগ পায় না। ফ্রী রেডিক্যাল হচ্ছে এমন মুক্ত অস্থির অনু যা আমাদের কোষের ধ্বংস করে থাকে। তাই আলকুশি বীজের পাউডার নিয়মিত ডায়েটে রাখলে ক্যান্সারের মতো ব্যাধি থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়।
স্ট্রেস কমাবে আলকুশি পাউডার
যেকোনো ধরনের স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমিয়ে মানসিকভাবে নিজেকে সুস্থ রাখতে আলকুশি পাউডার খেলে উপকার পাবেন। স্ট্রেস জনিত কারণে ঘনঘন মুড সুইং, মেজাজ খিটখিটে হওয়া থেকে মুক্তি দিবে আলকুসি বীজের পাউডার।
এছাড়া নিয়মিত আলকুশির পাউডার খেলে আপনার শরীরের সকল ক্লান্তি করে শরীরকে রাখবে ঝরঝরে, যে কোন কাজে পাবেন দ্বিগুণ উৎসাহ।
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে আলকুশি পাউডারের উপকারিতা
নিয়মিত আল খুশি পাউডার খেয়ে আপনার ব্রেনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি সহ স্মৃতিশক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কারণ আলকুশি বীজের পাউডারে থাকা অ্যামিনো এসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ই, নিউরো ট্রান্সমিটার, ডোপামিন মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি সহ স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটাতে কার্যকরী পালন করে।
পেটের সমস্যা দূর করতে আলকুশি পাউডারের উপকারিতা
আলকুশি পাউডার খাওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হলো পেটের যেকোনো সমস্যা দূর করতে আলকুশি বীজের পাউডারের জুড়ি মেলা ভার। আপনার যদি পেট ব্যথা বা পেটের সমস্যা বা কলেরা হয়ে থাকে, তাহলে আপনি আলকুশি বীজের চূর্ণ বা পাউডার খেতে পারেন। এক্ষেত্রে শুধু চূর্ণ বা পাউডার নয়, আলকুশি বীজের পাউডারের সাথে মধু দিয়ে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যাবে।
ত্বকের উন্নতিতে সহায়তাকারী আলকুশি পাউডার
ত্বকের যে কোন সমস্যা দূর করতেও আলকুশি পাউডারের রয়েছে বিশেষ কার্যকারিতা। নিয়মিত ও পরিমিত আলকুশি বীজ খেলে যেভাবে হৃদ যন্ত্রের ও মস্তিষ্কের যত্ন করা সম্ভব, সেভাবে ভিতর থেকে ত্বকেরও যত্ন নিবে এই পাউডার।
আলকুশির পাউডার খেলে ত্বকের উন্নতি হয়। ত্বকের সৌন্দর্য বজায় রাখা যায়। তাই ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিয়মিত আলকুশি বীজের পাউডার ডায়েটে রাখতে পারেন।
শারীরিক দুর্বলতা দূর করবে আলকুশি পাউডার
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে আলকুশি পাউডার
আলকুশি পাউডার খাওয়ার নিয়ম
আলকুশির পাউডার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আর্টিকেলের এই পয়েন্টে জানতে পারবেন। আপনি যদি আলকুশি বীজ খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, বীজ না খেয়ে অন্য কীভাবে খেলে ভালো হয়? আমি বলব, সহজ উপায় হিসেবে আলকুশি বীজের পরিবর্তে আলকুশি বীজের পাউডার খেতে পারেন।
আলকুশির পাউডার খাওয়ার অনেক নিয়মই আছে। আবার খাওয়া শুরু করলে আপনি নিজেও বিভিন্ন নিয়ম আবিষ্কার করতে পারেন। আপনাদের সুবিধার্থে নিচে আলকুশির পাউডার খাওয়ার সহজ নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
নিচে আলকুশি পাউডার খাওয়ার নিয়মগুলো উল্লেখ করা হলো-
- এক গ্লাস হালকা গরম দুধ বা পানির সাথে দুই চামচ আলকুশি পাউডার মিশিয়ে নিবেন। তবে আলকুশির পাউডারটি প্রিমিয়াম দুধের শোষিত হলে বেশি ভালো হয়। আপনি চিনি ব্যবহার করতে পারেন, তবে খাটি মধুর কোনো বিকল্প নেই। ডায়েবেটিস রোগীদের চিনি বা মধু ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে।
- রুটি বা পাউরুটি বানানোর সময় আলকুশির পাউডার মিশিয়ে নিতে পারেন।
- যদি আপনি চায়ের মতো করে খেতে চান, তাহলে গরম পানিতে আপনার পছন্দ অনুযায়ী আলকুশি বীজের পাউডার,দারুচিনি গুঁড়া এবং চিনি মিশিয়ে খেতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- গরম পানিতে ১/২ চামচ আলকুশি পাউডার, ১/৪ চামচ দারুচিনির গুঁড়া ও ১/২ চামচ চিনি বা গুড় মিশিয়ে ২ মিনিট জ্বাল দিলে ১ কাপ আলকুশি বীজের চা তৈরি করা সম্ভব।
- আপনার সুবিধামতো কিছু পরিমাণ দুধ জাল দিয়ে তার ঘনত্ব বাড়িয়ে তার সাথে ২ চা চামচ আলকুশি বীজের পাউডার মিশিয়ে নিন। এরপর ভালোমতে মেশানো হয়ে গেলে তা খেয়ে নিন।
- আপনি যদি দুধ এসিডিটি হয় তাহলে দুধের বদলে মধুও ব্যবহার করতে পারবেন! মধু মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে নাস্তা খাওয়ার আগে এবং রাতে খাবার খাওয়ার পরে খেয়ে নিবেন।
- আপনি চাইলে আলকুশির পাউডারের হালুয়া বানিয়েও খেতে পারেন। এক্ষেত্রে ২৫০ গ্রাম আলকুশি বীজের পাউডার ও তাল মাখনা (একই পরিমাণ), ১০০-২০০ গ্রাম খাঁটি মধু, ১-২ চামচ কালোজিরার গুঁড়া আর আখের গুড় একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে নিন। ব্যাস হয়ে গেলো আলকুশি বীজের গুঁড়ার হালুয়া!
- সকাল-সন্ধ্যা (সকালে খাওয়ার আগে এবং রাতে খাওয়ার পরে) ১ চামচ করে খেলে আপনার এটি শেষ করতে কমপক্ষে ৬-১২ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগবেই। আপনি হালুয়া খাওয়ার পরে এক গ্লাস দুধও খেতে পারেন।
- উপরের একই নিয়মে আপনি চাইলে এর বড়ি বানিয়েও খেতে পারেন।
- আপনি চাইলে আলকুশি পাউডার ছাগলের দুধের সাথেও খেতে পারেন। সেক্ষেত্রে এক গ্লাস ছাগলের দুধের সাথে ৫-৬টি আলকুশি বীজের গুঁড়া ফুটিয়ে দিনে দুইবার খেতে পারেন।
- কুসুম গরম দুধের সাথে পরিমাণমতো আলকুশি পাউডার ও চিনি মিশিয়ে খেয়ে নিতে পারেন।
আলকুশি বীজ, অশ্বগন্ধা ও শিমুল পাউডার একসাথে খাওয়ার নিয়ম
আপনারা অনেকেই জানতে চান, অশ্বগন্ধা ও শিমুল মূলের সাথে আলকুশি পাউডার কীভাবে খাব। তাই আপনাদের সুবিধার জন্য এটি একটু আলাদা করে লিখলাম, যাতে আপনারা সহজেই বুঝতে পারেন যে অশ্বগন্ধা, শিমুল পাউডার আলকুশি বীজের সাথে কীভাবে খেতে হয়।
আরো পড়ুনঃ কি খেলে দ্রুত ওজন কমে - রাতে কি খেলে ওজন কমে
এক চামচ করে আলকুশি পাউডার, অশ্বগন্ধার পাউডার ও শিমুলের পাউডার এক গ্লাস কুসুম গরম দুধের সাথে ভালোকরে মিশিয়ে নিয়মিত প্রতিদিন রাতে খাওয়ার পরে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। আপনি চাইলে হালকা মিষ্টির জন্য সামান্য চিনি বা মধু মিশিয়ে নিতে পারেন। এতে আলকুশি পাউডার খাওয়ার উপকারিতা বহু গুণ বেড়ে যাবে।
আলকুশি পাউডার ও অশ্বগন্ধা একসাথে খাওয়ার নিয়ম
আলকুশি পাউডারের সাথে অশ্বগন্ধা খাওয়ার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। এক গ্লাস হালকা গরম দুধের সাথে ১ চামচ আলকুশি পাউডার এবং ১ চামচ অশ্বগন্ধার পাউডার একসাথে ভালো করে মিশিয়ে প্রতিদিন রাতে খাওয়ার পর খেতে পারেন।
যেহেতু অন্যসব উপাদান মেশানোর সময় চিনি বা মধু মেশানো যায়, তাই বলা যায় যে আপনি চিনি বা মধুও মিশিয়ে খেতে পারেন। আলকুশি পাউডার ও অশ্বগন্ধা একসাথে মিশিয়ে খেলে অনেক রোগ ব্যাধি সারাতে উপকার পাওয়া যায়।
আলকুশি পাউডার এর অপকারিতা
আলকুশি পাউডার বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান এবং ভেষজ উপাদান সমৃদ্ধ। এজন্য বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে অনেকেই আলকুশি পাউডার নিয়মিত ডায়েটে রাখতে পছন্দ করেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আলকুশি পাউডার এর অপকারিতা রয়েছে, তাই খাওয়ার সময় অবশ্যই নিচে উল্লেখিত অপকারী দিক গুলো বিবেচনা করে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
- গর্ভাবস্থায় আলকুশি পাউডার না খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। কারণ এতে জরায়ুতে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে এবং সেই সাথে গর্ভস্থ ভ্রূণের ক্ষতি হতে পারে।
- যেসব মায়েরা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান, তাদেরকে আলকুশি পাউডার না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
- যেসব ব্যক্তি দীর্ঘদিন যাবত লিভার জনিত রোগে ভুগছেন, তাদেরকেও আলকুশি পাউডার না খাওয়াই ভালো হবে। কারণ এতে যে রোগ জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
- অতিরিক্ত আলকুশি পাউডার খাওয়ার ফলে ঝিমুনি এবং ভ্রম দেখার মত সমস্যা তৈরি হতে পারে।
- নিউরোপ্যাথি সংক্রান্ত যারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাদেরও আলকুশির পাউডার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- যেসব ব্যক্তির অনিয়মিত হৃদস্পন্দন রয়েছে এবং এ সংক্রান্ত চিকিৎসাধীন রয়েছে তাদের এই পাউডার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
আলকুশি পাউডার কোথায় পাওয়া যাবে
আর্টিকেলের এই পর্যায়ে জানতে পারবেন, আলকুশি বীজের পাউডার বা গুড়া কোথায় পাওয়া যাবে সে সম্পর্কিত তথ্য। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানীয় বাজারে যেমন আলকুশি বীজ পাওয়া যায় তার থেকে বেশি পাওয়া যায় আলকুশি বীজের গুড়া বা পাউডার।
আবার যে কোনো আয়ুর্বেদিক দোকানেই আলকুশির গুঁড়া বা পাউডার সহজে পাওয়া যায়।
আর যদি অনলাইনে কথা বলি তাহলে অবশ্যই দারাজ, রকমারি, স্বাস্থ্যবিধি, অথবা, পাহাড়ি ফুড, আরোগগা, আসল ফুডসহ আরও অন্যান্য সাইটে সহজে পেয়ে যাবেন আলকুশি পাউডার।
আলকুশি পাউডারের দাম কত
আলকুশি পাউডারের দাম কত এ সম্পর্কে আর্টিকেলের এই পর্যায়ে জানতে পারবেন। কারন আলকুশি পাউডার এর উপকারিতা সম্পর্কে উপরে জানার পর এবং খাওয়ার নিয়মও সহজ হওয়ায় আপনাদের অনেকেরই জানার আগ্রহ রয়েছে, আলকুশি পাউডারের দাম কত হতে পারে সে সম্পর্কে।
সাধারণত আলকুশি পাউডারের দাম ১৫০ থেকে ১৭০ টাকার নিচে হয় না। দারাজ এবং আসল ফুড ১০০ গ্রাম আলকুশি বীজের পাউডার ১৫০ টাকায় বিক্রি করে। আবার রকমারি এবং আরোগগা ২২০ টাকায় ১০০ গ্রাম আলকুশি পাউডার কিনতে পারবেন।
আবার পাহাড়ি ফুড ১০০ গ্রাম আলকুশি পাউডারের জন্য ২৫০ টাকা নেয়। অন্যদিকে স্বাস্থ্যবিধি ১০০ গ্রামের জন্য ২০০ টাকা নিয়ে থাকে। বা ১৯০ টাকায় ১০০ গ্রাম বিক্রি করে।
এছাড়াও সর্বোচ্চ দরে সাহিহ ফুডস্ ১০০ গ্রামে ৩৫০ টাকা নিয়ে থাকে। সাফাহ নামক আরেকটি অনলাইন সাইট ১০০ গ্রামের জন্য ৩০০ টাকা নিয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ শরীর অতিরিক্ত দুর্বল লাগার কারণ এবং দুর্বলতা দূর করার উপায়
উপরে উল্লেখিত এই দামগুলো থেকে বাজারে ১০০ গ্রাম আলকুশি পাউডার কত দামে বিক্রি করা হয় তা অনুমান করতে পারবেন। আসলে বাজারে সময়, ব্র্যান্ড এবং জাত নির্ভর করে আলকুশি পাউডার বা গুঁড়ার মুল্য কত হবে।
আলকুশি বীজ শোধন করে পাউডার করার নিয়মাবলি
আলকুশি বীজ শোধন করে পাউডার করার নিয়মাবলী সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এই অংশে জানতে পারবেন। আলকুশি পাউডার খাওয়ার উপকারিতা আপনি তখনই পুরোপুরিভাবে পাবেন যখন বীজটি সঠিকভাবে শোধন করে নিয়ম মাফিক খাবেন। কারণ আলকুশি বীজে ফেনল, ট্যানিন নামক উপাদান থাকায় এটি ভালো করে শোধন করে তারপর খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
নিচে আলকুশি বীজ শোধনের নিয়ম দেওয়া হলো-
উপকরণঃ খাঁটি গরুর দুধ, ঘি এবং আলকুশি বীজ।
নিয়মঃ আপনি যে পরিমাণ আলকুশির বীজ নিবেন তার দেড় গুণ দুধ নেওয়ার চেষ্টা করবেন। অর্থাৎ এক কেজি আলকুশির বীজে দেড় কেজি দুধ নেওয়ার চেষ্টা করবেন। যাই হোক, আলকুশির বীজগুলো আগে ভালো করে ধুঁইয়ে নিতে হবে। আরপর একটি পাত্রে ধোঁয়া আলকুশি বীজগুলো রেখে তার মধ্যে দেড় গুণ পরিমাণ দুধ মিশিয়ে নিতে হবে।
এরপর ১২-২৪ ঘন্টা এই দুধ সহ আলকুশি বীজ একটি ঠান্ডা স্থানে রাখুন। ১২-২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখার পর দুধসহ আলকুশি বীজ জ্বাল দিন। ততক্ষণ জ্বাল দিন যতক্ষণ না আলকুশির বীজগুলো সেদ্ধ হচ্ছে। একেবারে ভাতের মতো। সবগুলো বীজ সেদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর চুলা থেকে তা নামিয়ে দিন। যখন তা ঠান্ডা হয়ে যাবে তখন বীজগুলোর খোসা ছাড়িয়ে নিন।
ছোটো বীজগুলো সেদ্ধ না হওয়ায় খোসা ছাড়ানো না গেলেও কোনো সমস্যা নেই। এবার সব বীজের খোসা ছাড়ানো হয়ে গেলে সে বীজগুলো রোদে শুকুতে দিন। আর দুধ ফেলে দিন। এবারে এক পোয়া ঘি চুলায় জ্বাল দিন (আগের ১ কেজি আলকুশি বীজের পরিমান অনুসারে)। কিছুক্ষণ পর তা গরম হয়ে গেলে সেটিতে আগে শুকানো আলকুশি বীজগুলো ভেজে নিন আর নামিয়ে আবার শুকিয়ে নিন।
বীজগুলো শুকিয়ে গেলে আপনাদের ঘরে গুঁড়ো করার জন্য যা আছে (যেমন- ব্লেন্ডার, পাটা ইত্যাদি) তা দিয়ে ভালো করে গুঁড়া গুঁড়া করে নিন। আপনি চাইলে এই গুঁড়া রোদে দিতে পারেন, আবার না-ও দিতে পারেন। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে আপনাদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যেমনঃ
সতর্কতাঃ
- দুধসহ আলকুশি বীজ ঠান্ডা স্থানে রাখার চেষ্টা করুন, তা না হলে দুধ নষ্টও হয়ে যেতে পারে। যার ফলে আলকুশির বীজগুলোও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- বড় বীজগুলো সেদ্ধ হয়ে গেলেও ছোটো বীজগুলোর সেদ্ধ হয় না তেমনটা। তাই ছোট বীজগুলো সেদ্ধ করার জন্য বেশিক্ষণ জ্বাল দেওয়ার দরকার নেই।
- ঘি দিয়ে আলকুশি বীজ না ভাজলেও চলবে। এতে গুণাগুণের তেমনটা পরিবর্তন হবে না।
আলকুশি পাউডার উপকারিতা সম্পর্কিত প্রশ্ন এবং উত্তর
পরিশেষে
আজকের আর্টিকেলে আলকুশি পাউডার এর উপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। সাথে জানতে পেরেছেন আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে। এছাড়া আলকুশি বীজ শোধন প্রক্রিয়া, কোথায় পাওয়া যায় এবং দাম সম্পর্কেও আলোচনা করেছি।
আপনি যদি আলকুশি পাউডার খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য অনেক উপকারী হবে আশা করা যায়। আর্টিকেলটি যদি আপনি উপকারী মনে করেন তাহলে আপনার বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতদের মধ্যে শেয়ার করতে পারেন, যাতে তারাও উপকৃত হতে পারে।
passiondrivefiona র নীতিমালা মেনে comment করুন। প্রতিটি comment রিভিউ করা হয়;
comment url