আলকুশি বীজ খাওয়ার ১৮টি উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
আলকুশি বীজ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করতে চলেছি। আলকুশি বীজ নিয়ম মেনে খেলে এই বীজ থেকে অভূতপূর্ব উপকারিতা পাওয়া যায়, যা এই আর্টিকেলটি পড়লে জানতে পারবেন।। এছাড়া জানতে পারবেন আলকুশি বীজের অপকারিতা সম্পর্কে।
আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আলকুশি বীজ পরিচিত একটি খাবার। এই বীজে থাকা পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতার জন্য অনেকে নিয়মিত খাদ্য তালিকায় আলকুশি বীজ রাখতে পছন্দ করেন। আপনিও যদি উপকারী এই বীজটি সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে চান তাহলে আজকের পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। পোস্ট সূচিপত্রঃ
আলকুশি বীজ খাওয়ার উপকারিতা
আলকুশি বীজ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আর্টিকেলের শুরুতে বিস্তারিত আলোচনা করব। আলকুশি বীজের উপকারিতা সম্পর্কে জানলে আপনিও নিয়মিত এই বীজ টি আপনার ডায়েটে রাখবেন নিশ্চিত। এছাড়া এই বীজের এমন কিছু উপকারীতা রয়েছে যা জেনে রাখলে ভবিষ্যতে আপনার কাজে দিবে।
প্রিয় পাঠক, আপনি যখন কোন খাবার আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখবেন তখন ওই খাবারের পুষ্টিগুণ, উপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম, কোন অপকারিতা আছে কিনা এ সকল বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিবেন, সেটি আপনার জন্য ভালো ফলাফল বয়ে আনবে নিশ্চিত। এরকম একটি খাবার আলকুশি বীজ।
নিচে আলকুশি বীজ খাওয়ার ১৮টি উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন-
আরো পড়ুনঃ আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা - কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
হৃদরোগ থেকে দূরে থাকতে আলকুশি বীজের উপকারিতাঃ আপনাদের মধ্যে যারা হৃদ রোগের সমস্যায় ভুগছেন, তারা আলকুশি বীজ খাওয়া এখনই শুরু করে দিন। কেননা আলকুশি বীজ হৃদরোগের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম। আলকুশি বীজের ভেতর উপস্থিত আছে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং পলিয়ানস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা শুধু হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে না বরং রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়।
আলকুশি বীজে ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে তা নিয়মিত হৃদ স্পন্দন বজায় রাখে, যার ফলে হূদ রোগ থেকে দূরে থাকা যায়। এছাড়াও এই উপাদানটি সঠিক রক্ত সঞ্চালন বজায় রাখে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আলকুশি বীজের উপকারিতাঃ আলকুশি বীজ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আলকুশি বীজে থাকা লিভুডোপা নামক উপাদান আমাদের শরীরের রক্তের চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া আলকুশি বীজের পাউডারে থাকা ডি চিরো ইনোসিটল নামক উপাদান রক্তে ইন্সুলিনের মাত্রা সঠিক রেখে রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এর ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়।
তাছাড়া আলকুশি বীজ রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে।
ওজন কমাতে আল্কুশির বীজ খাওয়ার উপকারিতাঃ মূলতঃ কম ক্যালরি সম্পন্ন ও বেশি প্রোটিন সম্পন্ন খাবার খেয়েই মানুষ ওজন কমাতে পারে। এছাড়াও অনেক ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর ডায়েটের মাধ্যমেও ওজন কমানো সম্ভব। এক্ষেত্রে আলকুশি বীজ হতে পারে একটি আদর্শ খাবার।
আলকুশি বীজে কম পরিমাণ ক্যালরি রয়েছে ও বেশি পরিমাণ প্রোটিন রয়েছে যার কারণে আপনি আপনার সুষম খাদ্যের তালিকায় এটি রাখলে খুব সহজেই আপনি ওজন কমাতে পারবেন। বেশি প্রোটিন জাতীয় খাবার গুলো খাবার খাওয়ার তৃপ্তি কমায় এবং অল্পতেই ক্ষুধা মিটিয়ে অনেকক্ষণ না খাওয়ার প্রবণতা বজায় রাখে।
যার ফলে আলকুশি বীজ খেলে আপনার ওজন কমানো সম্ভাবনাও রয়েছে।
হজম শক্তি বৃদ্ধিতে আলকুশি বীজের উপকারিতাঃ আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যাদের হজমের সমস্যা হয়। হজম জনিত সমস্যা দূর করতে আলকুশি বীজ আপনার জন্য একটু উত্তম খাদ্য হতে পারে। আমাদের সবার একটি পরিচিত পুষ্টি উপাদান হলো ফাইবার। এই ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং এর সাথেও অন্ত্রের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করে।
আলকুশি বীজ ফাইবারে ভরপুর। তাই আপনি যদি আলকুশি বীজ নিয়মিত খান তাহলে আপনার পেটের সমস্যা তো যাবেই, এর সাথে আপনার শরীরে ফাইবারের চাহিদা সম্পূর্ণ পূরণ করবে। অর্থাৎ এক বাক্যে বলা যেতে পারে যে, আলকুশি বীজে থাকা পুষ্টি উপাদান পাচক এনজাইম নিঃসরণে উদ্দীপ্ত করে। যা অবশ্যই হজমের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এছাড়াও ফাইবার শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ সরাতে এবং পুষ্টি শোষন করতে সাহায্য করে থাকে। আলকুশি বীজে থাকা ফাইবার ওজন কমাতেও বেশ উপকারী। আপনি যদি এক ঢিলে দুই নিশানা মারতে চান তাহলে আলকুশি বীজ খাওয়া এখনই শুরু করে দিন।
ফ্রি র্যাডিকেলের বিরুদ্ধে আলকুশি বীজের উপকারিতাঃ ফ্রি রেডিক্যাল হল এক ধরনের মুক্ত অস্থির অনু যা আমাদের শরীরে থাকে। এই মুক্ত অনু গুলো সাধারণত আমাদের কোষের ধ্বংস করে থাকে। এরকম অনেক অনুর নাম আছে তাই এগুলোকে একত্রে ফ্রি রেডিক্যাল বলা হয়। আর এই ফ্রি রেডিক্যাল গুলো এক ধরনের ক্ষতিকর অনু।
আলকুশি ভিজে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর একটি বৈশিষ্ট্য হলো ফ্রি রেডিক্যাল থেকে যেসব ক্ষতি সৃষ্টি হয় সেসব ক্ষতি থেকে কোষকে রক্ষা করা।
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য আলকুশি বীজের উপকারিতাঃ আলকুশি বীজে থাকা বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন-ই, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এল-ডোপা এবং নিওরোট্রান্সমিটার ডোপামিন হলো উপযোগী পুষ্টিগুণ। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উপরই শুধু নয় বরং এসব উপাদান মেজাজ এর উপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও উদ্বেগ থেকে মস্তিষ্কের কোষগুলোকে রক্ষা করে এবং জ্ঞানীয় পতনের ঝুঁকি কমিয়ে এর নিয়ন্ত্রণে যথাক্রমে ভিটামিন ই ও ডোপামিনের গুরুত্ব অনেক। আলকুশি বীজ খেলে ভিটামিন ই পাওয়া যায় ও এর সাথে সাথে ডোপামিনের মাত্রা বৃদ্ধি করা যায়।
আবার কিছু গবেষক এটি দাবি করেন যে, নিউরোপ্রোটেক্টিভ বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে এটি ব্রেইনের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সক্ষম।
ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আলকুশি বীজের উপকারিতাঃ এখন আপনাদের জানাবো, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আলকুশি বীজের উপকারিতা সম্পর্কে। যারা শিক্ষার্থী অর্থাৎ ছাত্র ছাত্রী তারা অনেক সময় এমন খাবার খুঁজে থাকে যেগুলো মনোযোগ, স্মৃতি এবং ঘুমের উপর একটু ভালো প্রভাব ফেলবে। আলকুশি বীজ হলো এরকম একটি খাবার। আলকুশি বীজে থাকা পুষ্টিগুণ মনোযোগ, স্মৃতি এবং সামগ্রিক জ্ঞানীয় এর উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এছাড়াও আলকুশি বীজে থাকা এল-ডোপা মেলাটোনিনের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ঘুমের উন্নতি ঘটিয়ে থাকে। এখানে একটা কথা বলে রাখি, মেলাটোনিন এমন একটি হরমোন যা ঘুম ও জাগ্রততার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া যুক্ত মেলাটোনিনের ট্যাবলেট খাওয়া বন্ধ করে আপনি প্রাকৃতিক খাবার আলকুশি বীজ খাওয়া শুরু করুন।
আলকুশি বীজের অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
আর্টিকেলের এই পর্যায়ে, আলকুশি বীজের অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন। আলকুশি বীজ এবং বীজের পাউডার খাওয়ার অনেক উপকারিতা থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা লক্ষ্য করা যায়। তাই আলকুশি বীজ খান, কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু অতিরিক্ত খেলে সমস্যা আছে।
আমরা সবাই জানি অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। একই রকমভাবে অতিরিক্ত আল্কুশি বীজ বা বীজের পাউডার খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো না। বিভিন্ন ধরনের পার্স্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে অতিরিক্ত আলকুশি বীজ খেলে। আবার কিছু বিশেষ ব্যক্তিদের জন্যও আলকুশি বীজ না খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ডাক্তাররা।
এসব ব্যক্তিদের আলকুশি বীজ খাওয়া থেকে বিরত থাকলেই ভালো। তাই এসব কারণে অনেকেই আলকুশি বীজ খায় না বা খাওয়া থেকে বিরত থাকে।
অতিরিক্ত আলকুশি বীজ খাওয়ার অপকারিতা এবং যেসব বিশেষ ব্যক্তিরা আলকুশি বীজ খেতে পারবে না নিচে উল্লেখ দেওয়া হলো-
- আলকুশি বীজে এল-ডোপা থাকায় তা মাত্রতিরিক্ত খেলে এই পুষ্টিগুন পার্স্বপ্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করে। যার ফলাফল হলো হ্যালুসিনেশন, বিভ্রান্তি, মেজাজ পরিবর্তন ও সিজোফ্রেনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা।
- ব্যক্তি বিশেষে কারো কাছে আলকুশি খুবই ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, কার সাথে নেতিবাচক। অনেক সময় কারো কারো ক্ষেত্রে আলকুশি বীজ খেলে ত্বকের চুলকানি, ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব বা বমি হয়ে থাকে।
- গর্ভবতী মহিলাদের আলকুশি বীজ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। কারন আলকুশি বীজ খেলে তা জরায়ুর উপর প্রভাব ফেলতে পারে। যার ফলাফল হতে পারে জরায়ু ফেটে রক্তপাত হওয়া।
- লিভারের রোগে যেসব ব্যক্তি আক্রান্ত, তাদের আলকুশি বীজ খেতে বিশেষভাবে না করা হয়। কেননা আলকুশি বীজের পুষ্টি উপাদান (এল-ডোপা) লিভারের রোগের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
- অনিয়মিতভাবে প্রিস বন্ধন, সাইকোসিস আর নিউরোপ্যাথির চিকিৎসা নিচ্ছেন যারা, তাদের জন্য আলকুশি বীজ না খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
- আলকুশি বীজ যেমন হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে পারে, তেমনি হৃদের ক্ষতিও করতে পারে। অতিরিক্ত আলকুশি বীজ খাওয়ার ফলে এটি হৃদস্পন্দনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এছাড়াও হতে পারে মাথাব্যাথা ও উচ্চরক্তচাপ। মূলত এল-ডোপা এর কারণে এসব হয়।
- বিভিন্ন ঔষধ যেমন, পারকিন্সন রোগের, বিষণ্নতার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত ওষুধ এবং এরকম ঔষধের উপর আলকুশি বীজের পুষ্টি উপাদান মিথস্ক্রিয়া করে থাকে। তাই যারা এসব বা এধরনের ঔষধ খান তারা আলকুশি বীজ খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিলে সবচেয়ে ভালো হয়।
- অপ্রাপ্তবয়স্কদের আলকুশি বীজ খেতে নিষেধ করা হয়েছে। আবার, দুগ্ধদানকারী মায়েদেরও আলকুশি বীজ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
আলকুশি বীজ খাওয়ার নিয়ম
প্রিয় পাঠক, উপরে আপনারা জানতে পেরেছেন আলকুশি বীজ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। আর্টিকেলে এই পর্যায়ে জানতে পারবেন, আলকুশি বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। আলকুশি বীজ বিভিন্নভাবে আপনার ডায়েটে রাখলে উপকার পাবেন।
আলকুশি বীজ যেহেতু খানিকটা সিমের মতো, তাই আপনি বিভিন্ন তরকারিতে সিম হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও আলকুশি বীজ সিদ্ধ করে ভর্তা সালাদ বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
আবার আপনি আলকুশি বীজ স্যুপ, স্টিম ফ্রাই ও স্ট্যুতেও ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও আল-কুশী বীজের স্মুদি তৈরী করা সম্ভব। চাইলে নিজের প্রিয় স্মুদিতে এটি ব্যবহার করতে পারেন। এটি স্বাদ তেমনটা পরিবর্তন করবে না, শুধু বাদামের ঘ্রান আনবে আপনি যদি এক মুঠ আলকুশি বীজ ব্যবহার করেন তাহলে।
তাড়াতাড়ি ও স্বাস্থ্যকর খাবার হতে পারে এই আলকুশি বীজ। আপনি কোথাও গেলে ডায়েটের জন্য এই বীজের ভাজা বা বিভিন্ন মশলা দিয়ে তৈরি করা সিজনিং খেতে পারেন। এমনি এমনিও খেতে পারেন তবে তা সম্পুর্ণ আপনার উপর নির্ভর করে। এছাড়াও বিভিন্ন শুকনো ফল দিয়ে তৈরী মিক্সও খেতে পারেন আপনি।
পুরুষ শক্তিতে আলকুশি বীজের উপকারিতা
আলকুশি বীজ কি
প্রিয় পাঠক, আর্টিকেলের এই অংশে জেনে নিন আলকুশি বীজ কি? আলকুশি হল এক ধরনের গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এটি মূলতঃ সিম জাতীয় উদ্ভিদ পরিবারের সদস্য। এর যে ফল হয় তা অনেকটা শিমের মতো দেখতে এবং ভেতরে চার থেকে ছয়টি বীজ থাকে। এগুলোকেই আল্কুশি বীজ বলা হয়।
ইংরেজিতে আলকুশি কে ভেলভেট বিন (velvet bean) বলা হয়ে থাকে এবং আলকুশির বৈজ্ঞানিক নাম হল mucuna pruriens. আলকুশি কে চেনার একটি উপায় হচ্ছে এর ফল দেখে। এটি সিমের মতো হলেও তা ছোট ছোট অসংখ্য লোম দিয়ে আবৃত থাকে এবং এটি দেখতেও অনেকটা বেগুনি। আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে মানুষের কাছে আলকুশি বিলাই খামচি বা বিড়ালের খামচি নামে সুপরিচিত।
আবার খুলনা, যশোর ও বাগেরহাট অঞ্চলে এই ফলকে সবাই দয়ারগুঁড়ো, নাটোর ও নওগা অঞ্চলে শুয়াগুঁড়া নামে আলকুশী পরিচিত। এছাড়াও আমাদের দেশে এটিকে বিচ্ছুটি, বিলাই আঁচড়া, খামচি, সোয়াস গুড়ি আরো অনেক নামে মানুষ ডাকে।
আলকুশিকে এরকম নামে ডাকার কারণ হলো এর ফলে যে ছোট ছোট লোম আবৃত থাকে সেগুলো বাতাসে ভেসে বেড়ায়। যার ফলে সাধারণত বানরেরা আলকুশি গাছের ফল পাকা হওয়ার সময় ওই এলাকা ত্যাগ করে। যখন আলকুশির ফলগুলো পেকে মাটিতে পড়ে যায় তখন বানরেরা আবার ফিরে আসে।
আরো পড়ুনঃ সবচেয়ে বেশি আর যুক্ত খাবার কোনগুলো জানুন
সাধারণত আলকুশির ১০০টি বীজের ওজন ৫৫ থেকে ৮৫ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপনাদের বলি, মধ্য আমেরিকায় কফির বিকল্প হিসেবে আলকুশি বীজের চূর্ণ ব্যবহার করা হয় যা ব্রাজিল এবং অন্যান্য দেশে নেস ক্যাফে নামে পরিচিত।
আলকুশি বীজ দেখতে কেমন জেনে নিন
আলকুশির বীজ দেখতে খানিকটা কালচে, তবে এই রংকে ঘন বেগুনিও বলা যেতে পারে। এটি মূলতঃ বীজের বাইরের অংশ বা খোলস। এর ভেতরের মূল যে বীজ রয়েছে সেটি হলুদ বা সাদা হয় এবং দেখতে অনেকটা ডিম্বাকৃতি এবং শক্ত খোলস দ্বারা আবদ্ধ থাকে।
এগুলো খুব ছোট আকৃতির হয়ে থাকে, তা সত্ত্বেও বীজের ভিতরে অনেক পুষ্টি রয়েছে। আলকুশি বীজগুলো থেকে হালকা বাদামের গন্ধ বের হয়।
বিভিন্ন প্রকার আলকুশি বীজ চেনার উপায়
আলকুশি বীজের উপকারিতা সম্পর্কে জানার পর অনেকে জানতে চান, আলকুশি বীজ চেনার উপায় সম্পর্কে। আমাদের দেশে অনেক ধরনের আলকুশি বীজ দেখতে পাওয়া যায়। হয়তো এর প্রকারভেদের নাম বলে শেষ করা যাবে না।
তবে যত প্রকারই হোক না কেন, আলকুশির বীজকে দুই প্রকারে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো- পাহাড়ি বা জংলি আলকুশি বীজ এবং আরেকটি হলো চাষকৃত বা দেশি আলকুশি বীজ।
আলোচনার এই অংশে দুই রকম আলকুশি বীজ চেনার উপায় জেনে নিন-
পাহাড়ি বা জংলি আলকুশি বীজ
পাহাড়ি বা জংলি আলকুশি বীজ চেনার জন্য এর ফলের বিষয়ে একটু ধারণা নেওয়া যাক। এক ধরনের আলকুশির ফলে বিড়ালের গায়ের মত অনেক লোম থাকে সেগুলোকে পাহাড়ি বা জংলি আলকুশি বীজ বলে। এই ফল এর লোমের জন্য মানুষের ধরার উপযোগী হয় না। ধরলে অনেক পরিমাণ চুলকায় যা সহ্য করা সম্ভব না।
পাহাড়ি বা জংলি আলকুশি বীজ খানিকটা ছোটো হয়ে থাকে। অন্তত দেশি বা চাষকৃত বীজের থেকে ছোটো হয়। এছাড়াও এই ফলের বীজের রং একেবারে কুচকুচে কালো না। কয়েকটি রঙের চায়ার মিশ্রণ।আপনি যদি আলকুশি বীজ খেতে চান তাহলে পাহাড়ি বা জংলি আলকুশি বীজ বেছে নিবেন। কেননা এটি অত্যন্ত ক্ষমতা সম্পন্ন এবং শতভাগ কার্যকারিতা দেয়।
চাষকৃত বা দেশি আলকুশি বীজ
চাষকৃত বা দেশি আলকুশি বীজ দেখতে কেমন তা জানার আগে এর ফলের ধরন বুঝে নেওয়া যাক। এর ফলে সাধারণত কোনো লোম থাকে না। যার থেকে সহজেই বোঝা যায় এটি হচ্ছে চাষকৃত বা দেশি আলকুশির ফল। আবার, এটি দেখতে খানিকটা তেতুলের মতো।
চাষকৃত বা দেশি আলকুশি বীজ কুচকুচে কালো এবং আকারে অনেক বড় হয়ে থাকে। অন্তত পাহাড়ি বা দেশি আলকুশি বীজের থেকে বড় হয়ে থাকে। কুচকুচে কালো রং ছাড়া একটি বীজের খোলস আর কোনো রং থাকে না। ভেতরের রং সাদা বা খানিকটা হলুদ হয়ে থাকে।
আলকুশি বীজ খেলে কি হয়
- যদি আপনার সুষম খাবারের তালিকায় ভিন্ন কোন খাবার যোগ করতে চান, তাহলে আপনি আলকুশি বীজ রাখতে পারেন। কেননা এটি একটি সুষম খাদ্য হিসেবেই কাজ করে। ভিটামিন প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং খনিজ লবণ দিয়ে গঠিত আলকুশির বীজ সত্যিই সুষম খাদ্য হিসেবে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া আলকুশি বীজে ওমেগা-১ ওমেগা-৬ রয়েছে।
- এই পুষ্টি উপাদান গুলো মস্তিষ্কের ও হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাথে দেহের প্রদাহ দূর করতে খুবই উপকারী। আমাদের সবার পরিচিত উপকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এই বীজে পাওয়া যায়। যদি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে আপনার বোঝার সুবিধার জন্য বলে রাখি, এই পুষ্টি উপাদান দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি ও শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
- আবার অ্যামিনো এসিড এমন একটি পুষ্টিগুণ যা বিভিন্ন শারীরিক কার্যকলাপ বিশেষ করে প্রোটিনের বিল্ডিং ব্লক তৈরি করতে সাহায্য করে। কিন্তু আমাদের শরীর এই অ্যামিনো এসিড তৈরি করতে পারে না। তবে আলকুশি বীজে এই পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। যার ফলে আলকুশি বীজ খাওয়া একটি উপকারী অভ্যাস হয়ে ওঠে।
- টিউমার প্রতিরোধ করতেও আলকুশি বীজ অনেক কার্যকারী খাবার বলে জানা যায় এক গবেষণা থেকে। আলকুশি বীজে মিথেনল রয়েছে বলে এটি টিউমার প্রতিরোধ করতে পারে বলে দাবি করেন তারা।
আলকুশি বীজ কোথায় পাওয়া যায়
আলকুশি বীজ কোথায় পাওয়া যাবে এ সম্পর্কে নিশ্চয়ই আপনাদের জানতে ইচ্ছে করছে। দেখুন, কোন কিছু কিনতে চাইলেই আমাদের সামনে দুইটি পথ চলে আসে। প্রথমটি হল একেবারে বাজারে গিয়ে কেনা আর দ্বিতীয়টি হল অনলাইনে কেনা।
অনলাইনে কেনা সহজ। কেননা সার্চ দিলেই মুহূর্তের মধ্যে সামনে অনেকগুলো সাইট ভেসে ওঠে এবং সহজেই অর্ডার দেওয়া যায়। বিভিন্ন অনলাইন সাইটে যেমনঃ রকমারি, স্বাস্থ্যবিধি, অথবা, দারাজ, আমার ডাল ইত্যাদি সাইটে পাবেন।
আরো পড়ুনঃ টক দই খাওয়ার উপকারিতা - সকালে টক দই খাওয়ার উপকারিতা
যদি আপনি অনলাইনে কেনার থেকে বাজারে গিয়ে কেনাটা বেশি করেন, তাহলে আপনি স্থানীয় বাজারগুলোতে দেখতে পারেন। স্থানীয় বাজারের কয়েকটি উদাহরণ হতে পারে-আমাদের দেশ অর্থাৎ বাংলাদেশের মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, বিক্রেতাদের হাট ইত্যাদি বাজারে পাবেন।
আবার খুলনা, মিরপুরের সবুজ বাগান, নওগাঁ, বাগেরহাট, বগুড়া, ব্রাহ্মণ বাড়িয়া, ফেনী, যশোর, চট্টগ্রাম ইত্যাদি অঞ্চলে আলকুশি বীজ পাওয়া যায়।
আলকুশি বীজের দাম কত
আলকুশি বীজের দাম কত তা নির্ভর করে আপনি কোথা থেকে আলকুশি বীজ কিনছেন। কিন্তু এটি বলা যায় যে, যদি আপনি পাহাড়ি বা জঙ্গি আল কুশি বীজ কিনেন তাহলে তার দাম একটু বেশি পড়বে। ২০০০ টাকার আশেপাশে পরবে। আর যদি আপনি চাষকৃত আলুসি বীজ কিনেন তাই তার দাম এই দামের থেকে অনেক কম পড়বে।
রকমারিতে পাহাড়ি বা জংলি আল-কুশি বীজ এক কেজিতে ২৭৯০ টাকায় বিক্রি করা হয়।
আলকুশি বীজ কত দিন খেতে হবে
প্রিয় পাঠক, আপনারা যারা আলকুশি বীজ খাওয়ার উপকারিতা এবং আলকুশি বীজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পর আপনাদের ডায়েটের অংশ করতে চাচ্ছেন এ পর্যায়ে আপনাদের জানার আগ্রহ রয়েছে যে আলকুশি বীজ কতদিন খেতে হবে।
আপনার স্বাস্থ্য দেখার পরেই আপনার নিয়মিত চিকিৎসক এটা নির্ধারণ করে দিবেন যে আলকুশি বীজ কতদিন খেতে হবে। তবে বলা হয়ে থাকে অন্তত ২৮ দিন খেতে। যদিও আপনার সমস্যা ভালো না হওয়া পর্যন্ত খেলেই আপনার বেশি মঙ্গল হবে, তাই আপনার সমস্যা ভালো না হওয়া পর্যন্ত খাবেন, সময় অনুযায়ী খাবেন না।
পরিশেষে
প্রিয় পাঠক, আলকুশি বীজ খাওয়ার উপকারিতা, আলকুশি বীজের অপকারিতা, আলকুশি বীজ খাওয়ার নিয়ম সহ আরো অন্যান্য তথ্য সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আলকুশি বীজে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আলকুশি বীজের পাউডার পাওয়া যায়, তাই এটি গ্রহণ অত্যন্ত সহজ হয়েছে।
তাই আমি বলব, আপনি আপনার হেলদি ডায়েটের অংশ হিসেবে নিয়মিত আলকুশি বীজ চিকিৎসকের পরামর্শ মত খেতে পারেন।
passiondrivefiona র নীতিমালা মেনে comment করুন। প্রতিটি comment রিভিউ করা হয়;
comment url