ইশরাক নামাজ পড়ার নিয়ম ও আরবি নিয়ত

ইশরাক নামাজ পড়ার নিয়ম ও আরবি নিয়ত সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করব। নফল নামাজের মধ্যে ইশরাক নামাজ অন্যতম। ইশরাকের নামাজ পড়ার মাধ্যমে অনেক পুণ্য বা নেকি লাভ করা যায়। সাথে জানবেন ইশরাক ও চাশতের নামাজের সময় সম্পর্কে।

ইশরাক-নামাজ-পড়ার-নিয়ম-ও-আরবি-নিয়ত

পোস্ট সূচিপত্রঃআমরা অনেকেই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য নফল এবাদত করতে খুব পছন্দ করি। এই নফল ইবাদতের মধ্যে ইশরাকের নামাজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতপূর্ণ। সাধারণত সূর্য উঠার পরপরই এ নামাজ আদায় করা হয়। ইশরাকের নামাজের মাধ্যমে গুনাহ মাফ ও নেকি লাভ করা যায়। 

ইশরাক নামাজ পড়ার নিয়ম ও আরবি নিয়ত

ইশরাক নামাজ পড়ার নিয়ম ও আরবি নিয়ত সম্পর্কে আর্টিকেলের শুরুতে আপনাদের জানাবো। ইশরাক নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম ও আরবি নিয়ত সম্পর্কে আপনি যদি জানতে চান, তাহলে আর্টিকেলের এই অংশটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

ইশরাক নামাজ পড়ার নিয়ম

ইশরাক নামাজের নির্দিষ্ট ভাবে বলা কোন রাকাত সংখ্যা নেই। তবে অন্যান্য নামাজের মত এই নামাজও দুই রাকাত করে আদায় করার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ ইশরাক এর নামাজ দুই রাকাত বা চার রাকাত আদায় করা হয়ে থাকে। অনেকে আবার দুই রাকাত করে ৮ থেকে ১২ রাকাত পর্যন্ত আদায় করেন।

তবে আমাদের নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশরাকের নামাজ দুই রাকাত করে চার রাকাত আদায় করতেন।

সাধারণত সূর্যদয় হওয়ার পর ১০ থেকে ১৫ থেকে মিনিট পর ইশরাক নামাজ আদায় করার কথা বলা হয়েছে।

আবার অনেক জায়গায় সূর্য উদয় হওয়ার ২০ মিনিট পর থেকে এই নামাজ আদায়ের কথা উল্লেখ রয়েছে।

ইশরাক নামাজের আরবি নিয়ত

এখন জানতে পারবেন, ইশরাক নামাজের আরবি নিয়ত সম্পর্কে। ইশরাকের নামাজ পড়ার জন্য অন্য সব নামাজের মতই নিয়ত করতে হবে। আপনাদের জানার সুবিধার্থে, ইশরাক নামাজের আরবি নিয়ত নিচে দেওয়া হলঃ

"নাওয়াইতুয়ান উসাললিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাকায়াতাই সালাতিল ইশরাকি সুন্নাতু রাসূলুল্লাহি তা'আলা মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা'বাতি শারাফাতি, আল্লাহু আকবর।"

অর্থাৎ ইশরাকের দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করার জন্য কিবলামুখী হয়ে নিয়ত করিলাম, আল্লাহু আকবর।

ইশরাক নামাজের জন্য মনে মনে নিয়ত করে আল্লাহু আকবর বলে ইশরাকের নামাজ পড়া শুরু করতে হবে।

ইশরাক নামাজ কি

ইশরাক শব্দটি একটি আরবি ভাষার শব্দ যার অর্থ আলোকিত হওয়া। অর্থাৎ সূর্যোদয়ের পর পর যে নফল নামাজ আদায় করা হয় সেটাই ইশরাকের নামাজ।

আরো পড়ুনঃ নামাজ ভঙ্গের কারণ ১৯ টি, কোন কোন কারণ জেনে নিন

সাধারণত সকালে সূর্য উদয়ের পর পৃথিবী আলোকিত হওয়ার পর যে নফল নামাজ আদায়ের কথা উল্লেখ রয়েছে সেটাই ইসরাকের নামাজ বা সালাতুল ইশরাক এর নামাজ।

ইশরাক নামাজ সম্পর্কে এতটাই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে, এই নামাজকে এক হজ এবং এক ওমরা পালনের সোওয়াব পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। নিয়মিত এই নামাজ পড়লে ব্যক্তির গুনাহ সমূহ মাপ হয় এবং নেকীর পাল্লা ভারী হয়।

ইশরাক ও চাশতের নামাজের সময়

ইশরাক নামাজ পড়ার নিয়ম ও আরবি নিয়ত আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করছি। আর্টিকেলে এই অংশে জানতে পারবেন, ইশরাক ও চাশতের নামাজের সময় সম্পর্কে। কারণ আপনারা অনেকেই ইশরাক ও চাশতের নামাজের সঠিক সময় সম্পর্কে জানতে চান। কারণ সঠিক সময়ে শুদ্ধভাবে নামাজ আদায়ের ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

ইশরাক এর নামাজ সাধারণত খুব সকালের দিকে আদায় করা হয়। অর্থাৎ সূর্য ওঠার ২০ থেকে ২২ মিনিট পর থেকে ইশরাক এর নামাজের সময় শুরু হয়ে দেড় থেকে দুই ঘন্টা পর্যন্ত থাকে। এই সময়ের মধ্যে ইসরাকের নামাজ আদায় করা উত্তম।

ইশরাকের নামাজের সময় শেষ হওয়ার পর শুরু হয় চাশতের নামাজের সময়। অর্থাৎ চাশতের নামাজ সাধারণত সূর্যোদয়ের দেড় থেকে দুই ঘন্টা পর শুরু হয়ে যোহরের নামাজের আগ পর্যন্ত সময়ে যে কোনো সময় আদায় করা যায়। আরো ভালোভাবে বলতে গেলে, সূর্য মধ্য গগনে যাওয়ার আগ পর্যন্ত চাস্তের নামাজের সময় থাকে।

এই সময়ের মধ্যে আপনার সুবিধা মত সময়ে চাশতের নামাজ আদায় করা যায়।

চাশতের ও ইশরাকের নামাজ কি একই

চাশতের এবং ইশরাকের নামাজ একই কিনা সে সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানতে চান। কারণ চাশতের নামাজ ও ইশরাকের নামাজের সময় আলাদা হলেও, অনেক জায়গায় চাশত ও ইশরাকের নামাজ একই নামাজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

সাধারণত ইশরাকের নামাজ সূর্যোদয়ের পরপর আদায় করা হয়ে থাকে। এ কারণে আমাদের দেশে এই নামাজকে ইশরাকের সালাত বা সূর্যোদয়ের সালাত নামে বেশি পরিচিত। অর্থাৎ অনেকে সূর্যোদয়ের পরের সালাতকে ইশরাকের নামাজ এবং ইশরাকে্র নামাজের পরবর্তী সময়ে আদায় করা নামাজকে সালাতুদ্দোহা বা চাশতের সালাত বলে থাকেন।

আরো পড়ুনঃ বিয়ের জন্য ইস্তেখারা নামাজ পড়ার নিয়ম - ইস্তেখারা নামাজ কখন পড়তে হয়

তবে হাদীস শরীফে চাশত শব্দটির পরিবর্তে সালাতুদ দোহা শব্দটি বেশি ব্যবহার করা হয়েছে। আবার অন্য এক হাদিসে ইশরাক ও দোহার মধ্যে কোন পার্থক্য করা হয়নি। অর্থাৎ চাশতের নামাজ এবং ইশরাকের নামাজ একই বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, ইশরাক ও চাশতের নামাজের মধ্যে মূলতঃ সময়ের পার্থক্য।

তবে বেশিরভাগ হাদিস শরীফে ইশরাকের নামাজ ও চাচ্চে নামাজের আলাদা সময় বর্ণিত হয়েছে এবং আলাদাভাবে আদায় করার কথা বলা হয়েছে।

ইশরাকের নামাজ সুন্নত না নফল

ইসরাকের নামাজ সুন্নত না নফল সে সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানতে চান। ইশরাকের নামাজ নফল নামাজ হিসেবে আদায় করা হয়ে থাকে। এই নামাজের আদায় করার ব্যাপারে আমাদের নবীজি (সাঃ) গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজর নামাজের পর প্রায়ই মসজিদে অবস্থান করে তাসবীহ পাঠ সহ সাহাবীদের সাথে হাদীসের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতেন। এরপর তিনি ইশরাকের দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করতেন।

ইশরাকের নামাজ কোন সুরা দিয়ে পড়তে হয়

ইসরাত নামাজ পড়ার নিয়ম ও আরবি নিয়ত সম্পর্কে জানার সাথে সাথে অনেকের জানার আগ্রহ রয়েছে, ইসরাকের নামাজ কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয় সে সম্পর্কে। ইসরাকের নামাজ আদায় করার জন্য অন্য সব নামাজের মতোই সুরা দিয়ে আদায় করতে হবে।

অর্থাৎ ইস্টাকে নামাজ পড়ার জন্য আলাদা কোন নির্দিষ্ট সূরা পড়তে হবে না। অন্য সব নামাজের মতই যে কোন সূরা দিয়ে ইশরাকের নামাজ আদায় করা যাবে।

ইশরাক নামাজের সময় কতক্ষণ থাকে

ইশরাকের নামাজের সময় কতক্ষণ থাকে এই সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানতে চান। ইশরাকের নামাজ সূর্য উদয় হওয়ার পর ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর থেকে আদায় করার কথা বলা হয়েছে। এই ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর থেকে পরবর্তী দেড় থেকে দুই ঘন্টা সময় ইশরাকের নামাজের সময় হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।

আরো পড়ুনঃ আরবি মাসের ক্যালেন্ডার ২০২৪

এরপর শুরু হয় চাশতের বা সালা্তুদ দোহা নামাজের সময়। অর্থাৎ ইশরাকের নামাজের সময় সূর্য উঠার ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর থেকে দুই ঘন্টা পর্যন্ত বলবত থাকে। অন্যভাবে বলা যায়, সূর্যের কিরণ এক বর্শা পরিমাণ মধ্য আকাশে যাওয়া পর্যন্ত এই নামাজের সময় থাকে। অর্থাৎ সূর্যের আলো দেড় মিটার হওয়া পর্যন্ত।

ইশরাক-নামাজ-পড়ার-নিয়ম-ও-আরবি-নিয়ত

ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত

ইসরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত সম্পর্কে এখন আপনাদের জানাবো। নফল নামাজের মধ্যে ইসরাকের নামাজ অন্যতম। ইশরাকের নামাজ পড়ার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গুরুত্ব দিয়েছেন।

ইসরাকের নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি ইশরাকের নামাজ আদায় করবে তার এক হজ ও ওমরা পালনের সোওয়াব পাবে।

রাসূলুল্লাহ ( সাঃ) বলেন, "যে ব্যক্তি ফজর নামাজ মসজিদে জামাতে আদায় করার পর সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত সেখানে বসে থেকে আল্লাহতালার নামে জিকির করে, তারপর সে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে, সে যেন এক হজ ও ওমরা পালনের সওয়াব লাভ করল।" হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিস। ( তিরমিজি ও মিশকাত)

আরো পড়ুনঃ রবিউল আউয়াল মাসের ক্যালেন্ডার - ১২ই রবিউল আওয়াল কত তারিখ ২০২৪

এক হজ ও ওমরা পালনের সমান সওয়াব পাওয়ার জন্য প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের জন্য ইশরাকের নামাজ আদায় করা উচিত। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ইশরাকের নামাজ পড়ার তৌফিক দান করুন, আমীন।

ইশরাক নামাজ পড়ার নিয়ম ও আরবি নিয়ত সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্নঃ ইশরাক ও চাশতের নামাজ একসাথে পড়া যাবে কি?

উত্তরঃ ইশরাক ও চাশতের নামাজ আলাদা আলাদা সময়ের ওয়াক্ত অনুযায়ী আদায় করতে পারেন। আবার অন্য এক জায়গায় বলা হয়েছে, ইশরাকের নামাজ আদায় করার পর চাশতের নামাজ আদায় না করলেও হবে।

প্রশ্নঃ ইশরাক কি সুন্নাত নাকি নফল নামাজ?

উত্তরঃ ইশরাক নফল নামাজ গুলোর মধ্যে অন্যতম। অর্থাৎ ইশরাক নফল নামাজ হিসেবে সূর্য ওঠার ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর আদায় করা হয়ে থাকে।

প্রশ্নঃ ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম কি?

উত্তরঃ ইশরাকের নামাজ ফজরের নামাজের পর সূর্য উদয় হওয়ার ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর আদায় করা হয়ে থাকে। এই নামাজ দুই রাকাত করে চার রাকাত, অনেকে ৮ রাকাত থেকে ১২ রাকাত পর্যন্ত আদায় করে থাকেন। তবে দুই দুই রাকাত করে এই নামাজ আদায় করতে হবে।

প্রশ্নঃ ঘুম থেকে উঠে ইশরাকের নামাজ পড়া যাবে কি?

উত্তরঃ ব্যক্তির জন্য বাধ্যতামূলক বা ফরজ নামাজ ফজরের সালাত আদায় করার পর বসে থেকে সূর্য উঠার ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ইশরাকের নামাজ আদায় করতে হবে।

প্রশ্নঃ ইশরাকে্র নামাজের ফজিলত কি?

উত্তরঃ ইশরাকের নামাজ নফল নামাজের মধ্যে অন্যতম। ইশরাকের নামাজ অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি নামাজ। এই নামাজের মাধ্যমে সাগরের ফেনা মত ছোট ছোট গুনাহ আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দেন এবং কোন ব্যক্তি যদি হজ ও ওমরা না করতে পারেন, সে ব্যক্তি সালাতুল ইশরাক নামাজ আদায়ের মাধ্যমে সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করতে পারে।

লেখকের শেষ কথা

আজকের আর্টিকেলে, ইশরাক নামাজ পড়ার নিয়ম ও আরবি নিয়ত সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আপনারা যারা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের জন্য ইশরাক নামাজ পড়ার নিয়ম ও আরবি নিয়ত সম্পর্কে জানতে চান আজকের আর্টিকেল থেকে জানতে পারবেন।

এছাড়া চাশত ও ইশরাক নামাজের সময় সম্পর্কেও এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে। আপনারা যারা ইসরাকের নামাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তারা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জানতে পারবেন আশা করি। আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে আপনার পরিচিত আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে শেয়ার করলে তারা উপকৃত হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

passiondrivefiona র নীতিমালা মেনে comment করুন। প্রতিটি comment রিভিউ করা হয়;

comment url