চাশতের নামাজের নিয়ম, সময় এবং আরবি নিয়ত - চাশতের নামাজের ফজিলত
চাশতের নামাজের নিয়ম, সময় এবং আরবি নিয়ত সম্পর্কে আজকে আর্টিকেলে আলোচনা করতে চলেছি। তাহাজ্জুদ নামাজের পর চাশতের নামাজকে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নফল নামাজ বলা হয়। এছাড়া চাশতের নামাজের ফজিলত সম্পর্কেও এই পোস্টে জানতে পারবেন।
পোস্ট সূচিপত্রঃচাশতের নামাজের গুরুত্ব এতটাই বেশি যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন। অথচ আমাদের মধ্যে হাজারে একজনও এই নামাজ আদায় করি কিনা সন্দেহ। আজকে এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা চাশতের নামাজ বা সালাতুত দোয়া নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। আশা করি আজকের পোস্টটি আপনাদের উপকারে আসবে।
চাশতের নামাজ কি
চাশত হলো একটি ফরাসি শব্দ এবং আরবি শব্দ হল দোহা। অর্থাৎ সূর্য উঠার পর থেকে দুপুরে সূর্য মধ্য আকাশে যাওয়ার আগ মুহূর্ত সময়কে দোহা বলা হয়। এ কারণে চাশতের নামাজকে সালাতুদ দোহা নামাজ বলা হয়। এই নামাজকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ নফল নামাজ বলা হয়ে থাকে।
এছাড়া আরো বিভিন্ন হাদিসে এই নামাজকে "সালাতুল আওয়াবীন" বা আল্লাহ ওয়ালা গণের সালাত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
চাশতের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জানুন
চাশতের নামাজ সূর্য ওঠার ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর থেকে শুরু করে গরমকালে সকাল ১০টার মধ্যে এবং দিন যখন ছোট হয়ে আসে অর্থাৎ শীতের সময় ১১:০০ টার আগে পড়া উত্তম। তবে যোহরের আগ পর্যন্ত যে কোনো সময় এই নামাজ আদায় করা যায়।
অন্য নফল নামাজের মতই চাশতের নামাজ আদায় করতে হয়। চাশতের নামাজ সর্বনিম্ন দুই রাকাত করে চার রাকাত, ছয় রাকাত, আট রাকাত থেকে যত রাকাত আদায় করা যায়। তবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ৮ রাকাতের কথা বলা হয়েছে। সাধারণত অন্য নফল নামাজের মতই সাধারণ সূরা দিয়ে এই নামাজ আদায় করতে হয়।
আরো পড়ুনঃ রবিউল আউয়াল মাসের ক্যালেন্ডার - ১২ই রবিউল আউয়াল কত তারিখ ২০২৪
এই নামাজ প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে একদিন বা কোন কারণে পড়ার সময় না হলে বন্ধের দিন বা মাসে একবার হলেও আদায় করার চেষ্টা করা উচিত।
আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেছেন-
"যে ব্যক্তি দোহার চাস্তের সালাত দু'রাকাত আদায় করবে সে গাফিল বা অমনোযোগী বলে গণ্য হবে না। আর যে চার রাকাত আদায় করবে সে আবিদ বা বেশি বেশি ইবাদতকারী বলে গণ্য হবে। আর যে ছয় রাকাত আদায় করবে তার সে দিনের জন্য আর কিছু দরকার হবে না। আর যে ব্যক্তি ৮ রাকাত আদায় করবে, তাকে আল্লাহ 'কানিতীন' (উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন অলি) বান্দা করে লিখে নিবেন। আর যে ১২ রাকাত আদায় করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে বাড়ি বানিয়ে রাখবেন।"
চাশতের নামাজের সময় জেনে নিন
চাশতের নামাজের সময় ইশরাক নামাজের পরপরই শুরু হয়। সাধারণত চাশতের নামাজের সময় সূর্য উঠার মুহূর্ত থেকে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর থেকে শুরু হয়। এই সময় থেকে শুরু হয়ে সূর্য মধ্য আকাশে স্থির হওয়ার আগ পর্যন্ত বা জোহরের নামাজের আগ পর্যন্ত যে কোনো সময় আদায় করা যায়।
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন, "চাশতের নামাজ পড়তে হবে যখন সূর্যের তাপ প্রখর হয়।"
অর্থাৎ সূর্যের তাপ যখন প্রখর হতে শুরু করবে তখন চাশতের নামাজ পড়ার উত্তম সময়।
চাশতের নামাজের আরবি নিয়ত
চাশতের নামাজ পড়ার জন্য জায়নামাজে দাঁড়িয়ে শুদ্ধ মনে নিয়ত করে নামাজ শুরু করতে হয়।চাশতের নামাজ আদায় করার জন্য অন্য সব নফল নামাজের মতই আল্লাহর উদ্দেশ্যে নামাজের নিয়ত করতে হয়।
"আমি আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে আল্লাহকে রাজি/খুশি করার উদ্দেশ্যে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করার নিয়ত করতেছি।" এরপর আল্লাহ আকবর বলে নামাজ শুরু করতে হয়।
চাশতের নামাজের আরবি নিয়ত নিম্নরূপঃ
"নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকাআতাই চারাতিজ জোহা সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিতাতিল কা'বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।"
অর্থঃ আমি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর রাসূলের সুন্নত দুই রাকাত চাশত নামাজ আদায় করছি, আল্লাহু আকবার।
চাশতের নামাজে কোন সূরা পড়তে হয়
চাশতের নামাজকে আজম আয়াত বলা হয়। এই নামাজে সুরার পরিবর্তে ইচ্ছে করলে আয়াতুল কুরসি পড়া যেতে পারে। তবে সুরা ফাতেহার পরে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার জন্য তিন আয়াত পর্যন্ত পড়তে হবে। কিন্তু আয়তাল কুরসির একক আয়াত পড়লেই সালাত আল্লাহর নিকট বৈধ বলে গণ্য হবে।
চাশতের নামাজের ফজিলত
চাশতের নামাজে সম্পর্কে উকবা ইবনু আমির(রঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ বলেছেন,
"হে আদম সন্তান তুমি তোমার দ্বীনের প্রথম ভাগে চার রাকাত সালাত আমাকে প্রদান করো, দিনের শেষ ভাগ পর্যন্ত তোমার জন্য আমি যথেষ্ট থাকবো (আমার কাছে তাই যথেষ্ট বলে বিবেচিত হবে)।" সহি হাদিস
অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
"আমি কি তোমাদেরকে এর চেয়েও নিকটবর্তী, বেশি সম্পদ লাভ ও দ্রুত প্রত্যাবর্তনের অভিযানে কথা বলবো না? যে ব্যক্তি অজু করল, এরপর দোহার সালাত আদায় করতে মসজিদে গেল, সে ব্যক্তির অভিযান অধিকতর নিকটবর্তী, লব্ধ সম্পদ বেশি এবং ফিরেও আসলো তাড়াতাড়ি।" হাদিসটি সহি
চাশতের নামাজের গুরুত্ব
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে এই নামাজের বিষয়ে এত বেশি হাদিস এসেছে যে অন্য কোন নফল নামাজ সম্পর্কে এত গুরুত্ব দেয়া হয়নি। যদি কোন মানুষ প্রতিদিন সকালে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে তাহলে তার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পক্ষ থেকে আল্লাহর প্রতি সদকা দেওয়া হয়ে যায়। আর এই দুই রাকাত নামাজ হচ্ছে চাশতের নামাজ। তাই এই নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম।
আবু হুরায়রা থেকে একটি হাদিসে বলা হয়েছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সালাতুত দোহা যে নিয়মিত আদায় করে সে আল্লাহর দিকে ধাবিত হয়। অর্থাৎ আল্লাহর দিকে ধাবমান বান্দা তারাই নিয়মিত সালাতুত দোহা নামাজ আদায় করে থাকে।
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে একটি হাদিসে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
"যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামাতে আদায় করে বসে বসে আল্লাহর জিকির করবে সূর্যোদয় পর্যন্ত, এরপর দুই রাকাত সালাত আদায় করবে, সে একটি হজ ও একটি ওমরার সোওয়াব অর্জন করবেঃ পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ, পরিপূর্ণ (হজ ও ওমরা)"
এই নামাজ আদায় সম্পর্কে একটি ব্যতিক্রমের কথা বলা হয়েছে, তা হল, এই নামাজ মসজিদে আদায় করা ভালো। তবে ঘরে আদায় করাও একই ফজিলতের।
পরিশেষে
আজকের এই পোস্টে চাশতের নামাজ বা সালাতুদ দোহা নামাজ পড়ার নিয়ম, চাশতের নামাজের সময় এবং আরবি নিয়ত সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এই চাশতের নামাজের ফজিলত সম্পর্কেও আলোচনা করেছি।
আশা করি পোস্ট টি পড়ে আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। ভালো লেগে থাকলে আপনার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজনের সাথে পোস্টটি শেয়ার করতে পারেন যাতে তারাও উপকৃত হতে পারে।
passiondrivefiona র নীতিমালা মেনে comment করুন। প্রতিটি comment রিভিউ করা হয়;
comment url